খুলনা ব্যুরো
যেকোনো হাসপাতালের জন্য একটি এক্স-রে মেশিন অত্যাবশ্যকীয়, সেইসঙ্গে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনও। কিন্তু এই দুটি মেশিনের একটিও ভালো নেই খুলনা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে অকেজো থাকলেও তা ঠিক করা বা নতুন মেশিনের জন্য দেওয়া হয়নি কোনো চাহিদাপত্র। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ খালি না থাকলেও হাতেগোনা কয়েকজনকে ছাড়া পাওয়া যায় না। অধিকাংশরাই অবস্থান করেন খুলনা শহরে। এমন অভিযোগ রোগী ও এলাকাবাসীর। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে অবলিলায় চরে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল। মাঝে মধ্যে তা হাসপাতাল অভ্যন্তরেও ঢুকে পড়ে। সবচেয়ে সমস্যায় রয়েছে হাসপাতালে প্রবেশের সড়কটি। যেখানে চলাচলকারী সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যায়। খুলনার সবচেয়ে বড় উপজেলা ডুমুরিয়া। ১৪টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত এই উপজেলায় প্রায় চার লাখ লোকের বসবাস। প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য রয়েছে একটি করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র। যদিও বর্তমানে একটিরও অস্তিত্ব নেই। সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মেঝেতে যেখানে সেখানে পানের পিক। টাইলস উঠে গেছে অনেক জায়গায়। পড়ে আছে হাসপাতালের বর্জ্যও। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও পুরুষ ও নারী মিলিয়ে রোগী আছেন ১৫-১৬ জন। অথচ আশপাশের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সবই চকচকে ঝকঝকে। হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের একাধিক রোগী বলেন, এখানকার সেবা ভালো না। ডাক্তাররা সময়মতো আসেন না। নার্সরা মাঝে মধ্যে এসে ঘুরে ফিরে দেখে যায়। যাদের অর্থ নেই তারাই শুধু এখানে ভর্তি থাকেন। হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ হোসেন, আতিয়ার রহমান শেখ ও নাসিমা খাতুন বলেন, এখানে কোনো সিজার অপারেশন হয় না। সিজারের রোগী এলে তাকে কৌশলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আশপাশের ক্লিনিকে। কিন্তু কেন দেওয়া হয় তা তারা জানেন না। তারা বলেন, হাসপাতালের সড়কেই (২০ গজ থেকে ৩০ গজ দূরে) রয়েছে ৪-৫টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এই হাসপাতালের এক সময়ের প্যাথলজিস্ট রায়হান নিজেই একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তুলেছেন হাসপাতাল সড়কের বিপরীতে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ সুফিয়ান রুস্তম জানান ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আমি তিন বছরের বেশি সময় এখানে যোগদান করেছি। এর আগে থেকেই বিকল হয়ে আছে এক্স-রে ও দুটি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। এগুলো মেরামত করার জন্য কোনো চাহিদাপত্র দেওয়া হয়নি। না দেয়ার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এখানে ৪৪০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন নেই। ফলে এক্স-রে মেশিন চলে না। আর এখানকার এক্স-রে রিপোর্টের কোনো মূল্য নেই। মেডিকেল থেকে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়ে তাই গ্রহণযোগ্যতা পায়। এই চিকিৎসক নিজেই অভিযোগ করে বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন কনসালটেন্টের পদ রয়েছে। কিন্তু আছেন মাত্র ২ জন (অ্যানেস্থেসিয়া ও শিশু)। এখানে নেই অবকাঠামোগত কোনো সুযোগ সুবিধা। নতুন ভবন হলেও তা এখনও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে যায় হাসপাতাল। যা থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। হাসপাতালের চিকিৎসকরা সবাই এখন নিয়মিত আসছেন, কিন্তু ২৪-২৫ জন চিকিৎসকের বসার জায়গা দেওয়া যায় না। চলতি বছরের মার্চে নতুন ভবন হস্তান্তর করার কথা থাকলেও তা হয়নি বলেও জানালেন তিনি। তবে তিনি বলেন, এখন হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। হাসপাতালের রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে কোনো দালাল নেই। কাছেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সেখানেই চলে যান রোগীরা। তারপরও এই হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ রোগীকে আউটডোর সেবা দেওয়া হয়। এদিকে এলাকাবাসী জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৩০ গজ সড়ক দিয়ে। দীর্ঘ সময় ধরে মেরামত না করায় ও ভারি যানবাহন চলাচলে ওই সড়কের অসংখ্য জায়গায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু বক্কার খান জানান, উপজেলার প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষের ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেই চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। অথচ সেখানে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটিই এখন মুমূর্ষু। ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ বলেন, অতি দ্রুত ওই রাস্তাটির কাজ শুরু করা হবে। ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, সংযোগ সড়কটি মেরামতের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই রাস্তাটির সংস্কার করা হবে।