কেশবপুরে এমওপি-টিএসপি সার বেশি দামে বিক্রি

0
250

কেশবপুর (যশোর) সংবাদদাতা

কেশবপুর উপজেলায় সার ডিলারদের সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা ইরি-বোরো ধান চাষের আবাদ নিয়ে সংকিত রয়েছে। এ মৌসুমে এমওপি (পটাশ) ও টিএসপি (ফসফেট) সার বেশি দামে বিক্রি করছে বিসিআইসির সার ডিলাররা বলে অভিযোগ উঠেছে। বোরো মৌসুম শুরুর মুহূর্তে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

অনেক কৃষক চড়া দামে পটাশ ও ফসফেট সার কিনতে না পেরে বোরো ক্ষেতে শুধু ডিএপি (ড্যাব) সার প্রয়োগ করছেন। কৃষি বিভাগ চড়া দামে সার বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেছে। ৫০ কেজির ফসফেট প্রতি বস্তা সরকারী মূল্য ১১০০ টাকা ও খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ২২টাকা। পটাশ প্রতি বস্তা সরকারী মূল্য ৭৫০টাকা ও খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৫। সেখানে ডিলার ও সাব ডিলাররা পটাশ বিক্রি করছে প্রতি কেজি ২২ থেকে ২৫টাকা দরে ও ফসফেট প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে। এ কারণে কৃষকরা ইরি-বোরো আবাদ নিয়ে সংকোচিত রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এ বছর ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৪শত হেক্টর জমি। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৩ হাজার ৮শত ৩০ হেক্টর জমি।

বোরো মৌসুমের শুরুতেই ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে পটাশ ও ফসফেট সারের সংকট চলছে এ উপজেলায়। সার সংকটকে পুঁজি করে এক শ্রেণির খুচরা সার ডিলার ৭৫০ টাকা বস্তা পটাশ সার ১১শ’ থেকে ১২শ’ ৫০ টাকায় বিক্রি করছে। ফসফেট প্রতিবস্তা সরকারী মূল্য ১১০০ টাকা সেখানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ১৭শ’ ৫০ দরে। উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে পটাশ ও ফসফেট সার সংকট বেশি। কৃষি অফিস আরো জানায়, কেশবপুর পৌসভাসহ উপজেলায় ১৩ জন সরকারী ডিলার রয়েছে।

সাব ডিলার রয়েছে ১১ ইউনিয়নে (পৌরসভাসহ) ১০৮ জন। এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরকার ডিলারদের মধ্যে সার বরাদ্ধ দিয়েছেন জানুয়ারীতে ৩৩০ মেট্রিক টন ও ফেব্রুয়ারীতে ১২৫ মেট্রিকটন। বরাদ্ধ কম থাকায় এ মাসে সারের দাম একটু বেশি। সারের দাম বেশি নেয়ার কথা জানতে চাইলে নাম না প্রকাশ করার সর্তে জনৈক ডিলার বলেন, এ মাসে আমি বরাদ্ধ পেয়েছি ১২ বস্তা।

আমরা ক্রয় করছি নওয়াপাড়া থেকে পটাশ ৯৫০ টাকা দরে আর বিক্রি করছি ১১০০ টাকা দরে। বরাদ্দ কম থাকায় চাহিদা একটু বেশি। আমার ঘরে কয়েকশ বস্তা ইউরিয়া মজুত রয়েছে। কিন্তু সাব ডিলাররা তাদের প্রাপ্য সার নিচ্চে না। তাহলে আমরা এ সার কি করবো এবং আর কোথায় বিক্রয় করবো?

ভালুকঘর বাজারের ডিলার আব্দুর সাত্তার জানান, সবধরণের সার আমার কাছে মজুত আছে। কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে। সাগরাদাঁড়ি গ্রামের কৃষক আফসার আলী জানান, বোরো ক্ষেত তৈরির আগে ফসফেট ৩৫ টাকা ও পটাশ ২২টাকা দরে কিনেছি এক সাব ডিলারদের কাছ থেকে। কৃষক রুস্তম আলি বলেন, সরকারী দরে সার চাইলে ডিলাররা জানায়, বাজারে সার সংকটের কারণে বাইরে থেকে এনে চড়া দামে বিক্রয় করতে হচ্ছে।

এমনকি ডিলাররা বলে, আমার কাছে পটাশ বা ফসফেট সার নাই। ভরতভায়না গ্রামের ফারুক বলেন, সার ডিলারের দোকানে গিয়েছিলাম। প্রথমে বলেছে ফসফেট ও পটাশ সার নাই। পরে বলেছে দাম একটু বেশি। বস্তাপ্রতি ৩৫০ টাকা থেকে ৫৫০টাকা বেশি। একারণে বেশি টাকা দিয়ে আমি সার কিনিনি। শুধু কালো সার (ডিএপি) দিয়ে বোরো রোপণ করছি। কেশবপুরে অনেক ডিলার সার বিক্রিয় করছে কিন্তু সার বিক্রয়ের কোন অনুমোদন তাঁদের কাছে নাই বলে জানান। জনৈক ডিলার বলেন, ‘লাল’ (পটাশ) সার বাজারে নাই তাই দাম বেশি নিয়েছে। সার কেনার পর দোকান থেকে কোনো ভাউচার দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দোকানদার (খুচরা সার ডিলার) কোনো ভাউচার দেন না।’

কাগজপত্র বিহিন অন্য এক সাবডিলার জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাইরে থেকে চড়া দামে সার ক্রয় করে আনার কারণে বেশি দামে বিক্রয় করতে হয়। এ ছাড়া তিনি বলেন, এক মাস যাবৎ পটাশ ও ফসফেট সারের সংকট চলছে তাই দাম বেশি। অন্য এক ডিলার বলেন, আমরা বিসিআইসির সার ডিলারের কাছে সার চাইলে আজ নয় কাল করে সময় পার করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার চড়া দামে সার বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কৃষকরা সচেতন হলে ডিলাররা কোন ভাবে চড়া দামে সার বিক্রয় করতে পারবে না।

তিনি আরো বলেন, কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যপ্ত পরিমাণে সার মজুত আছে। তবে ডিলারদের বেশি দামে সার বিক্রয় করার কোন প্রমান পেলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Comment using Facebook