যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে টেন্ডার জমাদানে বাঁধা!

0
96


যশোর অফিস
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মেডিকেল সার্জিক্যাল কেমিকেল রি-এজেন্ট (এমএসআর) মালামাল সরবরাহের ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার দরপত্র জমাদানে ঠিকাদারদের বাঁধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার (১২সেপ্টেম্বর) সকালে শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামিদের নেতৃত্বে ঠিকাদারদের সিডিউল ছিনতাই করে তারা দরপত্র দাখিল করেন। এতে ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে ঠিকাদাররা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। মাগুরার ঠিকাদার আজিজুল হক জানান, সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) ছিল যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের এমএসআর এর দরপত্র জমাদানের শেষ দিন। এদিন মামুন ড্রাগস ও অপরাজিতা ড্রাগসের নামে ১২টি সিডিউল জমা দিতে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে যুবলীগ নামধারী একদল সন্ত্রাসী ১২টি সিডিউল ছিনিয়ে নিয়ে আমাদেরকে মারধর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। পরে বিষয়টি আমরা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। পুলিশের উপস্থিতিতে এভাবে প্রকাশ্য দরপত্র ছিনতাইয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শুধু আমি নই, বাইরে থেকে যারা দরপত্র জমা দিতে এসেছিল তাদেরকে জোর করে বের করে দেয়া হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে হাসপাতালের দরপত্র দাখিলের কার্যক্রম। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মেডিকেল সার্জিক্যাল কেমিকেল রি-এজেন্টের (এমএসআর) সাড়ে ৮ কোটি টাকার দরপত্রের সিডিউল বিক্রি শুরু হয় ৮ আগস্ট থেকে। বিক্রির শেষ তারিখ ছিলো ১১ সেপ্টেম্বর। ৬টি গ্রুপের মোট ১৮২টি সিডিউল বিক্রি হয়। ৩৭ টি প্রতিষ্ঠান সিডিউল ক্রয় করে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য বাঁধার কারণে দুইটি প্রতিষ্ঠান মাত্র ১৩টি দরপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে দাখিল হয়েছে ৬টি ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে দাখিল হয়েছে ৭টি দরপত্র। টেন্ডারগুলো খোলার পরে ক গ্রুপে ৩টি, খ গ্রুপে ২টি, গ গ্রুপে ২টি, ঘ গ্রুপে ২টি, ঙ গ্রুপে ২টি, চ গ্রুপে ২টি সিডিউল জমা পড়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া সড়কের বাসিন্দা ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলুর ঢাকার প্রতিষ্ঠান মিডফোর্ড এলাকার বনানী মেডিকেল ও গোপিবাগ এলাকার আলেয়া কর্পোরেশন নামে দুটি লাইসেন্সে এই কাজে বাঁধা দিয়েছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের মোট ১৩টি দরপত্র জমা পড়েছে। অন্যদেরকে ফেলতে দেয়া হয়নি। সন্ত্রাসী টাক মিলন, শিপলুসহ ক্ষমতাসীন দলের লোকদেরকে দিয়ে তিনি এই দরপত্র বাগিয়ে নেবার চেষ্টা করেছেন বলে ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন। কেননা গত এক যুগ ধরে ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলু হাসপাতালের সব পথ্য সরবরাহকারি ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে আসছেন। এবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু জটিল শর্ত জুড়ে দেবার কারণে তিনি ঢাকার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করেছেন। এব্যাপারে যশোর আড়ইশ শষ্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আক্তারুজ্জামান জানান, সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ছিল হাসপাতালের পথ্যসামগ্রী সরবরাহের সাড়ে ৮ কোটি টাকার দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। আমাদের কাছে সন্ত্রাসীরা বাঁধা দিচ্ছে অভিযোগ এসেছে। ভিডিও চিত্রেও দেখা গেছে। এজন্য আমরা পুলিশকে আগেই অবহিত করেছিলাম। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতে যদি দরপত্র দাখিলে বাঁধার ঘটনা ঘটে তাহলে আমাদের কি করার আছে। বিষয়টি দরপত্র যাচাই বাছাই কমিটি দেখছে। অভিযুক্ত জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন জানান, আমি হাসপাতালে দরপত্র দাখিল করতে গিয়েছিলাম। সেখানে কোন বাঁধা দেবার ঘটনা ঘটেনি। কোন প্রতিষ্ঠানের নামে দরপত্র জমা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলতে পারেননি। ঠিকাদার হাফিজুর রহমান শিলু অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, আমিতো সিডিউল সংগ্রহ করিনি। জমা দিব কিভাবে। ঢাকার প্রতিষ্ঠানের নামে জমা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে দরপত্র দাখিলের সময় আমাদের টিম উপস্থিত ছিল। তবে বাঁধার দেবার ঘটনায় কেউ আমাদেরকে অভিযোগ করেনি।

Comment using Facebook