যশোরের শার্শা এখন সোনা পাচারের নতুন রুট!

0
92


সাকিরুল কবীর রিটন, যশোর
যশোরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সোনা পাচার হয় ভারতে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সব থেকে বেশি সোনা পাচার হতো বেনাপোল দিয়ে। কিন্তু দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বর্তমানে সোনা পাচারের জন্য আলোচিত নতুন রুটের নাম শার্শা। শার্শা সীমান্তের গোগা, ভূলোট, অগ্রভূলট, পাঁচভূলট, রুদ্রপুর, হরিশচন্দ্রপুর, কায়বা, চরপাড়া ও দাঁদখালীসহ অন্ততঃ ১০টি অবৈধ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা পাচার হচ্ছে। যাদের মাধ্যমে সোনা ঢাকা থেকে শার্শার এসব সীমান্তে আনা হয় এবং ভারতে পাচার করা হয় তাদের কেউ কেউ মাঝে-মধ্যে সোনার চালানসহ ধরাও পড়ে। কিন্তু মূল মালিকরা থেকে যায় পর্দার আড়ালে। দুইজন জনপ্রতিনিধি এই ঘাটগুলোর অঘোষিত মালিক বলে সীমান্তবাসী জানান। সীমান্তের সূত্রগুলো জানায়, শার্শা সীমান্তের গোগা, ভূলোট, অগ্রভূলট, পাঁচভূলট, রুদ্রপুর, হরিশচন্দ্রপুর, কায়বা, চরপাড়া ও দাঁদখালীসহ অন্ততঃ ১০টি অবৈধ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা ও ডলার ভারতে পাচার করা হচ্ছে। বেনাপোলের যে সব সিন্ডিকেটগুলো ইতিপূর্বে সক্রিয় ছিল তারা সবাই এখন ঝুঁকেছে শার্শা সীমান্তের অবৈধ ঘাটের দিকে। একজন সাবেক এবং একজন বর্তমান জনপ্রতিনিধি এই ঘাটগুলোর অঘোষিত মালিক বলে সীমান্তবাসী জানান। তারা নেপথ্যে থেকে তাদের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সোনাপাচার সিন্ডিকেড পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিদিন এতো সোনা পাচার হয় এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অভিযানে মাঝে-মধ্যে কিছু জব্দও হয়। বিভিন্ন সময়ে সোনাসহ কেউ কেউ আটক হয়। কিন্তু সোনার প্রকৃত মালিকরা থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে। আর তারা ধরাও পড়ে না। সোনাসহ আটক হয় পাচারকারীদের লেবার বা চেলা-চামু-া। সোনা পাচারে বর্তমানে সবার উপরে রয়েছে শার্শা থানা এলাকার সীমান্তের অবৈধ ঘাটগুলি। এই ঘাটগুলি দিয়ে সোনা পাচারের মূল হোতা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দেব কুমার এবং তার পার্টনার যশোরের অসীম, পুটখালীর আলমগীর, জিয়া, ঘ্যানা, হাবিবুর, কিলার বাদশা, শাহজাহান, রেজা-জিয়া, কামালসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন পাচার হয় অধিকাংশ সোনা। সীমান্তবাসীর প্রশ্ন হচ্ছে এরাই কি সোনার মূল মালিক? সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, যারা ধরা পড়ে তারা ক্যারিয়ার। গড ফাদাররা থাকে আরও উপরে। আর সোনার মূল মালিক কারা তার শেকড়ের সন্ধান মেলেনি আজও। সীমান্তের সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযান চললেও সোনা পাচারের এসব সিন্ডিকেটের অঘোষিত মালিকরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে যশোর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানীদের ঢাকার গডফাদার আওয়ালদের প্রায় ১০ কেজি সোনার একটি চালান ‘অসম্ভবকে সম্ভব করে’ যশোর ডিবি পুলিশ আটক করে। এই সোনার যোগানদাতা আওলাদ। তার বাড়ির এলাকার লোক দিয়ে এই সোনা ভারতে পাচার করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। যার সব কিছুই পুলিশ জানে এবং নতুন করে জেনেছে। কিন্তু সোনা পাচারের মাফিয়া ডন আওলাদকে অদৃশ্য কারণে এখনও আটক না করায় আওলাদের ক্ষমতার পরিধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর পর গত দেব কুমার এবং যশোরের অসীম সিন্ডিকেটের দুটি সোনার চালান আটক করেছে বিজিবি। যার মধ্যে একটি চালানে ১০ পিস সোনাসহ একজন ক্যারিংম্যান আটক হয়। এই সোনার বার গুলি ঢাকা থেকে আসে ইমরাণ-আরিফ সিন্ডিকেটের কাছে থেকে। একই সিন্ডিকেটের অন্য চালানটিতে ছিল ৩০ পিস সোনার বার। দেব কুমার এবং যশোরের হাসপাতালের সামনের জনৈক অসীম সিন্ডিকেটের দ্বিতীয় চালানটি পাঠায় আওলাদ। এছাড়া, ঢাকার ইমরাণ, আরিফ, খোকা, খবির, রাম গং-প্রতিদিন পাঠাচ্ছে কাড়ি কাড়ি সোনা। সূত্র জানায়, এক গাড়ি ১২০০ গ্রাম সোনা আওলাদ, ইমরাণ, আরিফ, খোকা, খবির, রাম গং-এর কাছ থেকে আনতে জমা দিতে হয় নির্ধ্বারিত অর্থ। যার বিনিময়ে এক গাড়ি অর্থাৎ এক কেজি ২০০ গ্রাম সোনা নিয়ে আসে ক্যারিয়ররা। একগাড়ি সোনার বর্তমান মূল্য ৭০ লাখ টাকা। রাস্তার খরচসহ সব মিলিয়ে সীমান্ত পার হয়ে ভারতের বস্ গৌতমের সিন্ডিকেটে পৌছাতে খরচ পড়ে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। বিশ^স্ত হলে বিনা পুজিতেও মাল দেয় আওলাদ। এই সোনার বার গুলি পাচার করা হচ্ছিল আলোচিত সোনা পাচারকারী অপু সাহার ডেরায়। এসব সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন পাচার করা সোনা যায় ছোট গৌতম, বিদ্যুৎ, উত্তম, ভোলানাথ, সুকো এবং সত্য ওরফে ছোট্টু, দীপাঙ্কর, রাজীব, অজয়, পিন্টু, বরুণ, অনূপ, ডাকুসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটে। সোনা পাচারের গডফাদাররা কেন ধরা পড়ে না এমন প্রশ্নের জবাবে খুলনা ব্যাটালিয়ান (২১ বিজিবি)-র সিও লে.কর্নেল তানভীর রহমান (পিএসসি, ইঞ্জিনিয়ার্স) জানান, ‘বর্ডার ম্যানেজমেন্টে যদি ইন্টা কানেকটিভিটি থাকে, যদি যার যার মত ইনফরমেসনটা শেয়ারিং করতে পারি তাহলে হয়তো পাচার কমানো যেতে পারে। কারণ কি? চোরের চুরি আপনি থামাতে পারবেন না। যার যেটা অভ্যাস সেটা সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ, অভ্যাস অসৎ এসব মানুষকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। সীমান্ত এলাকার মানুষকে সচেতন করতে পারলেই এই দুষ্ঠ লোকগুলোকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হবে বলে আমার বিশ^াস।’

Comment using Facebook