যশোরে ৫৫ লাখের পর এবার ৭১ লাখ টাকার কাঠ আত্মসাত

0
170

যশোর অফিস

আলোচিত সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নুসরাত এন্টার প্রাইজের মালিক সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে এবার প্রায় ৭১ লাখ টাকার কাঠ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এর আগে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ৫৫ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগ উঠে।

আদালতের আদেশে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকালে যশোর কোতয়ালি থানার এসআই আনছারুল হক উভয়পক্ষকে স্ব স্ব অবস্থানে থেকে শান্তি-শৃংঙ্খলা বজায় রাখতে নোটিশ দিয়েছেন। আদেশ পত্রে আগামী ২১ আগস্ট উভয়পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে সশরীরে আদালতে উপস্থিত হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। এর আগে সোমবার (১৮ এপ্রিল) অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কাঠ আত্মসাতের বিষয়ে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাকিব হাসানের পক্ষে আজাহারুল ইসলাম মিথুন।

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দেয় আদালত। ভুক্তভোগী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, যশোর-ঝিনাইদহ সড়ক উন্নয়ন কাজে খাড়া গাছগুলো বিক্রয়ের দরপত্র আহবান করে যশোর জেলা পরিষদ। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে প্রায় ৩ কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যে সড়কের দুই নম্বর লটের ৩০১-৬০০ নম্বর পর্যন্ত গাছ কেনার অনুমতি পান ঠিকাদার সালাউদ্দিন। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরসাত এন্টারপ্রাইজের নামে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী বরাবর ১ কোটি ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫০ টাকার পে-অডার্র জমা দেয়। ১ কোটি ৮২ লাখ টাকার পে-অর্ডার জমা দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাকিব হাসানের পক্ষে আজহারুল ইসলাম মিথুন। এর সাথে তিনি জেলা পরিষদে ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার জামানতও জমা দেন। এছাড়া ৫০শতাংশ ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে নুসরাত এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় রাকিব হোসেন। অথচ ঠিকাদার সালাউদ্দিন পে-অর্ডার ও চুক্তির বিষয়টি গোপন রেখে গাছের দরদাতা হিসেবে এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার কাঠ আত্মসাত করেছেন। ১৮ এপ্রিল বিকেলে সদর উপজেলা চুড়ামনকাঠি এলাকায় ঠিকাদার সালাউদ্দিনের ছোট ভাই রাসেল হোসেন ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে একটি ক্রেন দিয়ে কাঠ তুলে নিয়ে যান। রাত আটটা নাগাদ কাঠ লোডের সময়ও সেখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাকিব হোসেনের মালিকসহ তার লোকজনকে দেখা যায়নি। মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত ৬ ট্রাক (প্রায় ৫৫ লাখ টাকা) ও ইঞ্জিনচালিত ২০ ট্রলি সাইজ কাঠ (প্রায় ১২ লাখ টাকা) ১০ ট্রাক জ্বালানি কাঠ (প্রায় ৪ লাখ টাকা) আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার। অথচ চুক্তির শর্তানুযায়ী সমন্বয় করে উভয় পক্ষের কাঠ ভাগ করে নেয়ার কথা রয়েছে।

কিন্তু ক্ষমতার জোরে রাকিব হাসানকে ভয় দেখিয়ে সালাউদ্দিন কাঠ আত্মসাত করে চলেছেন। জীবনের ভয়ে এখন কাজের সাইডে যেতে পারছে না ভুক্তভোগী ঠিকাদার। এর আগেও চুড়ামনকাটি এলাকা থেকে ৬ ট্রাক কাঠ (প্রায় ৫৫ লাখ টাকা) আত্মসাত করার অভিযোগ উঠে ঠিকাদার সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। ঘটনার সাতদিন পর গত ১২ এপ্রিল মাগুরার শালিখা উপজেলার সীমাখালী বাজারে সেই কাঠগুলোর সন্ধান মেলে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাকিব হাসান সেদিনই গাছ কাটা বন্ধের জন্য মালিকানাধীন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। পাশাপাশি আত্মসাতকৃত বিপুল পরিমাণ কাঠ উদ্ধারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও শালিখা থানায় লিখিত এবং বন বিভাগ মাগুরায় মৌখিক অভিযোগও করেন। এদিকে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঠিকাদার রাকিব হাসান শাওন ও আজাহারুল ইসলাম মিথুন বলেন, চুক্তির শর্তসমূহ ভঙ্গ করে সালাউদ্দিন অবৈধ ভাবে বার বার কাঠ আত্মসাত করছেন। অথচ পুলিশ প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তারা। শুধু ওয়াক অর্ডার নয়; উভয় ঠিকাদারের পে-অর্ডার ও চুক্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে আশাবাদী ভুক্তভোগীরা।

Comment using Facebook