মোঃ মোজাহিদুর রহমান, ফকিরহাট (বাগেরহাট)
বাগেরহাটের ফকিরহাটের লখপুর ইউনিয়নের খাজুরা ৬ গেট ও ভবনা’র খড়িবুনিয়ার ২ গেটের অধিকাংশ পাট দীর্ঘদিনেও সংস্কার করা হয়নি। যে কারণে গেট গুলি ফাঁকা থাকায় পূর্ণিমার জোয়ারে লবন পানি উঠে তিন উপজেলার ১০টি বিলে রোপন করা বোরো ধানের ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
এতে শতশত একর জমিতে রোপন করা উঠতি বোরো ধানের আবাদ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় ধান ও মৎস্য চাষিরা ৬ গেট ও ২ গেটসহ তার পাট গুলি মেরামত করার জোর দাবি জানালেও তাতে কেউ কর্ণপাত করছে না। যে কারনে প্রতি পূর্ণিমা ও অমাবশ্যায় জোয়ারের লবন পানি উঠে চাষিরা চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। অতিদ্রুত এই দুইটি গেটসহ তার পাট মেরামত করা না হলে কৃষককুল চরম ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
জানা যায়, রুপসার ভৈরব নদী হতে একটি ছোট্ট খাল খাজুরা ৬ গেটের উপর দিয়ে মিনেদার বিল, খড়িবুনিয়া বিল, মাসকাটা বিল, চাকুলী বিল, শ্যামগঞ্জ বিল, ঝিনাইখালী বিল, কুমারখালী বিল ও বিঘা বিলের মধ্যদিয়ে একদিকে শ্যামবাগাত অন্যদিকে বাইনতলা গৌরম্বা এলাকায় গিয়ে মিশেছে। একটি খাল উঠে ভাগে ভাগে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মিশেছে। কিন্তু নদী-খালের প্রবেশ মুখে পানি উন্নয়ন র্বোড খাজুরা ৬ গেট নামক স্থানে একটি গেট নির্মাণ করেন। নির্মাণ করার পর গেট ও তার পাট গুলি ভাল থাকলেও প্রবেল পানি চাপে তা ভেঙ্গে যায়। এর পর ১/২বার পানি উন্নয়ন বোর্ড পাট গুলি মেরামত করলেও তার পরে আর কোন খোঁজ নেয়নী। আর না নেওয়ার কারণে গেটের অধিকাংশ স্থানে ফাঁকা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় জোয়ারের পানি উঠলে তা সরাসরি কৃষকের জমিতে পৌঁছে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে এ ধরনের ঘটনায় কৃষক কখনও ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি বলে সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে জানা যায়। লখপুর ইউনিয়নের জাড়িয়া মাইট কুমরা গ্রামের কৃষক ও মৎস্য চাষি মোঃ রফিকুল ইসলাম, মুজাহিদ শেখ, আব্দুর রশিদ, মুকাররাম শেখ, খোকন শেখ ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ জালাল উদ্দিন শেখ জানান, চলতি পূর্ণিমার গোনে জোয়ারের লবন পানি উঠতে শুরু করে। এঅবস্থা ক্ষেতের উঠতি ধান বাচাবার জন্য তিনি সহ অন্যান্য কৃষকরা দিনে ও রাতে স্যালো মেশিন বসিয়ে তা দিয়ে পানি সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু জোয়ারের লবন পানি একবার ধানের ক্ষেতে প্রবেশ করলে ধান বাচানো যায় না। লবন পানিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। গোলাম রসুল, আলমগীর হোসেন, মহব্বত আলী, আহম্মদ শেখ, হাসান আলী ও রাজু মল্লিকসহ একাধিক চাষিরা বলেন, ৪/৫ দিন আগ হতে তাদের ধানের ক্ষেতে জোয়ারের লবন পানি উঠতে শুরু করেছে। লবন পানিতে তাদের উঠতি ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ওয়ার্ড আ’লীগ নেতা মোঃ আলতাপ হোসেন বলেন, খাজুরা ৬ গেট ও ভবনার খড়িবুনিয়ার ২ গেট ও তার পাট গুলি মেরামত করার জন্য আমিসহ এলাকাবাসী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-কে বারবার অবহিত করেছি। কিন্তু তিনি সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ শাহীন ফারাজী বলেন, জোয়ারের লবন পানি জোয়ারের সময় প্রবল বেগে উপরের দিকে ধেয়ে আসছে। পানির চাপে ভেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। জোয়ারের লবন পানি উঠা বন্ধ করতে হলে ২টি গেটের পাট মজবুত করে নির্মাণ করতে হবে। তা করা না হলে জোয়ারের লবন পানি উঠানো বন্ধ করা যাবে না। লখপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অভিজিৎ গাউন ও সুমন বাকচি বলেন, আমরা বেশ কয়েকটি বিলে সরেজমিন তদন্ত করে দেখেছি যে উঠতি ধানের ক্ষেতে লবন পানি উঠে কৃষকরা সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। লবন পানি উঠা বন্ধ করতে না পারলে কৃষকরা ব্যপক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষ্ণা সরকার এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, আমি খবর পেয়ে আমার উপ-সহকারীদের ঘটনা স্থলে পাঠিয়েছি। তারা বিষয়টি দেখছে, এবং কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন। এ বিষয়ে লখপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম,ডি সেলিম রেজা’র সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, আমি ৬ গেটের পাট মেরামতের বিষয়ে আমার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তাঁরা আমাকে বলেছেন, ৬ গেট পূনঃ নির্মানের জন্য একটি টেন্ডার হয়েছে। ঠিকাদার অচিরেই কাজ শুরু করবেন বলেও তাঁরা আমাকে জানিয়েছেন।