নওয়াপাড়া ডেস্ক
শিল্প বানিজ্য ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়ার একটি স্বনামধণ্য বিদ্যাপিট হিসেবে উল্লেখযোগ্য নওয়াপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রতিবছরই এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করে। তবে বিগত কয়েক বছর সাফল্যের এ ধারায় ভাটা পড়েছে। এ নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। সম্প্রতি আবারো নওয়াপাড়ার টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে এ বিদ্যালয়টি।
র্যাকডে’র কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় টনক নড়ে নওয়াপাড়াবাসীর। চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল। সন্তানদের ভাবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার ভাজ পড়ে কপালে। অভিভাবকরা অভিমত ব্যাক্ত করছেন বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়। এর কারণ অত্র বিদ্যালয়ের ২০২২ সালের বিদায়ী ছাত্র-ছাত্রীদের জঅএ উঅণ উদযাপন। অত্র বিদ্যালয়ের ২০২২ সালের বিদায়ী ছাত্র-ছাত্রীরা বেহায়াপনা, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, টি-শার্টে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য লেখা, রঙ্গের হলি খেলা ইত্যাদি করে জঅএ উঅণ উদযাপন করে। যা পথচারী ও এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষ অত্যন্ত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। ফেসবুক পোস্টের পর বিষয়টি সকলের নজরে আসে। আর সেখানে সচেতন মহল, অভিভাবক, সাবেক শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ওই স্ট্যাটাসে কমেন্ট করতে থাকেন- এসময় বিষয়টি তুলে ধরার জন্য তাকে অনেকে ধন্যবাদও জানান।
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে নিচে এস এম ওলিয়ার রহমানের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো- এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা শেষের পর দিন গত ২৪ জুন নওয়াপাড়ার একটি স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীদের জঅএ উঅণ নামে যে বেহায়াপনা, উচ্ছৃংখল আচরণ, টি-শার্টে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য লেখা, রঙ্গের হলি খেলা, পথচারী এবং এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষ অত্যন্ত বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। কোথায় যাচ্ছি আমরা? ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কেমন পরিবেশ রেখে যাচ্ছি? গত বৎসর সমস্ত দেশব্যাপী এস এস সি পরীক্ষার্থীদের এ ধরনের আচারণের জন্য সমালোচনার ঝড় উঠে। সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের অদূরদর্শিতা এবং নির্লিপ্ততার কারনে শিক্ষকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি-”।
