শরণখোলায় অবৈধ ইট ভাটার রমরমা ব্যাবসা!

0
143

মোঃ আবু ছালেহ্, শরণখোলা

বাগেরহাটের শরণখোলার পল্লীতে অবৈধ ইট ভাটার রমরমা ব্যাবসা চলছে। এলাকার কতিপয় অসাধু চক্র আইন অমান্য করে বনভূমি উজাড় করে উপজেলা জুড়ে প্রায় অর্ধশত স্থানে স্থাপন করেছে ওই সব অবৈধ ভাটা।

সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে, এমন অবৈধ কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন এলাকার অতি মুনাফালোভী, বৃত্তবান ও প্রভাবশালী হোগলপাতি এলাকার বাসিন্দা মজিবর ফরাজী, সোনাতলা এলাকার মাওলানা আব্দুল বারি, বকুলতলা এলাকার প্রবাসী শামীম ফরাজী, ফারুক তালুকদার, কালীবাড়ি এলাকার লিটু হাওলাদার, নলবুনিয়া এলাকার নুরেসলাম মাঝি, সাভারের পাড় এলাকার মিজান তালুকদার, রাজাপুর এলাকার রুস্তম হাওলাদার, ভূইয়া মোস্তফা, খাঁদা চৌরাস্তা এলাকার কবির জোমাদ্দার, রাজাপুর তিন রাস্তা এলাকার সবুর হাওলাদার, দক্ষিন আমড়াগাছিয়া এলাকার হালিম মৃধা, উত্তর তাফালবাড়ি এলাকার ফজলু হাওলাদার, খাঁদা এলাকার কবির জোমাদ্দার, উত্তর মালিয়া এলাকার আলতাব গাজী, পান্না গাজী ও টনিক সহ আরো অনেকে। বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ায় এই অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে কারবারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়।

এছাড়াও ধানসাগর, রাজাপুর, তাফালবাড়ী সহ বিভিন্ন এলাকায় এসব অবৈধ ইট পোড়ানো হচ্ছে। এসময় তারা ফসলি জমির মাটি কেটে ইট তৈরি করছে আর ভাটার পের পাশে হাজার হাজার মন বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বিশাল স্তুুপ দেখা গেছে। কথা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়াছিম উদ্দিন জানান, এসব অবৈধ ভাটার কারনে আমাদের ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে পাশাপাশি ঐ জমিতে ফসল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই এ ধরনের কর্মযজ্ঞ কোন ভাবেই কাম্য নয়। প্রশাসনের তড়িৎ গতিতে ব্যাবস্থা নেয়া উচিৎ।

এলাকাবসী জানায়, কারবারিরা নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো আবাসিক জন-বসতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে, কৃষি জমি ও সড়কের পাশে ভাটা স্থাপন করে ব্যবসা করতেছেন। অননুমোদিত এসব ভাটায় দেধারছে পুড়ছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছ। দিন দিন এ উপজেলায় খেঁজুর গাছের রস এখন গল্পে পরিনত হচ্ছে। সব খেজুর গাছ ওই ভাটায় পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। ভাটার অগ্নিশীখার আসে পাশের গাছপালা শুকিয়ে যাচ্ছে।

কালো ধোয়ায় আকাশ বাতাস দূষিত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তেছে। ফলে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে আর মানুষের জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন কমতেছে। এসব পরিবেশ দেখে মনে হয় এখানে সরকারি কোনো আইন চলে না, চলে ভাটা মালিকদের নিজস্ব আইন-কানুন। ভাটার বিষাক্ত ধুলা বালি, কালো ধোঁয়া ও আগুনের তাপে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এলাকার সবুজ বনজ সম্পদ এবং মাতৃত্ব হারাচ্ছে ফলজ গাছ।

এ অবস্থা চলতে থাকলে ভাটার আগুনের তাপে উর্বরতা হারিয়ে দিন দিন অভিশপ্ত মরুভূমিতে পরিনত হবে ফসলি জমি। শ্বাস কষ্টজনিত রোগে ভুগছেন ভাটা এলাকার শিশুসহ সব বয়সের মানুষ। বির্পযয়ের মুখে পড়ছে এলাকার জনস্বাস্থ্য। ভাটাগুলো লোকালয়ের একেবারে কাছে হওয়ায় চরম মূল্য দিতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

পরিবেশ সংরক্ষন আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এক শ্রেনীর প্রভাবশালীরা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ভাটা নির্মান করেছে। সচেতন মহলের দাবি ভাটার নির্গত ধোঁয়ায় বায়ু দূষিত হয়ে নানা রোগ ব্যাধিসহ কৃষিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে। একের পর এক প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিপর্যস্থ শরণখোলায় পরিবেশ ধ্বংশকারী এসব অবৈধ কর্মকান্ড চলতে থাকলে অচিরেই এক মহা বিপর্যয় শুরু হতে পারে এমন আশঙ্কায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত।

প্রকাশ্যে পরিবেশের এমন ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কতর্িৃপক্ষের দায়সারা বক্তব্যই যেন তাদের দায়িত্ব। এসব কর্মকান্ডের প্রায় মাঝামাঝি সময় পার হলেও যাদের দেখার দায়িত্ব তারা কেউ জানেন না। প্রতি বছর ওই সকল ধ্বংশযজ্ঞ চলতে থাকলেও এ পর্যন্ত সংশ্লিষ্টরা ওই সকল অবৈধ কারবারীদের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করেননি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। শরণখোলার কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট সাংবাদিক, সমাজ সেবক, তারুন্যের অহংকার আসাদ-আসাদুজ্জামান তালুকদার বলেন, প্রত্যেক বছর এই অবৈধ কারবার চলে। সংশ্লিষ্টরা আইন প্রয়োগে একটু দায়িত্ববান না হলে মানুষ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হতেই থাকবে। প্রকাশ্য দিবালোকে এই অবৈধ কর্মকান্ডে নগদ নারায়নে তুষ্ট হওয়ার কোন গল্প না থাকলে স্থানীয় প্রশাসন কাউকে এই কারবার করতে দিতনা বলে মন্তব্য তার।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশবাদী আইনজীবি এসোসিয়েশন (বেলা) এর সিনিয়র আইনজীবি এ্যাডভোকেট সাইদ আহম্মেদ কবির জানান, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৩ অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রসাশক এর কার্যালয়ের অনুমতি ছাড়া কোন ইট-ভাটা, প্র¯ু‘ত করা যাবেনা এবং কাঠ বা গাছ জ্বালানী হবেনা। অবৈধ ওই কর্মকান্ডের কারনে মানুষ রোগাক্রান্ত হবে। মারাত্নক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিবে। এই অঞ্চলের উদ্ভিদ, ফলজ ও বনজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা আশা করবো সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পরই পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ঠ জেলা প্রসাশক প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন।

যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর বাগেরহাট এর উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল জানান, আমি জানিনা তবে খোঁজ নিয়ে দেখব। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজগর আলী জানান, বিষয়টি আমি জানিনা। তবে কোথায় পোড়ানো হচ্ছে আমাকে বলেন, আমি ব্যবস্থা নিব।

Comment using Facebook