আনিসুজ্জামান সুমন, শ্যামনগর
মহামান্য হাইকোট এর ১৬৩৯২/২০১৭ ইং নং রীট পিটিশন আদেশ অমান্য করে শ্যামনগরে ড্রেজার মেশিনে ও বোরিং করে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি মহল। আর উপজেলা প্রশাসন মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে নিরব ভূমিকায়।
এমন অবস্থায় চলতে থাকলে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। ১৪২৩-২৪ অর্থবছর থেকে শুরু করে ১৪২৭-২৮ অর্থবছরে শ্যামনগর উপজেলায় কোন বালু মহল ঘোষনা না হলেও শ্যামনগরে নদী ভাঙ্গন এলাকা সহ ঘনবসতি লোকালয়ে ড্রেজার মেশিনে বা বোরিং করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যহত আছে। রীট পিটিশনের আদেশ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সাতক্ষীরা রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর গত ১৮/০১/২০১৮ তারিখে ৭৮নং স্মারকে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পত্র প্রেরণ করেন।
তিনি কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় সুপ্রীম কোটের বিজ্ঞ কৌশলী এ্যাড: হুমায়ন কবীর গত ১৯/১১/২০১৮ তারিখে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাওয়ার পর গত ০৩/১২/২০১৮ ইং তারিখে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ১৯৭৯নং স্মারকে রীট পিটিশনের উদ্ধৃতি দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আরও একটি পত্র প্রেরণ করেন। অথচ এ সমস্ত নির্দেশ এর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যহত রেখেছে। মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের চুনকুড়ি থেকে সিংহড়তলী ৩ কিলোমিটারে রাস্তায় সম্প্রতি জনবসতি এলাকার একটি মৎস্যঘেরে মেশিন লাগিয়ে বোরিং করে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে একটি মহল।
শ্যামনগরের কতিপয় সাংবাদকর্মী সরেজমিনে দেখে এবং ছবি ক্যামেরা বন্দি করে বিষয়টি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিহিত করা হয়। এরপর বালু উত্তোলন একদিন বন্ধ থাকলেও পরের দিন ও রাতে বালু উত্তোলন অব্যহত রয়েছে। এরপরও বিষয়টি পুনরায় উপজেলা প্রশাসনকে বলা হলেও শুধু মাত্র ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
এ ছাড়া সুন্দরবনের সংকটাপন্ন প্রত্যেকটি ইউনিয়নে অসাধু বালু উত্তোলন কারীরা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। নওয়াবেঁকী বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে মুন্সিগঞ্জ বাস ষ্ট্যান্ডের উত্তর পার্শ্বে ও ভেটখালী ব্রীজের পার্শ্বে অবৈধ ভাবে বালুর স্তুপ করে ব্যবসা করছে কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন আশাশুনি উপজেলার বালু মহল থেকে বালু এনে বিক্রি করছে। প্রকৃত ঘটনা তা নয় কপোতাক্ষ নদী ভাঙ্গন এলাকার জেলেখালীও খোল পেটুয়া নদী থেকে অবৈধ ভাবে ভোররাতে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তেলন করে এ সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করছে। যার প্রমান সম্প্রতি খোলপেটুয়া নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের সময় ভ্রাম্যমান আদালত এক কার্গোমালিক কে ৫০ হাজার টাকা জরিমান করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর বৃহত্তর খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন ৫২ ইউনিয়নকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষনা করেছে। তথ্য অনুযায়ী পরিবেশগত ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে শ্যামনগর উপজেলার উল্লেখযোগ্য গাবুরা পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, মুন্সীগঞ্জ ও কৈখালী ইউনিয়ন। আরো বলা হয়েছে সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেষ্টের বাহিরে চারদিকে ১০ কিলোমিটার বিস্তৃর্ণ এলাকায় টেকসই পরিবেশ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করছে একটি মহল। তথ্যে আরো জানা গেছে ৪/৫টি ছোট কার্গো ও ৮/১০টি ইঞ্চিন চালিত ট্রলার প্রতিনিয়ত গোনমুখে ভোর সকালে খোলপেটুয়ায় ও কবোতক্ষ ভাঙ্গনকৃত এলাকার নদীতে ড্রেজার মেশিনে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে। এছাড়া জনবসতি এলাকা থেকে বোরিং করে ১০/১২ জন মেশিন মালিক উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে।
বিষয়টি সরেজমিনে ও গোপনে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শ্যামনগরের সুধী মহল জেলা প্রশাসক ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।