আল-আমিন গোলদার, বটিয়াঘাটা
খুলনা জেলার আশে পাশের সব উপজেলায় বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল-জরিমানা চলছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজও পর্যন্ত বটিয়াঘাটা উপজেলায় কোন বালু উত্তোলন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে হয়নি ভ্রাম্যমান অভিযান।
প্রশাসনকে মাসহারা দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে এই বালু সিন্ডিকেট চক্র নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে চলেছে। বহুবার পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হলেও এদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না কোন আইনানুগ ব্যবস্থা।
ফলে দিনরাত ২৪ ঘন্টা উপজেলার বিভিন্ন নদী থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন নদ নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে বেশকিছু বালু সিন্ডিকেট চক্র। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রশাসনসহ উপজেলার রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কথা বলে ও কিছু চুক্তির বিনিময়ে আমরা আমাদের বালু উত্তোলন করছি।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, জেলার পার্শ্ববর্তী ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, দাকোপ সহ বিভিন্ন অঞ্চলে এই আত্মঘাতী ড্রেজারের মাধ্যম নদী থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা অব্যাহত রেখেছে প্রশাসন। কিন্তু শুধুমাত্র বটিয়াঘাটা উপজেলায় আজ পর্যন্ত কোন বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়নি। এই নিয়ে দেখা দিয়েছে এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সমালোচনা। উপজেলার বারোআড়িয়া ও পাইকগাছা এলাকার শিবসা ও ভদ্রানদী থেকে চলছে দিনরাত বালু উত্তোলন। গাওঘরা, মাইলমারা, শৈলমারী, ঝপঝপিয়া, বটিয়াঘাটা, পানখালী, বিরাট, মাথাভাঙ্গা, তেতুলতলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চলছে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন। এই সব এলাকা অধিকাংশ উপকুলীয় ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘোষণা করা হয়। শহররক্ষা বেড়ীবাধ নামেও অনেকের কাছে পরিচিতি এই সব এলাকা।
ভাঙ্গনকবলিত এলাকা খুলনার বটিয়াঘাটা ও পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী থেকে ড্রেজারযন্ত্রের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এটা বহুদিন থেকে চলে আসছে। আইন বলছে-বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী,পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারীদের দুই বছরের কারাদ- ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। বলা বাহুল্য, এসব আইনের এখন কোনো প্রয়োগ নেই। শুধু কাগজে কলমে রয়েছে আইন। আর আইন ভঙ্গকারী যদি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হন, তাহলে তো কথাই নেই। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সেখানে নিরব।
অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসন বালু সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। ফলে বালু সিন্ডিকেটরা প্রকাশ্য বালু উত্তোলন করে চলেছে। পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে দেখছি। তিনি আরো বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বালু উত্তোলন অবৈধ। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।