এস.এম মামুন শিকদার
খুলনার অতি প্রাচীন বাজার দৌলতপুর। স্থানীয় অঞ্চল সহ জেলা শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের আগমনে সর্বক্ষন জমজমাট ভৈরব নদীর তীরবর্তী এই বাজারটি। যে কারণে এই বাজার আর নদকে ঘীরে বহু পরিবার আর পরিজনের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে। এই নদী বয়েই সকাল হতে না হতে দূর-দুরন্ত হতে বহু ব্যবসায়ী বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আসে এই বাজারে বিক্রির উদ্দেশে। দীর্ঘদিন নদীর তীববর্তী ব্যবসায়ীরা চরম উৎকষ্টা আর ভীতিকে দিন খাটিয়েছে ভৈরবের হিংসাত্বক ভাঙ্গনের থাবায়। বহু সংখ্যক ব্যবসায়ীদের শত শত স্থাপনা বিলীন হয়েছে এই নদে। নদী ভাঙ্গনের পর এখন নতুন করে আরেক দূর্ভোগ বেড়েছে, যা বাজারের নির্গত নিক্ষিপÍ বর্জ্য। যার শিকার ভৈরব নদ। নির্বিচারে ভৈরব নদ দূষনের ফলে জীব-বৈচিত্র হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে। ক্রমশ অবহেলার আর দায়িত্বহীনতা কারণে ক্রমশ বেড়েই চলেছে ভৈরব নদের দূষণ। এ ব্যাপারে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে দূষণ রোধে ব্যবস্থা গ্রহনের গৃহিত পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য বলা হলেও, মেলেনি সুফল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে নেমে ব্যবসায়ী সহ সাধারণ মানুষ গোসল করছে তার পাশ থেকে ভেসে যাচ্ছে পরিত্যক্ত মরা মুরগী, নাড়ি-ভুড়ি আর শত শত পাখনা। নদীতে নামা সাধারন মানুষ আর ব্যবসায়ী নিরুপায় হয়ে হাত দিয়ে এ সকল পরিত্যক্ত নোংরা বর্জ্য ছড়িয়ে পুর্নরায় পানিতে গোসলে লিপ্ত হচ্ছেন। এমন চিত্র কেবল একদিনের নয়, বরং নিত্যনৈমিত্তিক দিনের। বাজারের মুরগী ব্যবসার সাথে জড়িত অসচেতন ব্যবসায়ীরা সমানতালে নির্বিচারে দূষিত করে চলেছে প্রাকৃতির সেরা দান এই ভৈরব নদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল হতে শুরু হয় মুরগী বাজারে বেচাবিক্রি। মুরগী ব্যবসায়ীরা সকাল, দুপুর ও রাতে নির্বিচারে মুরগীর উৎশিষ্ট অংশ নাড়ি-ভূড়ি, পাখনা, রক্ত, বিষ্ঠা, মরা মুরগী সহ অন্যান্য উৎশিষ্ট নোরাং বর্জ্য সরসরি নদীতে নিক্ষেপ করে। দৌলতপুর পেয়াজঘাটের একাধিক শ্রমিকগন জানান, প্রতিদিনই মুরগী বাজার হতে ঝাঁপি ভরে মুরগীর ময়লা এনে সরাসরি নদীতে ফেলে। প্রতিদিনই ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন মানুষ গোসল করতে নদীতে নামে। বিশেষ করে জুম্মার দিনে ব্যবসায়ীরা তাড়াহুড়ো করে গোসল করে নামাজ পড়তে যায়। কিন্তু ঘাটে মুরগীর ময়লাতে অনেকের দূর্ভোগ পোহাতে হয়। এটা ঠিক না, বন্ধ করা উচিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ী জানান, আমরা নিজেরাই সচেতন না। কারন সচেতন মানুষ যারা তারা কখনো যেখানে চলতে হবে, বসতে হবে, গোসল করতে হবে তা নোংরা করতে পারে না। বর্তমানে প্রতিদিনই মুরগী বাজার হতে উৎশিষ্ট বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলছে। যেহেতু যে স্থানে ফেলা হচ্ছে তার বিপরীতে আমাদের ব্যবসা। নাকে প্রচুর দুর্গন্ধ আসে। একইতো করোনা অন্যদিকে এই নোরাং বর্জ্য বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুকি। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত। সূধী মহল সূত্রে জানা যায়, নদী সংরক্ষনে নির্দিষ্ট আইন আছে। আইনগতভাবে নদীর মধ্যে কোন বর্জ্য ফেলা অপরাধ। কাশিপুর এলাকায় পেট্রোল ডামিং স্টেশনের লিকেজ জ্বালানী তেল, ক্যাবল ফ্যাক্টরীর বর্জ্য ও বিভিন্ন জুট মিলের ডাস্ট নদীতে পড়ে। এ সকল প্রতিষ্ঠান কোনো আইন মেনে কার্য পরিচালনা করা না। কেসিসি, বিআইডাব্লি¦উটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষতে নদী দূষনে রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করতে। খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যে কোন দূষণের বিপক্ষেই পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর নদী দূষণের ব্যাপারে তো বলার অপেক্ষা রাখেনা। মূলত নদী ভঙ্গন বা ভঙ্গন রক্ষার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করাই আমাদের দাপ্তরিক প্রধান কাজ, তথাপী দূষণ রক্ষায় কোনো সংশ্লিষ্ট দপ্তর সহতায় চাইলে তার আশ্বাস প্রদান করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কেসিসি’র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভৈরবের দূষন রোধে কয়েক দফায় তারা সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর সহ কনঞ্জারভেন্সী বিভাগকে নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপের ব্যপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়ে। তারপরও যেহেতু বিষয়টি বন্ধে কোন ফলপ্রসূ সুফল মেলেনি। সেহেতু যে বা যারা নদীতে বিভিন্ন বর্জ্য নিক্ষেপ করছেন তাদের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
দৌলতপুর বাজারের বর্জ্য দূষণের শিকার ভৈরব নদ
Comment using Facebook