আজিজুর রহমান, কেশবপুর (যশোর)
কেশবপুর উপজেলার ত্রিমোহিনী ভায়া কলারোয়া কপোতাক্ষ নদের উপর নড়বড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২শ’৭৫ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকো রয়েছে। সেই বাঁশের সাঁকো সাধারণ মানুষের মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। তারপর বেঁচে থাকার জন্য দুপারের প্রায় ২৫ গ্রামের হাজর হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকেন বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে।
এই সাঁকোর উপর দিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা তালা, কলারোয়ার, দেওড়া, নাভারণ, বেনাপোলের ছাত্র-ছাত্রীসহ হাজার হাজার নারী-পুরুষ যাতায়াত করে থাকেন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে কপোতাক্ষ নদের উপর সেতু নির্মাণের কোন জনপ্রতিনিধি উদ্যোগ না নেওয়ায় দুই পারে মানুষের ক্ষোভ কমছেনা। গুরুত্বপূর্ণ, এই সেতুটি, নির্মিত হলে কেশবপুর, তালা, কলারোয়া সাতক্ষীরা, দেয়াড়া, কাশিয়াডাঙ্গা, চালনদিয়া, দৌলতপুর, ছলিমপুর, পাটুলিয়া, গড়গড়িয়া, বাজে, খোরদা, মাঠপাড়া, উলুডাঙ্গা, উলুশী, জানখা, আবাদপাড়া, পাকুড়িয়া, খোরদো, বাটরাসহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে যাবে। সাঁকোর পশ্চিম পাশের মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেশবপুর কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ব্যাংকসহ সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়।
কেশবপুরে তাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রও রয়েছে। মধু কবির জন্মবার্ষিকীতে প্রতি বছর ২৫ জানুয়ারীতে সরকারিভাবে উদ্যাপন হয়। ঐ সময় বাঁশের সাঁকো দিয়ে হাজার হাজার মানুষ পার হয় জাতীয় মেলা উপভোগ করার জন্য আসেন। মেলা উপভোগ করতে এসে দূর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। সোমবার সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায় ত্রিমোহিনী ভায়া কলারোয়া কপোতাক্ষ নদের উপর সেতু নির্মাণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কপোতাক্ষ নদের উপর সেতু না থাকায় মানুষ তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য মালামাল নিয়ে বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে কারোর কাঁদে বেগুনের খাচি, কারোর মাথায় সবজি, কেউ কাঁদে করে ধান, পাট নিয়ে যাচ্ছে। কলারোয়া ও তালা থানার কৃষক অসীম দাস, আব্দুল হালিম, আব্দুল কুদ্দুস, হায়দার আলী, শরিফুল ইসলাম, আব্দুল হান্নান, তরিকুল ইসলাম, জবান আলী, ইউনুস আলী, নজরুল ইসলাম, তাদের কষ্টের কথা জানালেন, তারা বললেন সেতু না থাকায় যানবাহনের অভাবে কাঁদে ও মাথায় করে সবজি, ধান, পাট নিয়ে ত্রিমোহিনী ও কেশবপুর বাজারে যেতে বাধ্য হন।
স্থানীয় কৃষরা তাদের উপাদিত ধানসহ কৃষি পণ্যসামগ্রী সহজভাবে বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায়মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই মহাজনদের কাছে বাজার মূল্যের চেয়ে কমে দামে কৃষি পণ্য মালামাল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। তাছাড়া বর্ষা মৗসুমে এলাকার স্কুল,কলেজ গুলোতে আসতে হয় ছাত্র ছাত্রীদের। প্রায় ১/২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে পার হতে হয় মানুষের। দুপারের এলাকাবাসী জানান,কপোতাক্ষের উপর একটি সেতু নির্মাণ হলে কেশবপুরের সকল প্রতিষ্ঠানসহ বাজারটিও উন্নত হত এবং প্রতিবছর মধুমেলায় জনগনদের দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।ত্রিমোহিনী পোস্ট ই স্টোরের উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম ও সাকোর পাশে দোকানদার স্বপন দত্ত জানান সেতু নির্মাণ হলে ত্রিমোহিনী বাজারটি আরো উন্নত হতো। ত্রিমোহিনী বাজারের ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম রবি বলেন, কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রিজ নির্মিত হলে মানুষের আর কোন সমস্যা হতো না।
কপোতাক্ষ নদের সভাপতি বাবর আলী সরদার মন্টু জানান, সাকোর কপোতাক্ষর উপর সেতুটি র্নিমাণ হলে কেশবপুর, তালা, কলারোয়ার বিভিন্ন পেশার মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। দু’পারের এলাকাবাসি জানান, তাদের স্বার্থে প্রতি বছর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এই বাঁশের সাঁকোটি সংস্কার করে থাকে। মধুকবির স্বপ্নের কপোতাক্ষ নদের উপর একটি সেতু নির্মিত হলে পাঁচটি উপজেলার মানুষের পাল্টে যাবে জীবনযাত্রা।
বাঁশের সাকো দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ছোটে ছোটে যানবহন নিয়ে চলাচল করে থাকে।তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন। লিয়াকত আলী জমিদার সাংবাদিকদের জানান, তার উদ্যোগে, নাসির শেখসহ ২০/২৫ জন মিলে ২০০১ সালে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২৭৫ ফুট কপোতাক্ষ নদের উপর একটি সাঁকো নির্মাণ করা হয়। ঐ সময় সাকো উদ্বোধন করে ছিলেন, এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব। তিনি উদ্বোধনের সময় সাকোর জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে ছিলেন। প্রায় সময় বাঁশের সাকো ভেঙ্গে পড়ে আর তখন দুপারের মানুষের চলাচলের জন্য চরম দুভোগে পড়তে হয়।
ইতিমধ্যে সাকো ভেঙ্গে পড়ায় দুপারের মানুষের নিজস্ব অর্থ দিয়ে সেটি আবার মেরামত করার ফলে দুপারের মানুষ কোন রকমে চলাচল করতে পারছে। এখানে একটি সেতু নির্মাণ হলে দেয়াড়া ও ত্রিমোহিনী বাজার দুইটির সকল প্রতিষ্ঠানসহ বাজার দুইটি উন্নত হবে এবং প্রতিবছর মধুমেলায় জনগণের দুর্ভোগ কমবে। এখানে একটি ব্রিজ হোক আমরা সেটা চাই। ব্রিজটি তৈরি করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন দেয়া হয়েছে। দেয়াড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাবুর রহমান মফে ও কলারোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লান্টু বলেন, ত্রিমোহিনী ভায়া কলারোয়া কপোতাক্ষ নদের উপর সেতু নির্মাণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সেতু নির্মাণ হলে দু’পারের মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।
ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আনিছুর রহমান বলেন, ত্রিমোহিনী ভায়া কলারোয়া কপোতাক্ষ নদের উপর সেতু নির্মাণ হলে দু’পারের মানুষের পাল্টে যাবে জীবনযাত্রা । দুপারের বাজারগুলো আরো উন্নত হবে। এব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল বলেন, ওই স্থানে ব্রিজটি নির্মাণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলে ব্রিজটি নির্মাণ হবে।