শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের ভাগাভাগিতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

0
181

আনিসুজ্জামান সুমন, শ্যামনগর

শ্যামনগর ইউএনও এসিল্যান্ড ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারা টাকার ভাগাভাগিতে শ্যামনগরে ডেজার মেশিনে ও বোরিং করে নদীভাঙ্গন এবং জনবসতী এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যহত রেখেছে। মুন্সিগঞ্জ ভূমি কর্মকর্তা আয়নুল হক টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা, শ্যামনগর এসিল্যান্ড ও ইউএনও র মুঠোফোনে বার বার ফোন দিলে রিসিভ না করায় ভাষ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আবাদ চন্ডিপুর খাসকাটা ক্লাব থেকে বাছের হাজীর ঘেরের বাসা পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তায় ঘনবসতি এলাকা থেকে বোরিং করে শ্যামনগরের মামুন নামে এক ব্যক্তি খাগড়াঘাট গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে নুর ইসলাম বালু উত্তোলন করছে। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চুনকুড়ি থেকে সিংহড়তলী ৩ কিলোমিটার রাস্তায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যহত রয়েছে। এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমিকে মুঠোফোনে বার বার কথা বলে বা শ্যামনগর প্রেসক্লাবের কয়েকজন সাংবাদিক ইউএনওর সাথে তার অফিসে দেখা করে ৪/৫ টি দৈনিক পেপার কাটিং দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার কথা বললেও বন্ধ হয়নি। তবে সাংবাদিকদের মন বুঝানোর মতো মুন্সিগঞ্জ ভূমি কর্মকর্তা ও বুড়িগোয়ালিনী ভূমি কর্মকর্তার পিয়ন ঘটনাস্থলে গেলে বালু উত্তোলন কিছু সময় বন্ধ রেখে আবার মেশিন চালু করেন। নাম প্রকাশ না করার স্বত্বে এক বালু উত্তোলনকারী জানান, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে এসিল্যান্ড ও ইউএনও স্যারকে টাকা দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। মহামান্য হাইকোর্ট এর ১৬৩৯২/২০১৭ ইং নং রীট পিটিশন আদেশ অমান্য করে শ্যামনগরে ড্রেজার মেশিনে ও বোরিং করে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে। আর উপজেলা প্রশাসন মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে নিরব ভূমিকায়। এমন অবস্থায় চলতে থাকলে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। ১৪২৭-২৮ অর্থবছরে শ্যামনগর উপজেলায় কোন বালু মহল ঘোষনা না হলেও শ্যামনগরে নদী ভাঙ্গন এলাকা সহ ঘনবসতি লোকালয়ে ড্রেজার মেশিনে বা বোরিং করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যহত আছে। রীট পিটিশনের আদেশ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সাতক্ষীরা রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর গত ১৮/০১/২০১৮ তারিখে ৭৮নং স্মারকে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পত্র প্রেরণ করেন। তিনি কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় সুপ্রীম কোটের বিজ্ঞ কৌশলী এ্যাড: হুমায়ন কবীর গত ১৯/১১/২০১৮ তারিখে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাওয়ার পর গত ০৩/১২/২০১৮ ইং তারিখে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ১৯৭৯ নং স্মারকে রীট পিটিশনের উদ্ধৃতি দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আরও একটি পত্র প্রেরণ করেন। অথচ এ সমস্ত নির্দেশ এর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যহত রেখেছে। শ্যামনগরের কতিপয় সাংবাদকর্মী সরেজমিনে দেখে এবং ছবি ক্যামেরা বন্দি ভিডিও ফুটেজ করে বিষয়টি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিহিত করা হয়। বিষয়টি পুনরায় উপজেলা প্রশাসনকে বলা হলেও শুধু মাত্র ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে মিথ্যা বুলি আওড়িয়ে যাচ্ছেন। নওয়াবেঁকী বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে মুন্সিগঞ্জ বাস ষ্ট্যান্ডের উত্তর পার্শ্বে ও ভেটখালী ব্রীজের পার্শ্বে অবৈধ ভাবে বালুর স্তুপ করে ব্যবসা করছে কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আশাশুনি উপজেলার বালু মহল থেকে বালু এনে বিক্রি করছে। প্রকৃত ঘটনা তা নয় কবোতক্ষ নদী ভাঙ্গন এলাকার জেলেখালী ও খোল পেটুয়া নদী থেকে অবৈধ ভাবে ভোররাতে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তেলন করে এ সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করছে। যার প্রমান সম্পত্তি খোলপেটুয়া নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের সময় ভ্রাম্যমান আদালত এক কার্গো মালিক কে ৫০ হাজার টাকা জরিমান করেন। এছাড়া ৬ এপ্রিল বুড়িগোয়ালিনী নৌ থানা পুলিশ গাবুরা চোদ্দরশি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ২টি ট্রলার ও ৬ জনকে আটক করে মামলা দিয়ে জেলা হাজতে প্রেরণ করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বৃহত্তর খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন ৫২ ইউনিয়নকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষনা করেছে। তথ্য অনুযায়ী পরিবেশগত ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে শ্যামনগর উপজেলার উল্লেখযোগ্য গাবুরা পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, মুন্সীগঞ্জ ও কৈখালী ইউনিয়ন। আরো বলা হয়েছে সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেষ্টের বাহিরে চারদিকে ১০ কিলোমিটার বিস্তৃর্ন এলাকায় টেকসই পরিবেশ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন অব্যহত রয়েছে। তথ্যে আরো জানা গেছে ৪/৫টি ছোট কার্গো ও ৮/১০টি ইঞ্চিন চালিত ট্রলার প্রতিনিয়ত গোনমুখে ভোর সকালে খোলপেটুয়ায় ও কবোতক্ষ ভাঙ্গনকৃত এলাকার নদীতে ড্রেজার মেশিনে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে। এছাড়া জনবসতি এলাকা থেকে বোরিং করে ১০/১২ জন মেশিন মালিক উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে। ঐ সমস্ত বালু উত্তোলন কারিরা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময় উপেজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করছে। বিষয়টি সরেজমিনে গোপনে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শ্যামনগরের সুধী মহল জেলা প্রশাসক ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Comment using Facebook