॥ মফিজুর রহমান দপ্তরী ॥
যশোরের অভয়নগরের আমডাঙ্গা খালের ৬ ভেন্ট সøুইস গেটের রেগুলেটর দীর্ঘদিন যাবৎ অচল হয়ে রয়েছে। ভবদহের ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হওয়ায় ফুঁসে উঠেছে ভুক্তভোগী ভবদহ এলাকার মানুষ। কয়েকদিনের বর্ষায় নতুন করে হাজার হাজার কৃষকের বাড়িতে পানি উঠেছে। শংকা ও উৎকন্ঠায় দিন কাটছে কৃষক পরিবারগুলির। গত কয়েক দিনের বর্ষায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। অনেক বাড়ীতেও পানি উঠতে দেখা গেছে। এদিকে আমডাঙ্গা খালে পলি ও শেওলা জমে খাল একেবারে বন্ধ হয়ে পড়েছে।
পানির চাপ থাকলেও খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে নামতে পারছেনা। যে কারণে জলাবদ্ধতার আশংকায় পড়েছে ভবদহ এলাকার মানুষেরা। পানিবন্দি ওইসব মানুষের অভিযোগ, আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য সরকারের এত বড় বরাদ্দ হলো কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাজ শুরু হলোনা কেন? যে কোন সময় বড় ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। আর বৃষ্টি হলে এবারে বাড়ি ছেড়ে গাছের ডালে বসবাস ছাড়া কোন উপায় নেই। ফসলী জমি দীর্ঘদিন যাবৎ পানির নীচে। কি খেয়ে বেচে থাকব কিংবা ছেলে-মেয়েদেরকে বাছিয়ে রাখব কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমাদেরকি এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি হবেনা? আমরা কি পারবনা আর স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে? কে আমাদের কথা শুনবে, কার কাছে আমরা নালিশ করবো? মিছিল মিটিং নিয়ে ঢাকায় সংসদ পর্যন্ত গেছি কিন্তু কোন ভাবেইতো আমাদের মুক্তি হচ্ছেনা- কথাগুলি বলতে বলতে হাউমাউ করে কাদতে থাকে সুন্দলী ইউনিয়নের মনিমালা নামের গৃহবধু।
তার কান্না থামাতে আশ পাশ থেকে আর লোকজন জড়ো হয়, কিন্তু কিছুতেই যেন তার কান্না থামানো যাচ্ছেনা। উপস্থিত সকলের একই প্রশ্ন বার বার, আমরা শুনেছি খাল কাটার জন্য নাকি সরকার টাকা দিয়েছে সেই টাকা কি হয়েছে? সেই টাকা দিয়ে কি খাল কেটে নদীতে পানি দিলে আমরা বাঁচতে পারতাম না? আমাগের বিলে কি ধান-পান হতোনা? আমরা খেয়ে বাঁচতে পারতাম না? এরকম হাজারও প্রশ্ন তাদের চোখে মুখে। এদিকে আমডাঙ্গা খালের সøুইচ গেট বন্ধ রয়েছে। বেতনের অভাবে অপারেটর রাজু এখন আর আগেরমত গেট উঠানো নামানোর কাজ করেন না। রাজু জানায়, আমডাঙ্গা ৬ ভেন্ট সøুইচ গেট উঠানো নামানোর জন্য পাউবো যশোর কর্তৃক ৮ বছর আগে নিয়োগপ্রাপ্ত হই। রেগুলের্টগুলি ভাটার সময় উঠানো ও জোয়ারের সময় বন্ধ রাখা আমার কাজ। এজন্য প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা বেতন পাই। কিন্তু গত ৫ মাস বেতন বন্ধ। তাই রাগে ক্ষোভে দু:খে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।
এর ফলে পানি নিষ্কাশনও বন্ধ রয়েছে। সে জানায়, সেকশন অফিসার (এস ও) তরুণ ৫ মাস বেতন বন্ধ করে দিয়েছে। চাকরিও স্থায়ী করেনি, কপাট ওঠানো নামানোর জন্য আমাকে পাউবো টাকা দিচ্ছেনা। কাজ করলে বেতন পাবনা। তাই গেট বন্ধ রেখেছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী জানান, আমডাঙ্গা খালের সংস্কার চাননা প্রভাবশালী একটি মহল। গেট জীর্ণ, তালা খোলা যায়না। পাউবো কর্তৃৃপক্ষ এ ব্যাপারে নীরব। গত ৩ জুন শুক্রবার এলাকার কৃষকরা স্ব উদ্যোগে খালের মুখ পরিষ্কার করেন। তারা রাজুকে নিয়ে ত্রুটিপূর্ণ পুরানো মরচে ধরা তালা ও কপাট খোলার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদিকে কয়েক দিনের বর্ষণে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও হাজার হাজার বাড়ীর আঙিনায় নতুন করে পানি প্রবেশ করেছে।