খুলনা ব্যুরো
খুলনা শহরজুড়ে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। সবেমাত্র গরম পড়তে শুরু করলেও এরই মধ্যে শুকিয়ে গেছে নগরীসহ জেলার পুকুর, জলাশয় ও খালগুলো। দীর্ষসময় ধরে নলকূপ চেপে শরীরের ঘাম ঝরলেও উঠছে না পানি। ওয়াসার পানি ঘরের কাজে কিছুটা ব্যবহার করা সম্ভব হলেও পানযোগ্য পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শুধু খুলনা নয়, আশপাশের জেলা, উপজেলার গ্রামগুলোতেও সৃষ্টি হয়েছে একই অবস্থা। কিছু মানুষ নিজ উদ্যোগে এলাকাবাসীর জন্য খাবার পানির ব্যবস্থা করেছেন। তবে সেসব স্থানেও পানি নিতে ভিড় জমছে মানুষের।
দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনার ৯ উপজেলার সবগুলোতেই বর্তমানে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে তুলনামূলকভাবে ফুলতলা উপজেলায় পানির সংকট কম।
এছাড়া খুলনা ওয়াসার পানি শুধু নগরীর মধ্যে সরবরাহ করা হয়। ওয়াসার ৪০টি উত্তোলক পাম্পের মাধ্যমে এ পানি সরবরাহ করা হয়। কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলার পানি লবণাক্ত। এসব এলাকার মানুষ পুকুর এবং বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় খুলনার কোনো নলকূপে এখন পানি ওঠে না। তবে গভীর রাতে নলকূপগুলোতে খুব সামান্য পানি পাওয়া যায়।
খুলনা মহানগরীর লবণচরা এলাকার বাসিন্দা সেলিম গাজী বলেন, আমাদের এলাকায় খুলনা ওয়াসার একটা রিজার্ভ ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে দিনের মধ্যে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পানি সরবরাহ করা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য।
তিনি বলেন, পাশেই রূপসা নদী থাকলেও এলাকার নলকূপগুলোতে এরই মধ্যে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। নগরীর টুটপাড়া ঘোষের ভিটা এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রশিদ, বেলাল হোসেন বাবু, হাজেরা খাতুন ও আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘টিউবওয়েল আমাদের একমাত্র খাবার পানির উৎস। কিন্তু টিউবওয়েল চাপলে পানি উঠছে না। যে কারণে আমাদের মতো যারা অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকেন তাদের জন্য খাবার পানির সমস্যাটা প্রকট।
স্থানীয় মিজানুর রশিদ বলেন, ‘এলাকার একমাত্র সচল নলকূপটি ভালো রাখার চেষ্টা চলছে। তবে এই নলকূপ থেকে ভোর আর গভীর রাত ছাড়া এখন পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ওয়াসার পানি কেউ খেতে চান না।’ পানির সংকট শুধু খুলনা মহানগরীতেই নয়, মহানগরীর চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা উপজেলার গ্রামগুলোতেও। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার পাইকগাছা পৌর এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে কিছু এলাকায় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হলেও কয়রা উপজেলায় সেই সুযোগ খুব কম। এ উপজেলায় পানির সংকট সবচেয়ে বেশি বলে জানান এলাকাবাসীরা। পাইকগাছা পৌরমেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘পাইপলাইনে পানি সরবরাহের চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে পৌর এলাকার বেশিরভাগ এলাকায় পানি সরবারাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীতে পুরো এলাকা পাইপলাইনের আওতায় আনা হবে।’ কয়রা উপজেলার উত্তরবেদকাশী এলাকার বাসিন্দা সিরাজুদ্দৌলা লিংকন ও কবির হোসেন বলেন, ‘বর্ষার মৌসুম শেষ হলেই আমাদের এলাকায় শুরু হয় পানীয় পানির জন্য দৌড়ঝাঁপ। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, পুকুর পাড়ে বালির ফিল্টার এসব কোনো কাজে আসে না। ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনা- নেওয়া এখন এ এলাকার মানুষের নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
কয়রা সদর এলাকার মধুর মোড়ের বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্র জানান, বর্তমানে এলাকায় বোতলজাত পানি সরবরাহের সামান্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই পানি সরবরাহ করা হয়। যারা বেশি দামে এলাকার মধ্যে থেকে পানি নিতে পারছেন না তাদের খাবার পানির জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। এ বিষয়ে খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা কয়রা-পাইকগাছা দুটিই উপকূলীয় উপজেলা। দুই উপজেলায়ই বর্ষার মৌসুম শেষ হতে না হতেই পানীয় পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়ে যায়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারিভাবে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুত এলাকাবাসীর পানির চাহিদা পূরণের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।’ খুলনা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, খুলনায় গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হতে না হতেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির স্তর আরও কমছে। তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে দিনে দুইবার পানি সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ৫৫টি উত্তোলক পাম্প প্রায় সারাদিনই চালু থাকে। ফলে এখন পানির খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার সমাধান এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তারপরও বেশি সময় পানির পাম্প চালিয়ে কিছুটা অতিরিক্ত পানি দেওয়ার চেষ্টা চলছে।