রাকিব হোসেন, বাঘারপাড়া (যশোর)
যশোরের বাঘারপাড়ায় হঠাৎ মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সারের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন চাষীরা। উপজেলা কৃষি বিভাগের তদারকি না থাকায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে খুচরা বিক্রেতারা।
কৌশলে ডিলারদের কাছ থেকে সার কিনে অতিরিক্ত মুনাফা লোভের আশায় মজুদ করে রেখে দিয়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তবে ডিলারদের চাহিদা অনুযায়ী সার দিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি গত ২ মাসে অনেক সাব ডিলারদের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তবে কিছু সাব ডিলার বরাদ্দ পেলেও বাজারে এমওপি সারের সংকট রয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে বাজারে এমওপি সারের সংকট নেই বলে দায় এড়িয়ে গেছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। তাঁরা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত এমওপি সার রয়েছে। এছাড়াও বর্তমান সারের চাহিদা কমে গেছে। তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলার আলাদিপুর বাজারের বিসিআইসির সাব ডিলার সজিব ট্রেডার্সে গত জানুয়ারিতে ১৭৬ বস্তা এমওপি বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে চাহিদা থাকা সত্বেও ফেব্রুয়ারি ও চলতি মার্চে কোনো বরাদ্দ দেয়নি তাঁর মূল ডিলার সুগন্ধা ট্রেডার্সের মালিক সবুর হোসেন। একই বাজারের আরেক সাব ডিলার মেসার্স মামুন ট্রেডার্সে গত জানুয়ারিতে ৫০ বস্তা ও ফেব্রুয়ারিতে ২০ বস্তা এমওপি সার বরাদ্দ পান। যা কয়েকদিনের মধ্যে চাষীদের মাঝে বিক্রি করেছেন। চলতি মার্চে বরাদ্দ না দেয়ায় সংকটে পড়েছেন তিনি। ধলগাঁ রাস্তার মোড়ে মোল্যা ট্রেডার্সের মালিক শাহাজাহান আলীকে গত কয়েক মাস ধরে কোনো বরাদ্দ দেননা তার ডিলার। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে সার কিনে বিক্রি করছেন। বাঘারপাড়া বাজারের বড় ব্যবসায়ী মেসার্স ব্রাদার্স ট্রেডার্সের মালিক হারুন অর রশিদ বাবলু চলতি মাসে মাত্র ২০ বস্তা সার পেয়েছেন। চাহিদা বেশি থাকা সত্বেও তিনিও সার পাননি বলে জানান। একই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী জামাল ট্রেডার্সের মালিক জামাল হোসেন সর্বশেষ জানুয়ারিতে ১৬০ বস্তা বরাদ্দ পান। পরে আর কোনো বরাদ্দ পায়নি। নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে সার ক্রয় করে বিক্রি করছেন তিনি। খলশী এলাকার চাষী রঘু বিশ্বাস জানান, ধানে বিএলবি রোগে আক্রমণ করলে পটাশ সার লাগতে পারে। তাছাড়াও সবজি চাষে পটাশ সারের প্রয়োজন আছে। বাজারে বর্তমান পটাশ সারের সংকট দেখা দিয়েছে। ধুপখালী এলাকার কৃষক জুলফিক্কার আলী জানিয়েছেন, বাজারে পটাশ সারের সংকট দেখাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাজারে কিনতে গেলে ১১০০ টাকা দাম নিচ্ছে। দোহাকুলা এলাকার আরেক চাষী গোলাম মোস্তফা চাকলাদার বলেন, বাজারের পটাশ সারের সংকট রয়েছে। দামও বেশি। কড়াইতলা রোডের এক সার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০৫০ টাকা দরে বিএডিসির এমওপি সার কিনেছি। সামনে আরো সার দরকার। বিসিআইসির সাব ডিলার সজিব ট্রেডার্সের মালিক রবিউল ইসলাম জানান, তাঁর ডিলার সুগন্ধা ট্রেডার্সের মালিক সবুর হোসেন সীমিত আকারে বরাদ্দ দেন তাকে। চলতি মাসে কোনো বরাদ্দ দেননি তাকে। বর্তমান দোকানে ১৫ বস্তা এমওপি মজুদ আছে। তবে এলাকায় প্রচুর চাহিদা রয়েছে এমওপি সারের। বিসিআইসির আরেক সাব ডিলার ধলগাঁ রাস্তার মোড়ের মোল্যা ট্রেডার্সের মালিক শাহাজাহান আলী জানিয়েছেন, টাকা বেশি দিলে পটাশের সংকট থাকে না। তাঁর ডিলার সুগন্ধা ট্রেডার্সের মালিক সবুর হোসেন কোনো বরাদ্দ দেন না তাকে। এ কারণে বাইরে থেকে চাড়াভিটাসহ বিভিন্ন বাজার থেকে খুচরা সার কিনে বিক্রি করেন। বর্তমান তাঁর দোকানে এমওপি সারের সঙ্কট রয়েছে। একই কথা বলেন চাড়াভিটা বাজারের লিপি ট্রেডার্সের মালিক বাপ্পী হোসেন। তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছেনা। বর্তমান এমওপি সঙ্কট রয়েছে। দোকানে মাত্র কয়েক বস্তা এমওপি সার মজুদ আছে। বাঘারপাড়া বাজারের মেসার্স ব্রাদার্স ট্রেডার্সের মালিক হারুন অর রশিদ বাবলু জানান, নওয়াপাড়াতে একটু সমস্যা থাকায় এমওপি সারের সংকট হয়েছে। ডিলাররা চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ ঠিকমত দিচ্ছেন না। এতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। একই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী জামাল ট্রেডার্সের মালিক জামাল হোসেন বলেন, গত ২ মাস কোনো বরাদ্দ দেননি তাঁর ডিলার। বর্তমান তাঁর দোকানে কোনো এমওপি সার নেই। চাষীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। অভিযোগের বিষয়ে বিসিআইসির ডিলার সুগন্ধা ট্রেডার্সের মালিক সবুর হোসেন বলেন, বাজারে এমওপি সারের সংকট রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সার পাওয়া যাচ্ছে না। যার টাকা আছে সেই ব্যক্তি সার পাবে, সে যদি মজুদ করে রাখে সেইটা আমার বিষয় নয়। অভিযোগ দিলে কৃষি অফিস ব্যবস্থা নেবেন। বিসিআইসির ডিলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বাজারে এমওপি সারের ডিমান্ড নাই। সব সাব ডিলারকে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। যদি কেউ না পেয়ে থাকে, তারা বললে পরে দেয়া হবে। বিসিআইসির ডিলার আরও জানান, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য এমওপি সারের সঙ্কট রয়েছে। তাছাড়া অল্প বরাদ্দ পাওয়ায় সাব ডিলাদের চাহিদা অনুযায়ী সার বন্টন করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, সাব ডিলার ছাড়া কোনো খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে সার বিক্রি করা হয় না। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, ডিলারদের সাথে সাব ডিলারদের মধ্যে একটু সমস্যা আছে। যার কারণে একটু ত্রুটি হয়। বাজারে এমওপি সারের কোনো সঙ্কট নেই। মৌসুম শেষ হওয়ায় চাহিদাও কমে গেছে। ধানে বিএলবি রোগে আক্রমণ করলে পটাশের প্রয়োজন আছে। এই মাসে বরাদ্দ ছিলো ১৪১ মেট্রিক টন। ২৮ মার্চ পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে ১০৮ মেট্রিক টন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, সাব ডিলাররা ঠিকমত বরাদ্দ পাচ্ছে না, এধরণের কোনো অভিযোগ আমরা পায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।