পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতা
বিশুদ্ধ খাবার পানি উৎস রক্ষনাবেক্ষনের কাজ করে জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাড়িয়েছে পাইকগাছার সুন্দরবন সংলগ্ন গড়ইখালী ইউনিয়নের বাসাখালী গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা শেফালী।
এক সময় যে শেফালীর অনাহারে দিন কাটতো, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো আজ সে শেফালী এক জন স্বাবলম্বী নারী। বেড়েছে সামাজিক মর্যাদা।
এলাকার সবার কাছে ‘পানি আপা’ হিসেবে একনামেই পরিচিত শেফালী। ভাল মেধাবী হওয়া সত্তেও বাবার খালেক সানার অভাব অনটনের কারণে এসএসসি পর্যন্ত পৌছাতে পারেনি শেফালী। বিয়ে হয় একই এলাকার মহসিন সানার সাথে। শেফালীর কাছ থেকে খরচ নিয়ে বিদেশে যায় মহসিন। প্রথম কিছুদিন খোঁজ নিলেও পরবর্তীতে শেফালীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় মহসিন। একটা পর্যায়ে গিয়ে মহসিনের সাথে বৈবাহিক বিচ্ছেদ হয় শেফালীর। এরপর শুরু হয় শেফালীর সংগ্রামী জীবন। ৩টি সন্তান নিয়ে দুঃসহ জীবন কাঁটতে থাকে শেফালীর।
এদিকে বাংলাদেশ সরকার ও সবুজ জলবায়ু তহবিলের যৌথ অর্থায়নে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি)’র কারিগরি সহযোগিতায় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বিশেষত নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা মোকাবেলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তদারকিতে খুলনার দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা এবং সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর সহ ৫টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নের ১০১টি ওয়ার্ডে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত লবণাক্ততা মোকাবেলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য নারীদের বিশুদ্ধ খাবার পানির সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করণের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকল্প এলাকা পাইকগাছায় স্থানীয় বাস্তবায়নকারী সংস্থা দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে)’র মাধ্যমে অত্র এলাকার উপকারভোগীদের জন্য ৩ হাজার ২১২টি বসতবাড়ী ভিত্তিক বিশুদ্ধ খাবার পানির উৎস স্থাপন করা হয়েছে। এ সব উৎস সচল রাখার জন্য জিসিএ প্রকল্প হতে প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজের পরিধি অনুসারে কমপক্ষে একজন নারী উদ্যোক্তা নির্বাচন করা হয়েছে।
এই রক্ষণাবেক্ষণ নারী সেবাদানকারীকে জিসিএ প্রকল্প পানি আপা নামে অবহিত করেছে। যিনি নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে রক্ষণাবেক্ষণ সেবা ও পরামর্শ প্রদান করবেন। অত্র প্রকল্পের আওতাধীন গড়ইখালী ইউনিয়নের ৩ ও ৭ নং ওয়ার্ড। এ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে পানি আপা হিসেবে নির্বাচিত করা হয় শেফালীকে।
জিসিএ প্রকল্প থেকে শেফালীকে বিভিন্ন ধরণের অরিয়েন্টেশন প্রদান করা হয়। বাসাখালী, হোগলারচক ও কেচকিবুনিয়া সহ ৩টি গ্রাম নিয়ে ৩নং ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে ৪শ পরিবারের বসতবাড়ীতে বসতবাড়ী ভিত্তিক বিশুদ্ধ খাবার পানি উৎস স্থাপন করা হয়েছে। এ সব উৎসে রক্ষণাবেক্ষনের কাজ ও সেবা প্রদান করা বাবদ প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে সম্মানি ফি বাবদ ২০ টাকা করে পান শেফালী। এতে এক দিকে পানির উৎসগুলো যেমন টেকসই হচ্ছে এবং সচল থাকছে তেমনি অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাড়িয়েছে শেফালী।
বাসাখালী গ্রামের উপকারভোগী মনিরা আক্তার সাথী জানান, পানি আপা শেফালীর মাধ্যমে আমাদের পানির উৎসগুলো সচল রয়েছে। আমরা তার মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংরক্ষণের অনেক ধারণাও লাভ করছি। একটা সময় পানির জন্য হাহাকার ছিল। এখন আর পানি নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই।
শেফালী জানান, এক সময় আমার সংসার চালাতে গিয়ে খুব হিমশিম খেতে হতো। পানির উৎস রক্ষণাবেক্ষনের কাজ করে একদিকে আমার সামাজিক মর্যাদা বেড়েছে। সবাই যখন পানি আপা বলে ডাকে তখন নিজের মধ্যে দারুণ একটা ভাললাগা কাজ করে। বর্তমানে সুন্দরভাবে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেদের ভালভাবে লেখাপড়াও করাচ্ছি। এখন আমার সংসারে অভাব অনটন নেই বললেই চলে।