নড়াইলের বিপুল পরিমান ভিপি সম্পত্তি অবৈধ দখলে

0
194

নড়াইল সংবাদদাতা

নড়াইলের ইতনায় ভিপি সম্পত্তি দখলের প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে। নানা কৌশলে ভূমিদস্যুচক্র দখলবাজি অব্যহত রেখেছে। ইতনা ভূমি অফিসের সহকারি ভূমি কর্মকর্তা পঙ্কজ কুমার ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসিনতার সুযোগ নিয়ে বিপুল পরিমান ভিপি সম্পত্তি দখল করা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহি ইতনা গ্রামের মধ্যপাড়ায় ভিপি সম্পত্তিতে গড়ে উঠেছে বিশাল খেলার মাঠ। এ খেলার মাঠটি অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে গেলে কোমলমতি শিশু কিশোররা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হবে। একটি কুচক্রী মহল ইতনা গ্রামের মধ্যপাড়ার এ খেলার মাঠটি অনেক আগে থেকে কবরস্থানের নামে দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। জানা গেছে, দীর্ঘ ৪ পুরষের খেলার মাঠটি কবরস্থানের নামে ভূমি দস্যুরা গ্রাস করতে যাচ্ছে। তাদের অপকৌশলে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে যুব, কিশোর থেকে শুরু করে কোমলমতি শিশুরা। এতোকাল ধরে মাঠের দক্ষিণ পাশে কবরস্থানের কার্যক্রম চালানো হলেও গত ১৭ মার্চ বেলা ১১টার দিকে মাঠের উত্তর পাশে একটি নতুন কবর দেয়া হয়েছে। এ কবর দেয়ার পরই এলাকার মানুষের নিকট দখলবাজীর বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে। বেরিয়ে এসেছে দখলবাজদের আসল চেহারা। মাঠটির দু’পাশে ইতোমধ্যে পাকা বাউন্ডারী নির্মান করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে মাঠের চারপাশ থেকে বাদ রাখা হয়েছে বেশ কিছু জমি। মাঠের মাঝে রাখা হয়েছে ইটের খোয়া ও বালুর স্তুপ। মাঠে যাতে শিশুরা খেলতে না পারে সে জন্য মাঠে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে ইটের খোয়া। অভিযোগকারীরা জানান, তাদের দাদা,বাবা-চাচারা, তারা নিজেরা ও তাদের সন্তানেরা বংশ পরম্পপরায় এই মাঠে খেলাধুলা করে আসছেন।

বর্তমানে খেলার মাঠটি ইতনার একটি কুচক্রী মহল কবরস্থানের নামে দখল করার পায়তারা চালাচ্ছে। এলাকার সৈয়দ জাফর আলী,মোল্যা আঃ রউফ সহ আরো অনেকে বলেন, ইতনা গ্রামের তছলিম উদ্দিন সরদারের ছেলে মোঃ লিপু সরদার, শাহীন সরদার, মাওলানা আব্দুল হান্নান সহ ৫/৬ জন এই খেলার মাঠটিকে কবরস্থানের নাম করে নিজেদের দখলে নেয়ার চেষ্টা অব্যহত রেখেছে। সরকারি “খ” তফসিল ভুক্ত জমিতে গড়ে উঠেছে খেলার মাঠটি। পূর্বে খেলার মাঠটি ইসাকের মাঠ ও পরবর্তীতে ইতনা ইউনাইটেড ক্লাবের মাঠ নামে পরিচিতি রয়েছে। কি কারনে এই খেলার মাঠ দখল করে কবরস্থান তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেটা সকলে বুঝলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা কেউ। স্থানীয়রা আরোও জানান, এলাকার লোকজন শিশুদের খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত করে মাঠটিকে কবরস্থান বানাতে দিতে চাননা। গ্রামে কবরস্থান রয়েছে। মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা করে এমন কয়েকজন কিশোর খেলোয়াড় মারুফ, তামিম, জাকারিয়া, সাকিম, সায়েম সহ আরো ১০/১৫ জন খেলোয়ার বলেন, তারা এই মাঠে প্রতিদিন খেলাধুলা করে। মাওলানা আব্দুল হান্নানের নেতৃত্বে কিছু লোক তাদের প্রায়ই খেলাধুলা করতে বাধা দেন। মাঠে যাতে খেলতে না পারে সেজন্য ইটের খোয়া ছড়িয়ে রাখেন। কিশোররা আবেগ আপ্লুত হয়ে বলে, তারা শুনেছে এখানে নাকি কবরস্থান বানানো হবে। তাহলে তারা খেলবে কোথায় ? এমন প্রশ্ন রেখে তারা মাঠটি রক্ষায় জেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। ইতনা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, এ গ্রামের মাওলানা আব্দুল হান্নান ও লিপু সরদার মাঠটি কবর স্থানের নামে দখলের পর এ মাঠের সিংহভাগ নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করবেন বলে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জণ রয়েছে। মাওলানা আব্দুল হান্নান ও লিপু সরদার বলেন জোর করে খেলার মাঠ দখল করার প্রশ্ন উঠে না। গ্রামবাসি যেখানে জায়গা দিবে সেখানেই গড়ে উঠবে কবরস্থান। ইতনা ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা পঙ্কজ কুমার দখলবাজদের সহযোগিতা করার কথা অস্বিকার করে বলেন, ওই মাঠটি ভিপি সম্পত্তি। প্রভাবশালী কিছু লোক নানা কৌশলে দখলের চেষ্টায় আছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদেরকে কোন ভাবেই ওই সম্পত্তি দখল করতে দেয়া হবে না।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোসলিনা পারভিন জানান, বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। তবে মাঠের দক্ষিন পাশে কবরস্থানের জায়গায় কবরস্থান থাকবে এবং খেলার মাঠ যেটুকু বাচ্চারা খেলে সেটুকু খেলার মাঠই থাকবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য এমনটি হলেও দখলবাজরা কেবলমাত্র মাঠটি দখলের উদ্দেশ্যে মাঠের উত্তরপাশে ১৭মার্চ একটি লাশের দাফন সম্পন্ন করেছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহল খেলার মাঠটি রক্ষায় জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Comment using Facebook