ঝিনাইদহে কলেজ ঘেঁষে মিল-চাতাল, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

0
307

এম, সাইফুজ্জামান তাজু, হরিণাকু-ু (ঝিনাইদহ)

ঝিনাইদহের হরিণাকু-ুতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে মিল চাতাল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জনবসতি এলাকায় গড়ে ওঠা এসব মিল চাতালের কারনে ঘটছে পরিবেশের বিপর্যয়। চাতালে ধান সিদ্ধ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে এর কুঁড়া। ফলে কালো ধোঁয়া আর ছাই উড়ে দূষিত হচ্ছে বাতাস।

আশপাশের বাড়িঘর ও গাছপালার ওপর তৈরি হচ্ছে কালো স্তর। এর প্রভাবে শিক্ষার্থীরা ভুগছে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত নানা সমস্যায়। .

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন শিক্ষার্থী, স্থানীয় জনসাধারণ এবং পথচলতি মানুষ। উপজেলায় ৪১টি মিল চাতাল রয়েছে। এর একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।

গায়ের জোরেই চলছে এসব মিল চাতাল। তবুও দেখার যেন কেউ নেই। শহর থেকে উত্তরে মাত্র এক কিলোমিটার দুরে ব্যস্ততম সাধুহাটি-তৈলটুপি সড়কের পাশে অবস্থিত উপজেলার একমাত্র সরকারি লালন শাহ কলেজ। এর গা ঘেঁষে রয়েছে অন্তত ১৬টি মিল চাতাল। এই এলাকায় রয়েছে আরও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

চারপাশে রয়েছে জনবসতি। আর সড়কের দুই ধারে স্থাপনা গড়ে তোলার ফলে ওই এলাকার সড়ক সংকুচিত হয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোটবড়ো দুর্ঘটনা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেদারসে চলছে এর কার্যক্রম। সরেজমিনে কলেজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির সামনে-পিছনে ও দুই পাশে রয়েছে একাধিক মিল চাতাল। চাতালে চলছে ধান সিদ্ধ ও শুকানোর কাজ। সপ্তাহে ৪/৫দিন চলে ধান সিদ্ধ কার্যক্রম। চাতালের নির্গত ধোঁয়া ও ছাই উড়ছে। ফলে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ আশপাশের মানুষদের চলাফেরা দায়।

এ সময় মুখে কাপড় চেপে চলতে দেখা যায় অনেককেই। শুকুর আলী নামে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং বিকেল থেকে রাত নয়টা দশটা পর্যন্ত ধান সিদ্ধ করা হয়। ওই সময় ধানের কুঁড়ার ছাই শ^াসনালিতে ঠোকাসহ চোখেমুখে এসে পড়ে। এতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেখ সাদি নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, চাতালের নির্গত কালো ধোঁয়া ও ছাইয়ের কারনে কলেজে ঢুকতে বেরোতে মুখে কাপড় চাপতে হয়।

এ ছাড়া যখন ক্লাস থাকে না তখনও সময় কাটাতে কলেজের সবুজ চত্তরে চলাফেরা ও খেলাধুলাও করা যায় না। অনেকে এর প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কলেজটির অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমান বলেন, চাতাল থেকে নির্গত ধোঁয়া ও ছাইয়ের কারনে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে।

প্রতিষ্ঠানে তাদের চলাফেরাও দায় হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে তাদের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ফল হচ্ছে না। স্থানীয় চালকল মালিক সমিতির সাধারণ আব্দুস সাত্তার বলেন, যখন এসব চাতাল করা হয় তখন পরিবেশের ছাড়পত্র প্রয়োজন হতো না। এখন নিয়ম হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ খোঁজ না নেওয়ায় আমরাও আর ছাড়পত্র নিইনি।

মানুষের ক্ষতি হলেও এখন আর কিছুই করার নেই বলেও তিনি জানান। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জামিনুর রশিদ বলেন, বাতাসে ছাই ও কালো ধোঁয়া মানুষের শ্বাসসনালির মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। এতে শ্বাসসকষ্ট, অ্যাজমাসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ জাতীয় রোগীর সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর, যশোর অঞ্চলের সহকারি পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, জনবলের ঘাটতি থাকায় আমরা সেভাবে খোঁজ নিতে পারিনি। আর এই বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। দ্রুত ঝিনাইদহে আমাদের একটি অফিস হবে তখন সব বিষয়েই আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবো। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

Comment using Facebook