দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে থাকায় চালের বাজারের অস্থিরতা কমছে না। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সম্প্রতি জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর চালের দাম আরও লাগামহীন হয়ে পড়েছে। লক্ষ করা যাচ্ছে, চালের দাম কমাতে সরকারের সব উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। স্বল্পমূল্যে ওএমএস চালু এবং আমদানি শুল্ক কমানোর পরও মিলারদের কারসাজিতে ফের চালের দাম বাড়ছে। ভারত আতপ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করায় মিলাররা এটাকে অজুহাত হিসাবে নিয়েছেন। তারা একদিনে সব ধরনের চাল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা বাড়িয়েছেন। এতে খুচরা বাজারে চালের দাম আরও বাড়বে। জানা যায়, ভারত শুধু আতপ চাল রপ্তানিতে শুল্কারোপ করেছে; নন-বাসমতি চাল (সিদ্ধ চাল) রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কারোপ করেনি। দুই মাস আগে মিলারদের কারণেই অস্থির হয়ে ওঠে চালের বাজার। তখন বাজার স্বাভাবিক রাখতে ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। আমদানি শুরুর পর ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং জোরদারের সঙ্গে দুদফায় আমদানি শুল্ক ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্পমূল্যে ওএমএস শুরু হয়। এতে চালের বাজারের অস্থিরতা দূর হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই। ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা করতে সুযোগ খোঁজেন। অজুহাত পেলেই তারা তা কাজে লাগিয়ে ভোক্তার পকেট কাটেন। কাজেই ব্যবসায়ীরা যাতে ভোক্তার পকেট কাটতে না পারেন, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। চাল এদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। মানুষ তার আয়ের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ব্যয় করে খাদ্য খাতে। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষ চাল কিনতেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে থাকে। কাজেই চালের দামের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনমান। এ অবস্থায় চাল নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি চলতে দেওয়া উচিত নয়। কর্তৃপক্ষ খুচরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিলেও সিন্ডিকেটের হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ভোক্তাদের। কেবল চাল নয়, সব নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দরে; শিশুখাদ্যের দামও আকাশছোঁয়া। ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতার দীর্ঘশ্বাস বেড়েই চলেছে; আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে গরিব মানুষ। দুঃখজনক হলো, অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুললেও বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর তৎপরতা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। নিত্যপণ্যের বাজারে যারা অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আবার বাড়ছে চালের দাম : বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হবে
Comment using Facebook