এস এম মামুন শিকদার, দৌলতপুর (খুলনা)
খুলনা মহানগরীর ঐতিহ্যবাহি বিএল কলেজ ও দৌলতপুর বাজার সংলগ্ন ভৈরব নদে দেওয়া শহর রক্ষা বাঁধের কংক্রীটের পাইলগুলো নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার কারনে দৌলতপুরের পেঁয়াজ ঘাট ও বান্ধা ঘাট ভেঙ্গে চুরে অস্তীত্ব হারিয়ে ফেলছে। যে কারনে নদীর পাশে গড়ে ওঠা দোকানগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
দোকানীরা বলেন আমারা সব সময় আতংকের মুখে থাকি কখন যেন আমাদের দোকানপাট নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। জরুরী ভিত্তিতে নতুন করে শহর রক্ষা বাঁধ ও ঘাট সংস্কার করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
দৌলতপুরে বান্ধাঘাট ও পেঁয়াজঘাট দিয়ে গাজিরহাট, পেরুলী, কালিয়া ও বড়দিয়ার অঞ্চলের মানুষ যাতায়াত করতো এবং দৌলতপুর বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করে তাদের বাজারে বিক্রি করতো যার কারনে এই ঘাটগুলো অনেক আগের থেকে ব্যাবহার হয়ে আসছে।
বান্ধাঘাট সম্পূর্ন বিলিন হয়ে গেলে ও পেঁয়াজঘাট বাঁশ খুঁটি দিয়ে প্রতিনিয়ত মেরামত করে কোন রকম মালা মাল উঠানো নামানোর কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রতিনিয়ত শ্রমিক ও ব্যাবসায়িরা ঝুঁকির মধ্য রয়েছে যে কোন সময় বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এই ঘাট দুটো ব্যবহার না হওয়ায় যেন ময়লা অবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। যার কারনে নদী ও পরিবেশ দুষণও বাড়ছে। এই ঘাট দিয়ে মাল মাল উঠানামা কাজে থাকা শ্রমিকরা বলেন এই ঘাট দিয়ে মাল উঠা নামার কাজ করতে গিয়ে আমরা প্রায়ই দূর্ঘটনার শিকার হই।
আমাদের কয়েক জন শ্রমিকের হাত এবং পা ভেঙ্গে গেছে। যার কারনে তাদের পরিবার ও সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এই বিষয়ে ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মাদ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জার্মান সরকারের আর্থিক সহায়তায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নেওয়া পুকুর সংরক্ষন কর্মসুচির আওতায় দৌতপুরের শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ প্রস্তাবটি প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই প্রস্তাবটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) আকারে এক সপ্তাহের মধ্য ঢাকায় পাঠানো হবে বলে কেসিসির প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার জানিয়েছেন।
প্রায় ৫০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের আওয়ায় নগরীর ১৪টি ওয়ার্ডের ২৩টি পুকুর সংরক্ষন ছাড়া কয়েকটি খাল ও ড্রেন, উন্ননের পরিকল্পনা রয়েছে। অবশ্য ২৩টি পুকুর সংরক্ষন ছাড়াও দৌলতপুরের শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, রেলিগেট শ্মশান বাঁধ, দেয়ানা চৌধুরী খাল সহ নানা উন্নয়ন মূলক কাজ রয়েছে।
জার্মান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে গৃহিত প্রকল্পটি চলবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত।
তিনি বলেন, দৌলতপুরে বিএল কলেজর শেষ সিমানা থেকে শুরু করে রেলিগেটের শ্বশান ঘাট পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ, ওয়াকওয়ে, বসার জায়গাসহ গাছপালা রোপন করে দৃষ্টি নন্দন পরিবেশ তৈরী করা হবে। এছাড়া তিনি বলেন সিটি কর্পোরেশনের ৩২টি পুকুরের মধ্য ২৩টি পুকুরের অনুমোদন হয়েছে বাকি ৯টি পুকুরের মধ্য আমার এলাকার দত্তবাড়ি পুকুরটি বাদ পড়েছে। এই পুকুরটি ২৯ শতক জমির উপর অবস্থিত এটি সরকারি সম্পত্তি (ডিসিআর সম্পত্তি) এই পুকুরটি যদি পুনঃখনন করা যায় তাহলে দত্তবাড়ি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষের পানি সমস্যার সমাধানে অনেক উপকার হবে, পানি রক্ষণাগার, প্রাকৃতিক জলাশয় ও জলাধার না থাকার কারনে প্রাকৃতিকভাবে পানির লেয়ার অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে যার কারনে দত্তবাড়ী এলাকার অধিকাংশ টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। এই জন্য এলাকার মানুষের পানির সমস্যার চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। পানি না পাওয়ায় তারা কষ্ট পাচ্ছে।
ইতোমধ্যে তিনি খুলনা ওয়াসার এমডি, ডিএমডি ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছেন এবং বলেছেন রমজান মাসে এই এলাকার মানুষ যাতে পানিতে কষ্ট না পায় সেই জন্য ১০০০ লিটারের একটি ট্যাঙ্কি সহ প্রতিদিন পানি দেওয়ার কথা বললেও আজও পর্যন্ত এর কোন সুরাহা হয়নি। অজ্ঞাত কারনে খুলনা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নিরব ভুমিকা পালন করছে। তিনি ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শহর রক্ষা বাঁধটি পুনঃনির্মান হলে বি.এল কলেজসহ দৌলতপুর বাজার ও গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনা রক্ষা পাবে বলে দৌলতপুর বাজার উন্নয়ন সংস্থা ও এলাকাবাসী আশাবাদ ব্যাক্ত করেন এবং দীর্ঘদিন পরে হলেও শহর রক্ষা বাঁধ হতে যাচ্ছে জেনে প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনাসহ নগর পিতা আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক কে ধন্যবাদ জানান।