মেহেদী হাসান, স্টাফ রিপোর্টার (খুলনা)
দ্বিতীয় জেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন; তফশিল ঘোষণার পর থেকে খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা সরব হয়ে ওঠেছেন। আগামী ১৭ অক্টোবর খুলনাসহ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে হিসেব-নিকেশ চললেও নীরব বিএনপি। আপাতত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলন নিয়েই ভাবনা তাদের। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না- এটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ফাঁকা মাঠে গোল দিতে তাদের মাঝে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। কোনোভাবে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে পারলেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ নিশ্চিত- এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকেই কেন্দ্রে নীরবে চালিয়ে যাচ্ছেন লবিং। নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে কারা প্রার্থী হবেন রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা আলোচনা। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে বিগত দিনের কর্মকা- নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। গত রোববার সকাল ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পাঁচ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। এদের মধ্যে যে কারো ভাগ্যে জুটতে পারে দলীয় টিকিট। দলীয় মনোয়নয়ন ফরম জমা দিয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদ, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ দেলওয়ারা বেগম, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড সুজিত অধিকারি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরফউদ্দীন বিশ্বাস বাচ্চু ও নগর আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান। তফসিল ঘোষণার পর অনেকের নাম আলোচনায় থাকলেও মনোনয়ন দৌড়ে এরই মধ্যে তাদের অনেকে পিছিয়ে পড়েছেন। খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রের ‘গ্রিন সিগন্যালের’ অপেক্ষায় থেকেও আগ্রহী আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেননি। ব্যক্তিগত ইমেজ রক্ষায় দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে চান না কেউ। তবে ঢাকায় অবস্থান করে অনেকেই দলীয় মনোনয়ন পেতে গোপনে কেন্দ্রের শীর্ষ নেতাদের সমর্থন পেতে তদবির করছেন বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক নেতাকর্মী। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, দলের সিদ্ধান্তে ছয়বার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছি। চেয়ারম্যানও একাধিকবার ছিলাম। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুরো জেলা সাজিয়েছি। প্রার্থিতার বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ দেলওয়ারা বেগম বলেন, ‘এরই মদ্যে দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দিয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই আগামী দিনে পথ চলবো।’ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি।‘দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছি। যোগ্যতা, ত্যাগসহ নানা দিক মনোনয়ন বোর্ড বিবেচনা করবে। এতে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমায় মনোনয়ন না দেন, তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করবো। আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তারপরও চেয়ারম্যান পদে দল যাকে যোগ্য মনে করবে মেনে নেব। আমরা গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় আছি। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।’ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, দেখা যাচ্ছে, একই ব্যক্তিরা ঘুরেফিরে বারবার সংসদ-সদস্য, মেয়র, চেয়ারম্যান হচ্ছেন। অথচ দলে এমন অনেক ত্যাগী নেতা আছেন তাদের মূল্যায়ন হওয়া জরুরি। এবার বঞ্চিতদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হোক। এদিকে বিগত সময়ে খুলনা জেলা পরিষদে ১৫ জন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ বছর তা পরিবর্তিত হয়ে সাধারণ সদস্য পদ হয়েছে ৯টি ও সংরক্ষিত সদস্য পদ তিনটি। মোট সদস্য পদ সংথ্যা ১২টি। খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৩১ কাউন্সিলর, ১০ সংরক্ষিত কাউন্সিলর, ৬৮ ইউপি চেয়ারম্যান, নয় উপজেলা চেয়ারম্যান, ১৮ ভাইস চেয়ারম্যান, সব সাধারণ ও সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ভোটার। উল্লেখ্য, প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। আগামী ১৭ অক্টোবর খুলনাসহ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে সকাল ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)।
জেলা পরিষদ নির্বাচন : আ’লীগের ৫ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা
Comment using Facebook