॥ মফিজুর রহমান দপ্তরী ॥
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর সারাদেশে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযান চললেও যশোরের অভয়নগরে অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকগুরি চলছে আগের মতই। বে-সরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে গলাকাটা বাণিজ্যও থেমে নেই। মানা হচ্ছেনা সরকারি নিয়মনীতি কিংবা নির্দেশনা। স্বাস্থ্য বিভাগের বেঁধে দেয়া ৭২ ঘন্টা সময় অনেক আগেই পার হলেও উপজেলায় অবৈধ ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠা (প্রাঃ) হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযান হলোনা তা নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে অভয়নগরবাসির মনে। গ্রাম্য-হাতুড়ে ডাক্তার নামধারীরা এইসব হাসপাতালের মালিক সেজে বসে আছে। জানাগেছে, চিকিৎসা সেবার নামে গড়ে উঠা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকে নিয়োজিত দালাল চক্র প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা সহজ-সরল নিরীহ রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে।
সরকারী হাসপাতালের ডাক্তাররা চালাচ্ছেন কমিশন বানিজ্য। ডাক্তার-ডায়াগনস্টিকের যোগসাজে রোগীদেরকে নির্দিষ্ট প্যাথলজীতে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। থেমে নেই এ্যম্বুলেন্সের ড্রাইভার হেলপার থেকে শুরু করে ফার্মেসীর কর্মচারীরাও। দালাল চক্রের সাথে তাল মিলিয়ে তারাও নেমেছে কমিশন বানিজ্যে। সারাদিন হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমসহ আশেপাশে ওৎপেতে বসে থাকে দালালচক্র। হাসপাতালে স্ব-বেতনের নামে বেশ কয়েকজন দালাল সহযোগীতার নামে রুগী আসলেই তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং সুযোগ বুঝে পাঠিয়ে দেয় পছন্দের প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিকে। আর এই সুযোগে ৮০ টাকার ইসিজি রিপোর্ট করতে রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। কমিশন হিসাবে দালাল পান ১০০-১৫০ টাকা। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু ডাক্তারও ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকের সাথে মিলেমিশে টেষ্ট বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন দেদারছে। শুধু তাইনা ওষুধ কম্পানির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে উপহার উপঢৌকন নিয়ে লিখছেন নিম্নমানের ওষুধ। যশোর সিভিল সার্জন অফিসকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ ক্লিনিক-হাসপাতাল তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ফলে সাধারণ মানুষ অর্থ খরচ করেও উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের মালিকরা বছরে লাখ লাখ টাকা অর্থ বানিজ্য করে আসছে রোগী সাধারণকে জিম্মি করে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে ১০ শয্যার অনুমতি থাকলেও ৩০ থেকে ৪০ শয্যা পর্যন্ত বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। যা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এরপরও রোগীদের চাপে সিজারিয়ান অপারেশন করা রোগীর সেলাই না কেটে ৩-৫ দিনের মাথায় বাড়িতে পাঠিয়ে নতুন রোগীর জায়গা করার ধান্দায়। দুর দূরান্ত থেকে কষ্ট করে আবারও ৭দিনের মাথায় ক্লিনিকে আসতে হচ্ছে সেলাই কাটার জন্য। নানা অজুহাতে আবারও কিছু টেষ্ট ধরিয়ে ও নতুন কিছু অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে আরেকবার গলা কাটা হচ্ছে। এসব কর্মকান্ড (প্রাঃ) হাসপাতালের নিত্যদিনের ঘটনা। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের করুণ চিত্রতো বলার বাহিরে রয়ে যায়। সপ্তাহে একদিন ডাক্তার সিরিয়াল দিয়ে একের পর এক কসাইয়ের মত রোগি অপারেশন করে চলে যায়। রোগিদের দেখাশোনা করে তথাকথিত অদক্ষ সেবিকারা। আর প্রাইভেট ওইসব হাসপাতালে (এনেস্থেশিয়ান) অজ্ঞান ডাক্তারতো যেন সোনার হরিণ। সবগুলি ক্লিনিকেই অজ্ঞান ডাক্তার ছাড়াই হচ্ছে সিজারিয়ান অপারেশনসহ নানা অপারেশন। ফলে কিছু দিন যেতে না যেতেই রোগীরা কোমরে যন্ত্রনা নিয়ে নতুন রোগীতে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে রোগির অবস্থা মারাত্মক মৃৃৃৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়লে রোগিকে দেওয়া হয় যশোর-খুলনা অথবা রাজধানীতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ।
ফলে রোগি হাসপাতাল ত্যাগ করলে পরবর্তীতে নানান জটিলতায় ভূগে মৃৃৃত্যুর মুখে পতিত হন। এ ছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, অভয়নগরে শিশু বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার নেই, অথচ নবজাতক শিশুর চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় অনভিজ্ঞ ওয়ার্ড বয় ও সেবিকাদ্বারা। অক্সিজেন লাগিয়ে কোনমতে তিন চারদিন পার করতে পারলেই বাণিজ্য হয় রমরমা। পরবর্তীতে অক্সিজেন ও বেড ভাড়াবাবদ ধরিয়ে দেওয়া হয় মোটা অংকের ভাউচার। এতে করে সেবা নিতে এসে প্রতারিত হচ্ছে অসহায় হত দরিদ্রসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এভাবে যেন সাধারণ মানুষ সেবা নিতে এসে প্রতারিত না হয় সে ব্যাপারে তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য যশোর জেলা সিভিল সার্জনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন ভূক্তভোগী সাধারণ রোগিরা।
এদিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব অবৈধ এবং অনিবন্ধিত হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার পর অভয়নগরে একটি লোক দেখানো অভিযানও চোখে পড়েনি বলে সাধারণ মানুষের ক্ষেদোক্তি। তাদের অভিযোগ সম্প্রতি সিভিল সার্জন অভয়নগরে আসলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে আলাপচারিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। এনিয়ে যেন সাধারণ মানুষের মন্তব্যের শেষ নেই। আর সব দায় যেন সাংবাদিকদের -এমনটাই আশা ওইসব সম্মানিত সাধারণ মানুষের। আর তাদের কথাগুলি এভাবেই তুলে ধরা হলো, যদি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের একটুও টনক নড়ে। তাদের অভিযোগের যেন শেষ নেই- তারা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার পরও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণেই স্বাস্থ্যবিভাগের এমন করুণ পরিণতি।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ওয়াহেদুজ্জামান এর ০১৭১১২৬৫১৩৫ মুঠোফোনে বার বার ফোন করলেও ফোনটি রিসিভ করেননি। এব্যাপারে যশোরের সিভিলসার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, অভয়নগরে অনেকগুলি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক রয়েছে যাদের অনেকের নিবন্ধন নাই, আবার অনেকের নিবন্ধনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েগেছে। তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করার কথা কিন্তু কেন এতদিনে অভিযান পরিচালনা করা হয়নি সেটা আমি এই মুহুর্তে বলতে পারছিনা আগামী কাল (আজ) খোজ নিয়ে আমি অবশ্যই আপনাকে জানাব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গত তিনমাস আগে আমি অভিযান পরিচালনা করে আসছি এবং দুইটা বন্ধ ঘোষনা করেছিলাম তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারই দায়িত্ব তিনি যাকে নিয়ে ইচ্ছা অভিযান পরিচালনা করতে পারেন