আ: লতিফ মোড়ল, ডুমুরিয়া (খুলনা)
খুলনার ডুমুরিয়ার ধামালিয়া ইউনিয়নের চেঁচুড়ি কে,বি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং চেঁচুড়ি কে,বি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘেঁষে এবং পাড়া মহল্লার মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ মিনি ইটভাটা ও কয়লার কারখানা।
নেই কোন লাইসেন্স, নেই পরিবেশ দপ্তরের কোন ছাড়পত্র, নেই সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তরের অনুমতি। এমন অভিযোগ স্থানীয় সাধারণ মানুষের। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে চলছে রমরমা ভাবে অবৈধ কয়লার কারখানা ও ইটভাটা। আর কাঠ পোড়ানো কালো ধোঁয়ায় সমগ্র এলাকায় পরিবেশে মারাত্বক হুমকির মুখে পড়েছে।
কয়লা তৈরি ও ইট পোড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে নারিকেল, খেজুর কাঠসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ। জানাগেছে, ডুমুরিয়া, অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে ভাটা চত্ত্বরে জড়ো করে রাখা হচ্ছে নারকেল ও খেজুর গাছের গুড়োসহ নানা শ্রেণির বনজ বৃক্ষের কাঠের গুড়ো।
আর বন উজাড় করে অসাধু এ সকল ব্যবসায়ি তারা রমরমাভাবে অব্যহত রেখেছেন অবৈধ ইটভাটার সকল কার্যক্রম। এর ফলে এদিকে যেমন হচ্ছে উজাড় বন, অপরদিকে পরিবেশ রয়েছে মারাত্বক হুমকির মুখে। স্থানীয় সুত্রে ও সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ফুলতলা উপজেলার সিদ্দিপাশা আমতলা এলাকার বাসিন্দা জৈনক তছলিম মিয়া ও বাগেরহাটের মোংলা থানাধীন আবুল কালাম ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নের চেঁচুড়ি গ্রামের নির্জন বাগানের মধ্যে জমি লীজ নিয়ে অবৈধভাবে কয়লার কারখানা তৈরি করেছেন। সেখানে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে বাজারজাত করে আসছে। আর কয়লা উৎপাদনে ব্যাবহার করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কাঠ।
বৈধ কোন কাগজ পত্র ছাড়াই রমরমাভাবে অবৈধ ভাবে চলছে তাদের কয়লার কারখানা। অপর দিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি ব্যাতিরেকে ২০টির অধিক অবৈধ মিনি ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে যাকে বলা হয় ইটের পাঁজা। ওই সকল ইট ভাটায় বিপুল পরিমাণ কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। ডুমুরিয়া ধামালিয়া ইউনিয়নের চেঁচুড়ি এলাকার অসাধু ব্যাবসায়ি তারা অধিক মুনফা লাভের আশায় বসত ঘরবাড়ি ও একটি প্রাইমারি স্কুল এবং একটি হাইস্কুলসহ দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিকটে পাল্লা দিয়ে ইট তৈরি ও পোড়ানোর কাজ চলিয়ে যাচ্ছেন। কয়লার বিপরীতে ইট পোড়াতে ব্যাবহার করা হচ্ছে নারকেল ও খেজুর কাঠসহ নানা শ্রেনির বনজ বৃক্ষের কাঠ।
আর কাঠ পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় জনবসতি ওই এলাকার পরিবেশ রয়েছে মারাত্বক হুমকির মুখে। জানাগেছে, চেঁচুড়ি এলাকার মিলন পাল, শুভংকর পাল, নকুল পাল, অসীত পাল, বাসুদেব পাল, মোহন পাল, শেখর চন্দ্র পাল, সরুকোদা পাল, ভোলা পাল, অসিম পাল, সুবল পাল, ভাস্কার পাল, তাপস পাল, শ্বসধর পাল, গৌতম পাল, পঙ্কজ পাল, সন্তোষ পাল ও সুবোল পালসহ বিশ জনের অধিক অবৈধ ভাবে ইট ভাটা গড়ে তুলেছেন। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় কবলে দুই স্কুলের অধ্যায়নরত প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী, শিক্ষক কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষের সর্দি কাশি হাপানী শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে নানা শংঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী বলেন, বেই-আইনীভাবে ফুলতলা এলাকার জনৈক তছমিল মিয়া অবৈধ কয়লার কারখানা গড়ে তুলেছেন। দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ সকল ব্যাক্তি তারা কাঠ পুড়িয়ে ইটভাটা ও কয়লার কারখানা পরিচালনা করে আসছে। ফলে কাঠ পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় লোকালয়ের সাধারণ মানুষ রয়েছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখতে এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ধামালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সচিব আব্দুল হালিম শিকদার বলেন, ওই সকল ভাটার মালিক গন কোন দিন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন ট্রেড লাইসেন্স বা পরিবেশ ছাড় পত্র গ্রহন করেন নাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইটভাটা মালিক নকুল পাল, মহাদেব পাল বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষ হতে মৃতশিল্প (কলসি, হাড়ি, পাতিলসহ অন্যান তৈজষ পত্র তৈরী করে বিক্রি করা আমাদের একমাত্র পেশা। কিন্ত বিগত এক যুগ ধরে প্লাস্টিক, এ্যালুমিনিয়াম বা অন্যান তৈজষপত্র বাজার দখল করে নেয়ায় আমাদের পৈত্রিক পেশা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই আমরা জীবন জীবিকার স্বার্থে ইট পোড়ানো কাজ করে যাচ্ছি।
এ প্রসংগে জানতে চাইলে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেন, ইট ভাটা ও কয়লার কারখানায় কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ বে-আইনি। অবৈধভাবে পরিচালিত ইট ভাটা ও কয়লার কারখানায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহনে অতি শীঘ্রই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।