মেহেদী হাসান ইরান
যশোরের অভয়নগরে এসএসসির ফরম পূরণে চলছে অতিরিক্ত অর্থ আদায়। এতে বিপাকে পড়ছেন অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তাদের মাঝে। তাদের অভিযোগ, করোনা পরবর্তী সময়ে মাত্র ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছি, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি এরপর সামনে ঈদ। জমি-জমা পানির নীচে, ঘরে খাবার নেই। এত কিছু একসাথে সামাল দিতে নাভিশ্বাস অবস্থা। এরমধ্যে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তার উপর সরকার নির্ধারিত ফরম পূরনের টাকা ধার দেনা করে যোগাড় করতে হচ্ছে, তার উপর যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বেশি টাকা নেয় তাহলে আমারা যাব কোথায়? করোনায় আমাদের অনেকের আয় বন্ধ করে ঘরে বসে দেনা দায়ীক হয়ে গেছি। আর শিক্ষকদেরতো কোন মাস বেতন বন্ধ করেনি সরকার, তাহলে তাদের চাহিদা কি মিটবেনা। ক্ষোভের সাথে অভিভাবকরা আরও জানায়, শিক্ষকরা বলছে মাত্র ২-৩শ’ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে, এটা তাদের কাছে মাত্র হলেও আমাদের কাছে কত কষ্টকর তা কি তারা বোঝে? এমন অভিযোগ করছিলেন অনেক বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা। খোজ নিয়ে জানা যায়, অভয়নগরের অধিকাংশ মাধ্যমিক স্কুলগুলো এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এবছর বোর্ডে মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় কেন্দ্র ফি সহ ১৪শ’ ৯৫টাকা ও বিজ্ঞান শাখায় ১৬শ’ ১৫টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ উপজেলার চলিশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মানবিক শাখায় ২৫শ’টাকা আদায় করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জানান, আমার বাবা-মা শ্রমিকের কাজ করেন। তারপরও স্কুল আমাদের কাছ থেকে ২৫শ’ টাকা আদায় করছে। আরেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৩শ’ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে গ্রুপ অনুমোদনের টাকাটা এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়। যে কারণে ১৭শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতনগুলি আদায় করা হচ্ছে। পায়রাহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আঃ হামিদ টি.এস মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও মশিয়াহাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় ২৫শ’ টাকা ও বিজ্ঞান শাখায় ২৬শ’ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে ওই স্কুলের অভিভাব-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে আমাদের বিদ্যালয়ে ২১শ’ থেকে ২২শ’ টাকা ফি নির্ধারণ করেছে। এব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঠাকুর দাশ মন্ডল জানান, বোর্ড ফিসহ ২৪ মাসের বেতন ও সেশন চার্জ একসাথে নেয়া হচ্ছে। অপর শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ থাকে তাছাড়া বেতনতো কেউ দেয়না ওই এইভাবে কিছু বেশি টাকা নেয়া হয়। এছাড়া সুন্দলী এস.টি.সি স্কুল এন্ড কলেজ, আড়পাড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়েও একইভাবে অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছে। এব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম জানান, আগামী কাল (আজ) রবিবার বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবো। এব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি, তবে আমি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিষয়টি খোজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলব। এব্যাপারে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, যদি কোন প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকে তাহলে অবশ্যই ঠিক কাজ করেনি। কোন ভাবেই সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করা যাবেনা, আমি অবশ্যই ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে খোজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।