রূপদিয়ায় প্রভাবশালীরা দখল করছে খাল : জলাবদ্ধতার আশংকা

0
204

মাসুদ পারভেজ, রূপদিয়া (যশোর)
আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে হাটবিলা রূপদিয়া খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম হাতে নিতে যাচ্ছে যশোর জেলা পরিষদ। পাশাপাশি খাল দখলের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, যশোর সদরের এসিল্যান্ড, রূপদিয়া বাজার বণিক সমিতি ও স্থানীয় ভূক্তভোগী এলাকাবাসী। গতকাল শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে আসেন যশোর জেলা সার্ভিয়ার পরিষদের এম এ মনজুর। তিনি বলেন, এটা যশোর জেলা পরিষদের জমি। এক ইঞ্চি জমিতেও আমি কোন অবৈধ দখল করতে দেব না। এই জমিতে স্থাপনা নির্মান কাজ বন্ধ থাকবে। আগামী তিন দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্যোগে এই জমি মাপা হবে। এরপর জেলা পরিষদের জমিতে সকল অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

এরই মধ্যে খাল দখলমুক্ত করতে ১৯ দখলদারের নাম উল্লেখ করে যশোর সদরের এসিল্যান্ড বরাবর একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন নরেন্দপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ওয়াহদিুজ্জামান। অবৈধ খাল দখলদাররা হলেন, রূপদিয়া গ্রামের আকাম গাজির ছেলে মকলেচুর রহমান, নুরো ও শরিফুল গাজী, একই গ্রামের মজিদ গাজীর ছেলে আঃ রহমান, জোহর আলীর ছেলে নরি ইসলাম, সন্তোষের ছেলে রিপন, ইব্রাহিম খানের ছেলে ইমরান খান, অনিলের ছেলে উত্তম, মৃত শাহাজান আলীর ছেলে মোঃ রেজাউল ইসলাম, হাটবিলা গ্রামের আনছার আলী মোল্যার ছেলে রফিকুল ইসলাম, মুথুরাপুর গ্রামের আঃ রউফের ছেলে কাশেম, মুন্সেফপুর গ্রামের হাজারী দত্তের ছেলে কৃষ্ণ দত্ত, একই গ্রামের আতুলের ছেলে রাম্প্রাসাদ, জনৈক মফিজ, জামাল, নরেন্দ্রপুরের হারেজ মল্লিকের ছেলে আজাদ, একই গ্রামের মিঠু। এছাড়াও রূপদিয়া মসজিদ কমিটির একটি টয়লেটের হাউজ খালের জমিতে রয়েছে। গত ৬ জুন ২০২২ তারিখে যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর হাটবিলা রূপদিয়া খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ প্রসঙ্গে একটি আবেদন জমা দিয়েছেন যশোর সদরের এসিল্যান্ড এস এম মিকাইল হোসেন।

সেখানে বলা হয়েছে রূপদিয়া গ্রামের আকাম গাজীর ছেলে মকলেচুর রহমান ২২২ নং রূপদিয়া মৌজার রূপদিয়া খালের ওপর অবৈধভাবে দোকান ঘর নির্মাণ করছিলেন। নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা সরেজমিন উপস্থিত হয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। ঐ আবেদনপত্রে উল্লেখ আছে উক্ত জমি জেলা পরিষদ, যশোর এর নামে আর,এস ৪নং খতিয়ানে চুড়ান্ত রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত জমির আর,এস দাগ নং ৮৬২, শ্রেণি- পাকা রাস্তা। এর আগেই স্থানীয় নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হন। তিনি তার পক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুধন্য দাস, ইউপি সদস্য আ. মালেক, মকবুল হোসেন, আ.রাজ্জাক এবং গোলাম মোস্তফাকে ঘটনাস্থলে পাঠালে তারা মকলেচুর রহমানকে খালের ওপর পাঁকা ড্রেন তৈরির কাজ বন্ধ রাখতে বললে কিছুদিনের জন্য কাজ বন্ধ থাকে। চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ জানান, আমরা জানতে পেরেছি ১৯ জন দখলদার এই খাল দখল করে আছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিষয়টির প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সকলকে সঙ্গে নিয়ে এই খাল দখলমুক্ত করতে পদক্ষেপ নিব।

খাল দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন রূপদিয়া বাজারের বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। জানা যায়, খাল দখলের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং খাল দখলের ঘটনায় নিন্দা জানান। ভূক্তভোগী এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদে হাটবিলা রূপদিয়া খাল নিষ্কাশন, খাল খনন, দখল ও সংস্কার প্রসঙ্গে একটি আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন। সেই আবেদনপত্রেও সকল খাল দখলদারদের নাম উল্লেখ করেছেন এলাকাবাসী। গত বৃহস্পতিবার (৯ জুন) নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ, নরেন্দ্রপুর ভূমি অফিস, যশোর সদরের এসিল্যান্ড ও বণিক সমিতি আদেশ উপেক্ষা করে ফের ঐ খালের ওপর এস্কেভেটর দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ করছিলো মকলেচুর রহমান। এ ঘটনা জানাজানি হলে সেখানে কয়েকজন সাংবাদিক গিয়ে ছবি তুলতে চাইলে মকলেচুর রহমানের ছেলে মওদুদ একজন সাংবিদককে ধাক্কা দেন। এবং সাংবাদিকদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

উল্লেখ্য, রূপদিয়া গ্রামের আকাম গাজির ছেলে মকলেচুর রহমান খালের সাত ফুট জমিতে ১০ ইঞ্চি ঢালাই ভিম ও ইটের গাঁথুনি দিয়ে উপরে ছাদ ঢালাই দিয়েছেন। সম্প্রতি তা মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। এমনকি নিজেই ঐ খালের ওপর স্থাপিত স্থানীয় মসজিদের টয়লেটের হাউজ ভেঙে দিয়েছেন। মকলেচুর রহমানের ছেলে মওদুদ জানান, আমাদের ৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। সরকারের কর্তৃপক্ষ এসে আমাকে মৌখিকভাবে কাজ থামিয়ে রাখতে বললেও আমাকে কোন লিখিত দেয়নি। লিখিত দিলে আমি কাজ বন্ধ করে দিব। আমি এখানে হাসপাতাল করে জনগনের সেবা করব। আমি কার সাথে সমঝোতা করব? খালের পাশে আমার জমিতে একটা গাড়ি প্রবেশ করাবো কিভাবে? আমি সাংবাদিকদেরকে এখানে আসতে নিষেধ করার পরেও তারা এখানে এসেছে। বারবার এখানে এসে ছবি তুলছে এজন্য আমি একজন সাংবাদিকের ঘাড়ে হাত রেখে তাকে ছবি তুলতে নিষেধ করেছি। এটা কোন দোষের না। আমি যা করছি সবকিছু মানুষের ভালোর জন্যই করছি। অদৃশ্য শক্তির দাপটে থেমে থেমে নিজের দখলদারিত্বের কাজে অনেক দুর এগিয়েছে এসব দখলদাররা। এ সমস্যার আশু সমাধান না হলে বাড়বে আরও জনদুর্ভোগ।

Comment using Facebook