দেবহাটা (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা
দেবহাটার পারুলিয়ায় এক রাতে চারটি মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে উপজেলার পারুলিয়া ফুলবাড়িয়া এলাকার বাতাংডাঙ্গা বিলে ওই মৎস্য ঘের গুলিতে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটে। বিষ প্রয়োগকৃত চারটি ঘেরের তিনজন মালিক একে অপরের নিকটাত্মীয়।
বিষ প্রয়োগের কারনে বাগদা ও গলদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা যাওয়ায় কমপক্ষে ৬ লাখ টাকায় ক্ষতিসাধণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ঘের মালিকেরা।
শত্রুতা মূলকভাবে তাদের আর্থিক ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে মৎস্য ঘের গুলিতে পরিকল্পিত ভাবে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে বলে ধারনা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারসহ স্থানীয়দের। ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষীদের মধ্যে ফুলবাড়িয়া গ্রামের রইচ উদ্দীনের ছেলে আব্দুল জলিল জানান, বাতাংডাঙ্গা বিলে বিঘাপ্রতি ১৮ হাজার টাকা হারে ৩০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে আমিসহ আমার ভায়রা শরিকুল ইসলাম ও শ্যালক শফিকুল ইসলাম পাশাপাশি চারটি মৎস্য ঘেরে বাগদা ও গলদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে আসছিলাম।
বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের পাশ্ববর্তী হাবিবের মৎস্য ঘেরে এলাকার দুই চিহ্নিত মাছ চোর বিশ্বাসবাড়ি এলাকার গোলাম হোসেনের ছেলে আবু সালেক ও কদবেলতলা এলাকার তারা মিয়ার ছেলে মুছা গভীর রাতে যাতায়াত ও রাত্রিযাপন করে আসছিল। একাধিকবার ওই দুই চোর আবু সালেক ও মুছা আমাদের আশপাশের ঘের থেকে মাছ চুরি করে ধরাও পড়ে। তাদেরকে রাত বিরাতে মাছের ঘেরে আশ্রয় না দেয়ার জন্য পাশ্ববর্তী ঘের মালিক হাবিবকে বারবার বলা স্বত্বেও, তিনি আমাদের কথায় কর্ণপাত করতো না। উল্টো চোর আবু সালেক ও মুছাকে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত করে তোলে হাবিব।
আব্দুল জলিল আরো জানায়, শনিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সর্বশেষ আমি মৎস্য ঘেরে আসি। তখন মাছ চোর আবু সালেক ও মুছাকে আমার ঘেরের পাশে দেখতে পাই। তারা আমার উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িঘড়ি করে হাবিবের মৎস্য ঘেরের বাসায় ঢুকে পড়ে। এরপর আমি বাড়িতে চলে যাই এবং বাড়িতেই রাত্রিযাপন করি। রোববার সকাল ১০ টার দিকে আমি মাছের খাবার দিতে ঘেরে গিয়ে দেখতে পাই যে, আমাদের চারটি মৎস্য ঘেরের প্রত্যেকটিতে বিপুল পরিমান মাছ মরে গেছে।
শুধু মাছ না, ঘেরে যতো জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণি ছিল তাও মরে গেছে। কান্নাজড়িত তিনি বলেন, ‘৩৯ দিন আগে আমার একমাত্র ছেলেটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। আমার পরিবার এখনও শোকাবিভূত। এরই মধ্যে দুই চোরের সাথে শত্রুতার মাসুল দিতে হলো। বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে এই মাছ চাষ করেছিলাম, এখন একেবারেই পথে বসে গেছি। একথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এব্যাপারে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগের বিষয়টি শুনেছি, কিন্তু এখনও কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।