নওয়াপাড়ায় নুরবাগ সড়কে লোড-আনলোড : প্রতিনিয়ত যানজট : দেখার কেউ নেই!

0
164


স্টাফ রিপোর্টার
শিল্প বানিজ্য ও বন্দরনগরী নওয়াপাড়ার প্রাণকেন্দ্র নুরবাগের ব্যস্ততম সড়কের উপর পণ্য পরিবহন রেখে নিয়মিত লোড আনলোড অব্যাহত রয়েছে। অবৈধভাবে সড়ক দখল করে মালামাল লোড আনলোড করায় তিব্র যানজটে নাকাল নওয়াপাড়াবাসী। নুরবাগ থেকে পশু হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত এ সড়কের যানজট ও জনদূর্ভোগ নিয়ে দক্ষিণবঙ্গের গণমানুষের মুখপাত্র দৈনিক নওয়াপাড়া পত্রিকায় বহুবার খবর প্রকাশিত হলেও এখনো পর্যন্ত টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ভয়াবহ যানযট নিরসনে নেয়া হয়নি কোন কার্যকরি পদক্ষেপ। অবৈধ দখলদাররা অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে দিনকে দিন আরও শক্ত অবস্থান নিয়েছে। এযেন দেখার কেউ নেই। সড়কের উপর ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান রেখে লোড আনলোড ও অবৈধভাবে গড়ে উঠা ভ্যান, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক স্ট্যান্ডের কারণে দিনের অধিকাংশ সময় তিব্র যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এই রুটে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষ। পথচারী ও ভুক্তভোগী মানুষের দাবী অবিলম্বে সড়কের উপর গাড়ি রেখে মালামাল লোড আনলোড বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া সড়কের দুপাশের ব্যবসায়ীরা তাদের ঘরের সামনের ফুটপাথ মোটা অংকের টাকা ভাড়া দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান বসিয়ে যানজট আরও তীব্র করে তুলেছে। চিকন সড়কের ফুটফাত ভাড়া দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। গত শনিবার ও রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নুরবাগ থেকে স্বাধীনতা চত্বর হয়ে টেকারস্ট্যান্ড মোড় পর্যন্ত ব্যস্ততম এ সড়কটি দখল করে প্রতিদিন ট্রাক, কার্ভাড ভ্যান, পিকাপ, আলম সাধুতে চলছে চাল, খৈল, ভূষিসহ বিভিন্ন মালামাল লোড আনলোড। বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা ও বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ব্যস্ততম এ সময়ে লোড আনলোড অব্যহত থাকায় যানজট লেগেই থাকে। সড়ক বন্ধ করে কেন এভাবে লোড আনলোড করা হয় জানতে চাইলে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন দখলদাররা। বলেন, সবাই করে তাই আমরাও করি। শুধু তাইনা অবৈধভাবে গড়ে উঠা ভ্যান, ইজিবাইক, স্ট্যান্ডের কারণে প্রায় ঘটছে ছোট বড় নানা দূর্ঘটনা।

এ নিয়ে ড্রাইভার পথচারীদেরকে বাকবিতন্ডায় জড়াতে দেখা গেছে। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডে সিরিয়ালম্যান নিযুক্ত করে প্রতিদিন মোটা অংকের চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কার পকেটে যায় এসব চাঁদার টাকা, কে/বা নেতৃত্ব দিচ্ছে এসব অবৈধ কর্মকান্ডের এমন প্রশ্ন পথচারীদের। এছাড়া একমাত্র সরকারী হাসপাতাল ও বেসরকারী ভাবে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে যাওয়ার গুরুত্বপুর্ন এ সড়কটিতে যানজট লেগে থাকায় এ্যম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী গাড়ি আটকে থাকতে দেখা যায়। অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে খুলনায় রেফার্ড করা ঝুকিপুর্ণ রোগী বহনকারী এ্যম্বুলেন্স যানজটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, নুরবাগ সংলগ্ন চালের আড়ৎ মালিকরা অধিক মোনাফার লোভে দিনের ব্যস্ততম সময়ে সড়ক দখল করে চাল লোড আনলোড করে।

তাছাড়া স্বাধীনতা চত্বরের ও নুরবাগের ১’শ গজের মধ্যে গড়ে উঠেছে ভ্যান, ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার, মটরসাইকেলের বেশ কয়েকটি স্ট্যান্ড, যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে এসব গাড়ির চালকরা। আবার স্বাধীনতা চত্বর থেকে টেকারস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়ক দখল করে খৈল, ভূষি লোড আনলোড চলে নির্বিঘেœ। দিনের ব্যস্ততম সময়ে গাড়ি লোড করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেসার্স সুশান্ত কৃষ্ণ রায়ের মালিক জানান, যখন গাড়িটি লোড শুরু হয় তখন রোড ফাঁকা ছিল, সবাই এভাবে লোড আনলোড করে। অপর একজনকে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, আমরাও চাইনা মানুষকে কষ্ট দিতে। মটরসাইকেল চালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ রোডে চলাচল করার মত কোন উপায় নেই। একবার এ সড়কে ঢুকে পড়লে বের হতে সময় লাগে মিনিমাম ৪০/৫০ মিনিট। ভারি মালবাহী গাড়ী সড়কে ঢুকে পড়া ও লোড আনলোড যানজটের অন্যতম কারণ বলে জানান স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আল আমিন নামে একজন ভুক্তভোগী জানান, অবৈধ দখলদারদের শক্তির উৎস কোথায়? আপনাদের মাধ্যমে আমরা তা জানতে চাই। স্বাধীনতা চত্বরের যানজট নিরসনে ট্রাফিক জোন নির্মাণ করতে হবে। এসময় দ্রুত স্বাধীনতা চত্বরের যানজট নিরসনে ফুটফাত অবৈধ দখলমুক্ত করতে যথাযত কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন নওয়াপাড়াবাসী। যদিও গতকাল রোববার যশোর-খুলনা মহাসড়কের বেঙ্গলগেট থেকে উপজেলা পর্যন্ত যানজট ছিলই না বললে চলে। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে নওয়াপাড়া হাইওয়ে থানার পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এব্যাপারে নওয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মো: সিদ্দিকুর রহমান জানান, নওয়াপাড়ায় যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে ইজিভ্যান ও অটোভ্যানের কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকান্ডে দিন দিন যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখান সেখান থেকে হুট ঘুরে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ও যানজট দুটোই তৈরী হচ্ছে। তাই এর সমাধান করতে হলে নওয়াপাড়ার নুরবাগ সড়কের মাঝে ডিভাইডার দিতে হবে, যেন যেখান সেখান দিয়ে ইচ্ছা করলেই টার্ম নিতে না পারে। এজন্য সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন।

Comment using Facebook