ভাড়া নৈরাজ্য : গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা জরুরি

0
114


অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের মানুষ হাঁসফাঁস করছে। এ অবস্থায় জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে গণপরিবহন সেক্টরে চলছে ভয়াবহ নৈরাজ্য। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের। সম্প্রতি বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, শুধু রাজধানীতেই যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৮২ কোটি টাকারও বেশি অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া না দিলে যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কোনো কোনো পরিবহন শ্রমিক নিজেদের ‘প্রভাবশালী’ বলে পরিচয় দিয়ে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে। কোনো যাত্রী বাড়তি ভাড়া দিতে দেরি করলে নানারকম হুমকি প্রদর্শন করা হচ্ছে; এমনকি যাত্রীদের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করছে না কোনো কোনো পরিবহন শ্রমিক। জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অতীতেও পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এবারের নৈরাজ্য যেন সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো, এসব যাদের দেখার কথা, তারা কী করছেন? যেহেতু পরিবহন শ্রমিকরা বেপরোয়া আচরণ করছে, সেহেতু এ ক্ষেত্রে লোকদেখানো অভিযানে কোনো ফল মিলবে না। মালিক সমিতি ওয়েবিল প্রথা বন্ধের ঘোষণা দিলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। কোনো যাত্রী দুই কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করলে ওয়েবিলের নাম করে তার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে অন্তত ২০ টাকা; কোনো কোনো পরিবহনে এ ভাড়ার পরিমাণ আরও বেশি। সিট হিসাব করে বাড়তি ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও প্রায় সব বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। এদিকে নতুন ভাড়া নির্ধারণের পর গ্যাসচালিত অনেক গাড়ি তেলের গাড়ির মতোই বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। যাত্রীদের জিজ্ঞাসা-সড়কে প্রকাশ্যে এমন ‘ভাড়া সন্ত্রাস’ চললেও এর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন? পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ-মালিকের দৈনিক জমা, জ¦ালানির উচ্চমূল্য, সড়কের চাঁদাবাজি-এসব কারণে তারা বাড়তি ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া আদায় ও নৈরাজ্য রোধে নগদ লেনদেনের পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভাড়া প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অভিজ্ঞ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখে ভাড়া নির্ধারণ করে তা কার্যকর করা দরকার। বস্তুত পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য দূর না হওয়ার প্রধান কারণ কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাব। জনগণের ওপর মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন চাপ অব্যাহত থাকলে অনেকের সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়। কাজেই এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Comment using Facebook