মোংলা সাবরেজিস্ট্রার অফিসের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

0
134


এইচ এম দুলাল, মোংলা (বাগেরহাট)
সরকার নির্ধারিত নতুন অফিস সময়সূচী অনুযায়ী অফিস করছেন না উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস টাইম হলেও এ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা কোনভাবেই যেন মানছেন না। সরেজমিনে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, পৌনে ৯টা পর্যন্ত সাবরেজিস্ট্রারের কক্ষে (খাসকামরা) তালা ঝুলছে। তালা ঝুলানো এজলাস কক্ষেও। এজলাস কক্ষের অফিস সহায়ক দিলীপ কুমার পাল অফিসে আসেন ৮টা ৩৪ মিনিটে। তিনি বলেন, পথে দেরি হয়েছে আসতে। তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত আমি ছাড়া সাবরেজিস্ট্রার স্যারসহ অন্যান্যদের কেউই তো আসেনি। এরপর ৮ টা ৪১ মিনিটে এজলাস কক্ষে প্রবেশ করেন অফিস সহকারী নাজমুন নাহার। তিনিও বলেন, পথে দেরি হওয়ায় অফিসে ঢুকতে দেরি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত আমি আর অফিস সহায়ক আমরা দুইজনই এসেছি। আমাদের এ কক্ষের অপর দুই মোহরার ও আরেক একজন টিসি মোহরার তারাও আসেননি এখনও, সাবরেজিস্ট্রার স্যারও দেখছি আসেননি। তারপর পৌনে ৯টার পরপরই অফিসে আসেন সাবরেজিস্ট্রার মোঃ জুবায়ের হোসেন। উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার দপ্তরের ভুক্তভোগী দলিল দাতা-গ্রহীতাসহ হয়রানীর শিকার সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যের প্রেক্ষিতে জানা গেছে, সাবরেজিস্ট্রার মোঃ জুবায়ের হোসেন নিয়ম না মেনে অফিসে যাওয়া-আসা করে থাকেন তার ইচ্ছা মতই। তাই অন্যান্য ষ্টাফরাও আসেন তাদের খেয়াল খুশি মত। অভিযোগ উঠেছে সাবরেজিস্ট্রার কখনও কখনও অফিসে আসেন ৯টা, ১১ ও ১২টায়ও। এছাড়া সপ্তাহে ৫দিন অফিস করার নিয়ম থাকলেও সাবরেজিস্ট্রার অফিস করে থাকেন তিন দিন। তবে তিনি কৌশলে হাজিরা দেখিয়ে থাকেন ৫ দিনেরই। তারপরও যে সময়টুকু অফিস করেন তিনি সেই সময়েও সেবা নিতে আসা লোকজনদের বসিয়ে রেখে হঠাৎ বাহিরে চলে যান। অফিস টাইমে তার দপ্তরে আসা দলিল দাতা ও গ্রহীতাদের কাজ না করে বসিয়ে রেখে চলে যান বরশি বেতে (মাছ ধরতে)। এছাড়া গ্রাহকদের নানা অজুহাতে ঘুরিয়ে হয়রানীর অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এনিয়ে কোন গ্রাহক কথা বললে তাকে পুলিশে দেয়ার ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছেন তিনি। সেই সাথে সেবাগ্রহীতারদের সাথে তার রয়েছে তার চরম দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। এছাড়া সম্প্রতি একটি কোম্পানীর অনুকুলে একটি জাল দলিল রেজিষ্ট্রি করে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়েন তিনি। যা নিয়ে আদালতে মামলাও হয়। এরপরও তিনি কৌশলে সেই কোম্পানীকেই ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে কয়েকটি দলিল রেজিষ্ট্রি দিয়ে নতুন করে আবারো আলোচনায় এসেছেন। সেই কোম্পানীর অনুকূলেই ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে গত ৮ সেপ্টেম্বর একটি দলিল রেজিষ্ট্রি দেন তিনি। এছাড়াও তিনি কমিশন দলিল রেজিষ্ট্রি করছেন অহরহ। যা নিয়ে স্থানীয়ভাবে নানা গুঞ্জনও রয়েছে। খাসকামরা, এজলাস ও কমিশন দলিল রেজিষ্ট্রির ভিন্ন ভিন্ন ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে তাকে ঘিরে। অন্যদিকে ব্যক্তিমালিকানা জমির সাথে পার্শ্ববর্তী সরকারী রেকর্ডীয় খালেরও দলিল রেজিষ্ট্রি করার মত অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তার এ সকল কর্মকা-ের দায়ভার দলিল লেখক ও নকল নবিশদের উপর চাপিয়ে দিয়ে হয়রানী মূলক শোকজ করে আসছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া দলিল রেজিষ্ট্রির রাজস্বের হিসাব নিকাশ জটিলতাসহ অন্যান্য কারণে তাকে গত সপ্তাহে শোকজও করছেন জেলা সাবরেজিস্টার। সরকারের নিয়ম মেনে সময় মত অফিসে না আসার বিষয়ে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার মোঃ জুবায়ের হোসেন বলেন, আমি অসুস্থ তাই দেরি হয়। তিনি নিয়ম অনুযায়ী অফিস করে থাকেন বলেও দাবী করেন। আর তাকে শোকজসহ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগের বিষয়গুলো অস্বীকার করে বলেন, ওসব মিথ্যা।

Comment using Facebook