রূসপা (খুলনা) সংবাদদাতা
খুলনার রূপসায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন (বীর নিবাস) নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একারনে মুক্তিযোদ্ধাগন তাদের একমাত্র অভিবাবক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বারবার নির্বাচিত প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছেমতো নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করছে। লিখিত অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধাগন আরো দাবী করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিকট বীরনিবাস নির্মানের দায়ীত্ব না দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে বাড়ী নির্মানের অর্থ মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট হস্তান্তর করলে এই অর্থ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাগন সুন্দর এবং বসবাসযোগ্য বীরনিবাস নির্মান করতে পারবে।
কারণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঘর নির্মানে বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক টাকাও নির্মান কাজে ব্যয় করছেনা এবং যে গৃহ নির্মান করছে তা একেবারেই বসবাসের অযোগ্য। তাছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একাধীক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার থেকে অতিরিক্ত অর্থ দাবী করছে বলে জানাগেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে রূপসা উপজেলায় ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে আবাসন (বীর নিবাস) নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৬৯ লাখ ২৪ হাজার ৫৮৪ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। যার প্রতিটি ঘরের নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ টাকা। দরপত্র আহ্বান করা হলে উম্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচিত হন এস এম এন্টারপ্রাইজ এর সত্ত্বাধীকারি মাসুদুর রহমান।
জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখ কার্যাদেশ পেয়ে ঘরের নির্মান কাজ শুরু করেন ওই ঠিকাদার। কিন্তু ঠিকাদার নির্মাণ কাজের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের সিমেন্ট খোয়া ও স্থানীয় কাদামিশ্রিত বালু ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও নির্মাণ কাজে পরিমান মতো সিমেন্টও ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে জানান উপকারভোগীরা। এসব নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে নিষেধ করলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত নুরমিয়া ফকিরের ছেলের সঙ্গে ঠিকাদারের চরম বাগবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। অবশেষে ঠিকাদার কিছু সামগ্রী সরিয়ে ফেলে।
তবে এরপরও কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। উপকারভোগীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়ে আমরা অনেক খুশি। কিন্তু ঘর নির্মাণের শুরু থেকেই ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে আসছেন। তারা আমাদের কোন কথাই শুনছেন না। নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করছেন। উপকারভোগী মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ চিন্তা পাত্র বলেন, ঘরের ইট ভালো না, আর বালু দেছে কাদা কাদা, লাল বালু দ্যায় নায়। আর রডতো ছোয়ায়ই নাই, শুধু ল্যান্টিনে কয়ডা দেছে। সিমেন্টও ঠিকমতো দ্যায় না।
আমরা নিষেধ করলেও তারা শুনছেন না। তাদের মনমতো কাজ করে। এ ব্যাপারে ঠিকাদার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, সিডিউল মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। তবে দরপত্র ক্রয়ের সময় নির্মান সামগ্রীতে যে বাজার দর ছিল এখন তার দ্বিগুন প্রায়। তারপরও বীর নিবাস নির্মানে কোন অনিয়ম করছিনা। মুক্তিযোদ্ধাগন জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। কাজেই নির্মান কাজে লাভ হোক বা না হোক বীর নিবাস নির্মানে কোন অনিয়ম করছি না। ভাল ইটের সাথে কিছু খারাপ ইট যেতে পারে। সেগুলো রাজ মিস্ত্রিকে ঘরে লাগাতে নিষেধ করা হয়েছে।
কোন কোন মুক্তিযোদ্ধা গৃহনির্মানে সরকারী নকসার বাইরে কক্ষবড় করে নির্মানের দাবী করছে। তাছাড়া কেউ কেউ বলেন বরাদ্দকৃত অর্থ আমাকে দেও আমি আমার ঘর নির্মান করে নেব। নানাবিধ কারনে মুক্তিযোদ্ধাগণের সকল দাবী ঠিকাদারের পক্ষে পূরন করা সম্ভব নয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন বলেন খুব শীঘ্রই কাজের মান পরিদর্শণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া তাছনিম বলেন বীর নিবাস নির্মাণে একটি ঘরেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পেলে সেটি মেনে নেওয়া হবেনা। কোনো ঘরে এ ধরনের অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।