মোরেলগঞ্জে উপবৃত্তির টাকা বঞ্চিত ১৫ হাজারের বেশি প্রাথমিকের শিক্ষার্থী!

0
164


হাসানুজ্জামান বাবু, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের বকুল বেগমের মেয়ে ইভা আক্তার চাঁদনি, ১৭২ নং মোরেলগঞ্জ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী চাঁদনি, গত দুই দিন আগে বকুল বেগমের কাছে তার মেয়ে উপবৃত্তির টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি তার ভাষায় বলেন, স্যার মোর মাইয়াডারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপবৃত্তি দেতে, এই ৬-৭ মাস মোর মাইয়া উপবৃত্তির টাহা পায় না, মুই মান্নের বাসায় কাম করি, ওর বাপে আরেকটা বিয়া করছে, কেমনে মাইডারে স্কুলড্রেস, কলম, খাতা কিননা দিমু, মোবাইলে টাহার ম্যাসেস দেহি না, স্কুলের হেড মাস্টারের ধারে জিগাইলে কয় অফিসে কি বোলে সমস্যা হইছে, টাহা পাইতে দেরি হইবে’। এভাবে কস্টের কথাগুলো বলছিলেন গৃহকর্মী আয়েশা খাতুন, এদিকে বারইখালী একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর দিন মজুর পিতা বলেন তার ভাষায় মোর পোলা ফ্রি প্রাইমারিতে পড়ে, প্রধানমন্ত্রী মাসে মাসে মোবাইলে টাহা দেতে, হেইয়া দিয়া মোর পোলার কলম, খাতা, কিননা দেতাম এহন কম্পিউটারে কি যেন সমস্যা হইছে মোবাইল লইয়া দোহানে গেলে কয় টাহা উডান যাইবে না, এভাবে মনের কস্টে কথাগুলো বলছিলেন একজন শিক্ষার্থী আলিমের অসহায় দিনমজুর বাবা, বাগেরহাটের জেলার একটি উপজেলা মোরেলগঞ্জ এই উপজেলায় দীর্ঘ ৬ মাস ধরে সার্ভার জটিলতায় আটকে আছে উপবৃত্তি কার্যক্রম, এতে সাধারণ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মধ্যে নানান কারনে ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে, তারা বলছেন আগে যে পদ্ধতিতে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতাম সেই পদ্ধতি ভালো ছিল, এছাড়া শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রেও জন্মসনদ বাধ্যতামূলক থাকায় সেখানেও অভিভাবকদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে হলে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক ছিল। সম্মতি সরকার জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া কিছুটা শিথিল করেছে, এতে অভিভাবকদের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। মোরেলগঞ্জ শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ২০২০ সালের উপবৃত্তির কার্যক্রম রুপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশ থেকে ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন ‘নগদ’-এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়। শিওর ক্যাশ পোর্টালে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক ছিল না। কিন্তু নগদ পোর্টালে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তাও আবার অনলাইন নিবন্ধন। মোরেলগঞ্জে ৩০৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৩৪ হাজার ৩৫৯ জন, তার মধ্যে উপবৃত্তি প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ২১ হাজার ৯২৬ জন, এই ২১ হাজার ৯২৬ জন শিক্ষার্থীর অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা সার্ভার জটিলতার কারনে আটকে আছে, ১৭২ নং আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাদিরা আক্তার জানান তার স্কুলে উপবৃত্তি সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪১ জন, এই ১৪১ জন শিক্ষার্থীই গত জুলাই-ডিসেম্বর ৬ মাস পর্যন্ত উপবৃত্তির টাকা পাননি, তাদের পিতা-মাতা প্রায়শই স্কুলে এসে উপবৃত্তির টাকার ব্যাপারে জানতে চায়। এদিকে বারইখালী ১১১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক জানান তার স্কুলে উপবৃত্তি প্রাপ্তির সংখ্যা ১০২ জন তার মধ্যে টাকা পেয়েছেন ৬৪ জন, বাকি ১০২ জন শিক্ষার্থী এখনো ৬ মাসের উপবৃত্তির টাকা পান নি।সরকারের ঘোষণানুযায়ী শতভাগ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রকল্পের আওতায় আনার কথা থাকলে জন্মনিবন্ধন ও অনন্য তথ্যাদির কারনে সার্ভারে তথ্য আপলোড করা সম্ভব হয় নি, মোরেলগঞ্জে ৩৪ হাজার ৩৫৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ হাজার ৩০০ জন এখনো তাদের তথ্যগুলো জমা দিতে না পারায় তাদের উপবৃত্তি প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না, এদিকে ৬ মাস ধরে উপবৃত্তির টাকা না পাওয়ায় অনেকটা হতাশ অভিভাবকবৃন্দ। এদিকে নতুন করে সুবিধাভোগীদের তালিকায় নাম নিবন্ধনেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। সার্ভার জটিলতায় স্কুলপর্যায়ে থেকে উপবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীদের নাম নিবন্ধনেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জালাল উদ্দিন খানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সার্ভার জটিলতায় উপবৃত্তির টাকা পেতে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, গত বছরের শেষের দিক থেকে প্রায় ৬ মাস অনেক শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির এ অর্থ পাননি, আবার এদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক টাকা পেয়েছেন কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষককে টাকা গ্রহনের বিষয় জানান,নি এছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং সার্ভারে সমস্যা, মফস্বল এলাকায় ইন্টারনেটের ধীরগতি, মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল, জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকা এবং প্রদত্ত ঠিকানায় গিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের খুঁজে না পাওয়ার কারণে ডাটা এন্ট্রির কাজে জটিলতা দেখা দিয়েছে, এসব কারনে শিক্ষার্থীদের নাম এখনো সার্ভারে যুক্ত করা যায়নি। আমরা এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি, আশা করছি খুব শীগ্রই এ সমস্যার সমাধান হবে।

Comment using Facebook