যশোর অফিস
যশোরসহ ৬১ জেলা পরিষদের ভোট আগামী ১৭ অক্টোবর। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র ইতোমধ্যে বেচা-কেনা শুরু হয়েছে। যশোর জেলায় অন্তত একডজনেরও বেশি নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা ছুটছেন বিভিন্ন নেতাদের কাছে কাছে। অপরদিকে, যশোরে সর্বত্র চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সবার মুখে একই প্রশ্ন কে পাবেন দলের টিকেট আর কেইবা হবেন যশোর জেলা পরিষদের আগামী চেয়ারম্যান? বর্তমান প্রশাসক ও সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুলই কি ফের পাবেন দলীয় মনোনয়ন নাকি আসছেন নতুন কেউ? যদি নতুন কেউ আসেন, তবে কে সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি? একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র বলছে, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে এবার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি। এবার অন্তত একডজন নেতা দলের মনোনয়ন চাইছেন। তাদের মধ্যে জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পাঁচজন সহ সভাপতি ছাড়াও রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। সর্বশেষ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল- আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে বহু জেল-জুলুম-হুলিয়ার শিকার সাবেক ছাত্র ও যুবলীগ নেতা, বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক সাইফুজ্জামান পিকুল আবারও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি আশা করেন, তার রাজনৈতিক অতীত বিবেচনা করে দলীয় সভানেত্রী ফের তাকেই মনোনয়ন দেবেন। শহিদুল ইসলাম মিলন- বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগ করার মধ্যদিয়েই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি দীর্ঘদিন যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমান কমিটিসহ যশোর জেলা আওয়ামী লীগের টানা দুই কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিগত তত্বাবধায়ক সরকার আমলে কারাবরণকারী নেতা। তার অতীত রাজনৈতিক কর্মকান্ড বিবেচনায় এনে এবার তিনি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীতা দাবি করছেন। আব্দুল খালেক- আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের পরীক্ষীত নেতা আব্দুল খালেক বর্তমান কমিটিসহ যশোর জেলা আওয়ামী লীগের টানা দুইবারের কমিটিতে সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পদ-পদবীর এই পরিচয়ের বাইরেও রয়েছে তার ভিন্ন পরিচয়। তিনি ১৯৭২ সালে যশোর এম এম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। সে সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর নিবিড় সান্নিধ্য লাভ করেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে যশোরে ২৭ আগস্ট যে ২৮জন সাহসী মানুষ গায়েবানা জানাজা পড়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আব্দুল খালেক।’ ফিরোজা রেজা- যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আলী রেজা রাজুর স্ত্রী ফিরোজা রেজা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথেই সম্পৃক্ত। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। আব্দুল মজিদ- স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল মজিদ বর্তমানে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দীর্ঘদিন রয়েছে তার সংশ্লিষ্টতা। তিনি যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আজ ফরম কিনবেন। খয়রাত হোসেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা খয়রাত হোসেন একাত্তরের রণাঙ্গণের একজন প্রত্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্রলীগ করাকালীন তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। আলী রায়হান-আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এডভোকেট আলী রায়হান। তিনি বর্তমানে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগের কমিটিতে তিনি যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এবার দলীয় মনোনয়ন চান। গোলাম মোস্তফা- বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৭০ সালে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। মোহিত কুমার নাথ- ১৯৬৮ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করা মোহিত কুমার নাথ টানা দুই বার যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বহু জেল জুলুম হুলিয়ার শিকার হয়েছেন। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্বীকৃতি স্বরূপ এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চান। আবু সেলিম রানা- সাবেক এমপি মরহুম এডভোকেট রওশন আলীর ছেলে এডভোকেট আবু সেলিম রানা বিভিন্ন সময় জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন ছাড়াও বর্তমান কমিটিতে কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। হারুন অর রশিদ-যশোর জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দুঃসময়ে দলের জেলা প্রচার সম্পাদকও ছিলেন দীর্ঘদিন। মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল- ভিপি মুকুল খ্যাত এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জেলা কৃষক লীগের সাথেও সম্পৃক্ত। ট্রেড ইউনিয়নের নির্বাচন পরিচালনা ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। মেহেদী হাসান মিন্টু- বয়সে নবীন মেহেদী হাসান মিন্টু বর্তমানে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিগত জেলা পরিষদে সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার তিনি চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া চৗগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম হাবিবও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। উল্লেখ্য, আগামী ১৭ অক্টোবর যশোরসহ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর, বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর ও ভোটগ্রহণ ১৭ অক্টোবর। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পত্র বেচা-কেনা চলবে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের মনোনয়ন পত্যাশী ১৪ প্রার্থী
Comment using Facebook