যশোর অফিস
সয়াবিন তেল, মসুরের ডাল ও চিনি বিক্রির মাধ্যমে যশোরে গতকাল রোববার থেকে শুরু হলো ফ্যামিলি কার্ডে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) পণ্য বিক্রি। বেলা ১১টার দিকে যশোর উপশহর ইউনিয়নের বি-ব্লক বাজারে পণ্য বিক্রি কার্যক্রমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান।
জানা যায়, একটি কার্ডের বিপরীতে দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি চিনি ও দুই কেজি মসুরের ডাল যথাক্রমে ২২০, ১১০ এবং ১৩০ টাকা মোট ৪৬০ টাকার প্যাকেজে বিক্রি করা হচ্ছে। রোববার উপশহর এলাকায় বি-ব্লক বাজারে ৫৪০ এবং ব্লক-৭ এ ৩৭৮ মোট ৯১৮ জন তালিকাভুক্ত সদস্যের মধ্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে।
এছাড়া পণ্য বিক্রির প্রথমদিন যশোরের আট উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের কাছে খাদ্যপণ্য বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কিছু কিছু উপজেলাতে টিসিবি’র পণ্য নিতে আসা দুস্থ ও মধ্যবিত্ত মানুষের দীর্ঘ লাইন লক্ষ করা গেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, নির্ধারিত মূল্যে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিভাবে উদ্বোধন করা হলো। দুই দফায় যশোর জেলায় এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৩৯ পরিবারের কাছে এই খাদ্যপণ্য বিক্রি করা হবে।
প্রথম দফার কার্যক্রম শুরু হলো; আর একবার রমজানের শুরুতে পণ্য বিক্রি করা হবে। অনুষ্ঠানে যশোরের জেলা প্রশাসক ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন, উপশহর ইউপি চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে অন্যান্য উপজেলার মত কেশবপুরে নিত্যপণ্যেও ঊর্ধ্বগতির সাথে তাল মেলাতে বেসামাল মধ্যবিত্তরা সরকার পরিচালিত ন্যায্যমূল্যের দোকানের চাল, আটার আশায় দুস্থ‘র পাশাপাশি ভোর থেকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন।
এ কার্যক্রম পৌর এলাকায় দ্বিতীয় বারের মত চলমান রয়েছে। ফলে দূর-দূরাত্ব থেকে আসা মানুষেরা ভীড় করছেন। তবে কিছু অসাধু লোক একাধিক বার চাল, আটা উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করেছেন বলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ। ফলে প্রতিদিন ভূক্তভোগীরা কাঙ্খিত চাল, আটা না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন। এদের প্রতিহত করতে সংশ্লিষ্টদের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগীরা।
জানা গেছে, করোনা পরবর্তী সময়ে কর্মহীন অসহায় ও দুস্থ মানুষের পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে গত ২০ জানুয়ারি থেকে কেশবপুরে সরকার পরিচালিত ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) কার্যক্রম শুরু হয়। নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম ও কৃষিকর্ম না থাকায় বর্তমান শ্রমজীবী পরিবারের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরা দূর্বিসহ জীবন যাপণ করছেন। তাই বেসামাল মধ্যবিত্ত পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে সরকার ওমমএস কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতিকেজী চাল ৩০ টাকা ও আটা ১৮ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে। এরজন্যে কেশবপুর পৌর শহরে ৪ জন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। এরা হলেন, শহরের ধানহাটায় অহেদুজ্জামান বিশ্বাস, গমপট্টিতে স্বপন মুখার্জি, কেশবপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজের পাশে বিষ্ণুপদ দাস ও কালাবায়সা মোড় এলাকায় জয় ভদ্র জগায়।
ডিলাররা প্রতিদিন এক মেট্রিক টন চাল ও এক মেট্রিক টন আটা বিক্রি করতে পারবেন। ডিলাররা শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের ৬ দিন খাদ্যগুদাম থেকে চাল, আটা উত্তোলন করে মাথা প্রতি ৫ কেজি হারে বিক্রি করেন। ওএমএস দোকানে স্বল্পমূল্যে চাল, আটা দেয়ার খবরে দুস্থ‘র পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত দুস্থ ও মধ্যবিত্তরা মাত্র ৫ কেজি চাল, আটার আশায় ওএমএস দোকানে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন। বৃৃহস্পতিবার সকালে গম পট্টির ওএমএস ডিলার স্বপন মুখার্জি দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রামচন্দ্রপুর গ্রামের হাসিনা বানু ও সুজাপুর এলাকার খোদেজা বেগম জানান, পরিবার প্রধানরা ভ্যান চালক। ৬ জনের সংসারে ৫ কেজি চাল একদিনেই শেষ হয়ে যায়।
নগদ টাকার অভাবে বেশী চাল কিনতে পারি না। যেদিন চাল তুলতে হয় সেদিন কাজ বন্ধ করে লাইন দিতে হয়। তারা এ কার্যক্রম চলমান থাকার দাবি জানান। তবে কিছু কিছু অসাধু লোক একাধিক বার চাল, আটা উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করছেন। বিষ্ণুপদ দাসের দোকানে গিয়ে কথা হয় মজিদপুর দাসপাড়ার লক্ষীরাণী দাস ও শ্রীফলা গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সেলিনা বেগমের সাথে। তারা জানান, তাদের পরিবার প্রধানরা কৃষিকাজ করলেও বর্তমান মাঠে কাজ কম, নিত্যপণ্যেও দামও চড়া। ঘরেও চাল নেই। তাই ওমমএস দোকানে এসেছেন চাল নিতে।
ডিলার স্বপন মুখার্জি ও বিষ্ণুপদ দাস বলেন, আটার ব্যাপক চাহিদা থাকায় মধ্যবিত্তদের মধ্যে সাড়া পড়েছে। খাদ্য গুদাম থেকে যে চাল আটা দেয়া হয় তা বেলা সাড়ে ১১টার আগেই শেষ হয়ে যায়। অনেকেই চাল, আটা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এব্যাপারে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল বলেন, প্রতিটি ওএমএস দোকানে দীর্ঘ লাইন দিয়ে মানুষ চাল, আটা কিনছেন।
প্রতি কেন্দ্রে একজন করে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের তদারকিতে ডিলাররা চাল, আটা বিক্রি করছেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ওএমএস কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ কার্যক্রম সারা বছর অব্যাহত থাকলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ফলে কালোবাজারিরা সুবিধা করতে পারবে না।