এই পোস্টের অসংখ্য মন্তব্য থেকে কিছু মন্তব্য নিচে হুবহু দেয়া হলো- গধুযধৎ ওংষধস-এটা খুবই দুঃখ জনক ২০০৫ সালের এমন একটা দিনে আমাকে যে একটা পিটানি দিয়েছিলেন স্যার যার জন্যেই আজ নিজেকে মনে হয় একটা ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ স্যার অনেক ভালো আছি, এসবই আপনাদের শাসনের ফসল আমি ও আমার পরিবার ভোগ করছি। অনেক অনেক দোয়া ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। গড়ষষধয গড়যধসসধফ ওৎভধহ- যে বিদ্যাপীঠের দেয়াল লিখনী গুলো পর্যন্ত সঠিক কিনা তা যাচাই করণের প্রয়োজন হয় না, যেখানে শুধু পুঁথিগত বিদ্যা গলধকরণেই ব্যাস্ত থাকা হয়, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারটা ও স্টোররুমে পরে থাকে। সেখানে এসব সময়ের দাবি মাত্র। ঋড়ুঁরধ জধযসধহ উরঢ়ধ- এটা কি আমাদের মডেল স্কুল? কি ভাবে সম্ভব? এটার সম্পূর্ণ দায়ভার বর্তমান প্রধান শিক্ষক এবং পরিচালনা কমিটির। আমাদের সময় একই ক্লাস এর ছেলে মেয়েরা কথা বলতেও ভয় পেতাম। শিক্ষক এর চোখের দিকে তাকিয়ে মাথা উচুঁ করে কথা বলিনি কখনও। স্যাররা কতো ভালোবাসতেন। এই ভয় স্যারদের প্রতি শ্রদ্ধার, ভালোবাসার। আমার বাচ্চাদের আমি ওলিয়ার স্যার, অশোক স্যার, ফরিদ স্যার, মিজান স্যার, রশিদ স্যারদের গল্প বলি নাম গুলো বলতেই শ্রদ্ধাই চোখে পানি চলে আসে। আমাদের সময় শিক্ষক আর ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে শাসন, ভালোবাসা, ভয় এবং শ্রদ্ধার এক সংমিশ্রণ ছিল। ঝড়যবষ অযসবফ- সহমত পোষণ করলাম এই সকল স্যারদের ভয়ে সারারাত জেগে পড়াশুলি ক্লাসে গেলে ভুলে যেতাম। তাদের চোখের দিকে তাকালে বেয়াদবি তো দুরের কথা দুষ্টুমিও মনে মধ্যে যায়গা পেতনা।
আজ সে সব শিক্ষরা যেন ছাত্রদের কাছে অসহায় হয়ে গেছে। হায়রে ডিজিটাল বাংলাদেশ হায়রে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা….ছি….ছি…ছি। গধৎভরধ কযধঃঁহ ঋধৎধয- খুবই দুঃখ জনক। গার্জিয়ান এবং টিচার দুই ই এজন্য দায়ী। নোংরামীর একটা সীমা থাকা দরকার। ঝড়যবষ অযসবফ- ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বিরাট শঙ্কার বিষয়। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। জধলঁ জধহধ- খুবই দুঃখ জনক। একমাত্র গার্ডিয়ান এবং শিক্ষকরাই পারবে জঅএ উঅণ বন্ধ করতে। নোংরামীর একটা সীমা থাকা দরকার। ঐ স্কুলের শিক্ষকরাই দায়ী। ঝধুবফ ঝযড়ুধরন ওসঃরধু- এর জন্য দায়ী আমরা। কারণ যেদিন থেকে স্কুলে বেত নিষিদ্ধ হয়েছে সেদিন থেকেই ছাত্রছাত্রীরা নাগালের বাইরে চলে গেছে। স্কুলের স্যারদের মাইরের ভয়ে কতদিন স্কুল কামাই করেছি তার ঠিক নেই। টিফিনে পালালে পরেরদিন যে মাইর দিতো এটা এখনো মনে আছে। কিছুই বলার নেই কারণ স্কুল জীবনে আমরা যে শিক্ষা পেয়েছি সেগুলো এখনো মেনে চলি। আমাদের স্যারদের দেখলে আমারা এখনো আগের মতোই সম্মান করি। অথচ এখানে যে ছবিগুলো দেখলাম তারপর আর কিছু বলার নেই। সম্মানতো দূরের কথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বদনাম হতে পারে এগুলো তাদের মাথায় নেই।
এব্যাপারে নওয়াপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা হঠাৎ স্কুলে এসে সব জড়ো হতে থাকে, তার পর তাদের কর্মকান্ড দেখে তাদেরকে আমরা বাইরে বের করে দি, পরে কি করেছে তা আর আমরা বলতে পারবনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যা অবশ্য আমাদের সামনে থাকলে তারা হয়তো এমনটা করতে পারতনা, বাইরে বের করে দেয়া আরও বেশি ভুল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এর আগে স্কুলের পরিবেশটা অনেক ভালো ছিল কিন্তু এখন যেন কেমন হয়ে গেছে, সব কিছু আগের মত ঠিকঠাক থাকছেনা। তবে আমি একটি মিটিং কল করে সকলকে নিয়ে এবিষয়ের একটা সমাধান করব এবং আগামীতে যেন আর এধরনের কর্মকান্ড করতে না পারে তার ব্যবস্থা করব