ডুমুরিয়ায় ৮৫ প্রধান শিক্ষক দীর্ঘ ১০ থেকে ৩৫ বছর যাবৎ একই বিদ্যালয়ে কর্মরত!

0
91


আ: লতিফ মোড়ল, ডুমুরিয়া (খুলনা)
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ২১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মধ্যে ৮৫ জনই একই বিদ্যালয়ে ১০ বছরেরও অধিক সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন একই বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করায় শিক্ষার্থীদর মধ্য নতুন চিন্তা বা শিক্ষা পদ্ধতির উন্মেষ ঘটছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া অভিভাবকরাও তাদের কাছে হয়ে পড়েছেন গুরুত্বহীন। সরকারি চাকুরি বিধি অনুসারে কোন কর্মজীবীর ৩ বছরের অধিক সময় একই কর্মস্থলে না থাকার বিধান থাকলেও ডুমুরিয়া উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তা অনুসরণের কোনা বালাই নেই। উপজলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলায় ২১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রেয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে ৮৫ জন শিক্ষক ১০ বছরর অধিক সময় ধরে একই বিদ্যালয়ে দায়িত্ব রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ বছর যাবৎ রয়েছেন ৩৬ জন, ২১ থেকে ৩০ বছর যাবৎ ১৪ জন এবং ৩১ থেকে ৩৬ বছর পর্যন্ত চেয়ার গেড়ে বসে আছন ৩৫ জন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার শর্তে প্রথম জেলা কোটা ও পরে উপজেলা কোটা অনুসরণ করা হয়। যাতে এলাকার যুবক-যুবতিরা শিক্ষক হয়ে কোমলমতি শিশুদের পড়ালেখা করাতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষক নিজ এলাকায় অবস্থান না করে উপজেলার নিকটবর্তি খুলনা শহরে বসবাস করেন। আর তাদের চাকুরীর সুবিধার্থে কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে শহর সংলগ্ন বা প্রধান-প্রধান সড়কের কাছাকাছি বিদ্যালয়ে পোস্টিং নিয়েছেন। তাছাড়া শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অজুহাতে উপজেলা শিক্ষা অফিসে ঘোরাঘুরি করে সময় পার করার অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের পাশে বসবাসরত একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকায় এলাকায় তার শেকড় গজিয়ে যায়। তখন তিনি শিক্ষার মান-উন্নয়ন বা শিক্ষার্থীর সুখ-সুবিধার বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেন না। এমনকি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি নির্বাচনের সময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে তাদের পছন্দের লোকদেরই নিয়ে আসেন। নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক এক নেতা বলেন, বর্তমানে প্রধান শিক্ষকরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে শিক্ষকতা করছেন। নিয়মিত বদলি হলে শিক্ষার এবং প্রতিষ্ঠানের লাভ হবে। ডুমুরিয়া উপজলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি গাজী এজাজ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন শিক্ষক যুগের পর যুগ একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় তাঁর শিখন কলা-কৌশল, বা শিক্ষাদান পদ্ধতি একই ধাচের হয়ে পড়ে, আর তিনি অলস হয়ে পড়েন। তাছাড়া প্রতিনিয়ত শিক্ষক যদি রদ-বদল হতো, তাহলে শিক্ষার মান নিঃসন্দহে আরও বৃদ্ধি পেত।’ এ প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া উপজলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিকদার আতিকুর রহমান বলেন, একই স্থানে দীর্ঘদিন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে আইনগত কোন বাঁধা নেই। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সিরাজুদ্দোহা বলেন, যদি কোন শিক্ষক বদলির আবেদন করেন সে ক্ষেত্রে বদলি করা যায়। আর দায়িত্বে অবহেলা বা অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযাগেও বদলি করা যায়।

Comment using Facebook