নড়াইলের মেধাবী ছাত্রী রুমকি মুখ দিয়ে লিখে এইচএসসিতে সাফল্য: অর্জন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হবে কি?

0
231

নড়াইল সংবাদদাতা

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ইশানগাতী গ্রামের আব্দুর রউপ মোল্যার ঘরে ও মা আবেদা বেগমের গর্ভে জন্ম গ্রহণ করে রুমকি।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস জন্ম থেকে রুমকি খানম প্রতিবন্ধী তার দুই হাত ও পা অচল তবুও দমেনি সে, পড়াশোনা করে হতে চাই বড় কর্মকর্তা।

ছোটবেলায় রুমকিকে পড়াশোনা করাতে চাননি তার মা-বাবা। তবে মেয়ের অদম্য আগ্রহে তাকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করানো হয়। হাত-পা অচল হলেও রুমকির শ্রবণ ও প্রখর মেধায় আজ সে অনেক এগিয়ে। ২০২২ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৪ দশমিক ৫৮ পেয়েছেন রুমকি। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে যে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সেগুলোর সব কয়টিতে এ প্লাস পেয়েছেন।

তবে ভালো ফল করেও ভবিষ্যতের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে রুমকি ও তার পরিবার। আব্দুর রউফ মোল্যা ও আবেদা বেগমের রুমকিসহ আরো দুটি সন্তান রয়েছে বড় ছেলে রেজওয়ান ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সি,এস,ই পড়ে, ছোট মেয়ে রুবায়া খানম এ বছর এস,এস,সি পরীক্ষা দিবে। তাদের এই লেখার পড়ার খরচ যোগাতে তার পিতা হিমসিম খাচ্ছে।

রুমকি উপজেলার আমাদা আদর্শ কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ- ৪.৫৮ পেয়ে কৃতকার্য হন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একাই জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। এস এস সিতে জিপিএ-৩ দশমিক শূন্য ৬ এবং জেএসসিতে পেয়েছিলেন ৩ দশমিক ৭৫। এস এস সি ও জেএসসিতে জিপিএ কম থাকায় এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া হয়নি রুমকি”র। জন্ম থেকেই রুমকি প্রতিবন্ধী। তার দুই হাত ও দুই পা বাঁকা ও শুকনো। কোনো হাতে পায়ে শক্তি নেই। নিজে চলাফেরা করতে পারেন না। গোসল, খাওয়াসহ সব কাজেই তাকে অন্যের সাহায্য নিতে হয় তার চলাফেরা হুইল চেয়ারে। ছোট বেলায় রুমকি বাম হাতে কলম ধরে বাম পায়ের মুখের সহযোগিতায় লিখেন। তবে বড় হওয়ার পর মুখে কলম ধরে ডান হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে লেখেন। তার পরও রুমকির হাতের লেখা বেশ সুন্দর। মুখে কলম ধরে ছবিও আঁকেন রুমকি।

রুমকি বলেন, ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছা সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রথম পছন্দ। পড়াশোনা শেষ করে পেশা হিসেবে সে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবা করতে চান রুমকি। রুমকি আরো বলেন, আমার ছাত্র জীবনে কখনো প্রাইভেট পড়িনি যতটুকু করেছি নিজের চেষ্টায় ও ইচ্ছায়।

সমাজের কোন বৃত্তবান ব্যক্তি আমার জন্য সাহায্যের হাত বাড়ায় নাই। এমন কি আমি কোন প্রকার ভাতাও পাই না। একজন প্রতিবন্ধী হিসাবে তো প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার যোগ্য তাও পাই না। আমার একটা চাওয়া আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই এবং লেখাপড়া শেষ করে একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হতে চাই। আমি আমার লেখাপড়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মর্তুজার সহোযোগিতা কামনা করছি। রুমকি’র মা আবেদা সুলতানা বলেন, আমার মেয়ের খুব ইচ্ছা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। এখন উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তিন ছেলে মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার মতো আর্থিক সচ্ছলতা নেই রুমকি’র বাবার। আর রুমকির জন্য খরচ বেশি হবে।

রুমকিরর বাবা আবদুর রউফ মোল্যা বলেন, তার শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য ছোটবেলায় রুমকির পড়শোনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর ইচ্ছার কাছে আমরা হার মেনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আরও নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্ঠি হবে।

Comment using Facebook