স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
যশোরের মণিরামপুরে পূর্ণিমা দাস (৪৫) নামে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় গ্রাম্য শালিসে বিচার না পেয়ে লজ্জায় ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের। সোমবার (৭ মার্চ) নিজ বাড়িতে বিষপানে আত্মহত্যা করেন তিনি।
ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিকেলে পুলিশ তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে। পূর্ণিমা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর ঋষিপল্লির সনজিৎ দাসের স্ত্রী। তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলের জননী ছিলেন। এদিকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনার শালিস করতে গিয়ে ফেঁসেছেন মনোহরপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ফকির, ওই ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গোলাম মোস্তফা ও মনোহরপুর গ্রামের স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক আবুল সরদারসহ চারজন।
আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। আর ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে মেম্বর সিরাজুল ফকিরের ভাই মিজানুর ফকিরের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে গৃহবধূর স্বামী সনজিৎ দাস বাদী হয়ে ৫ জনের নামে থানায় মামলা করেন। পুলিশ সিরাজুল ফকির ও আবুল সরদারকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে। তাদের বাড়ি মনোহরপুরের কাচারিবাড়িতে। এরআগে গত সোমবার (৭ মার্চ) রাতে সিরাজুল ফকির, আবুল সরদার ও আসাদুজ্জামান আসাদ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে হেফাজতে নেয় থানা পুলিশ। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ আসাদুজ্জামান আসাদকে ছেড়ে দিয়েছে।
জানা যায়, গত শনিবার (৫ মার্চ) রাতে মনোহরপুর ঋষিপল্লির বাসিন্দা পূর্ণিমা দাসকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় স্থানীয় কাচারিবাড়ির মিজানুর ফকির। পরের দিন রবিবার স্বামী সনজিৎ দাসকে নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে আসেন পূর্ণিমা। অভিযোগপত্র লেখার পর সনজিৎ দাসের কাছে এলাকা থেকে ফোন করেন মনোহরপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ফকির। মোস্তফা, পূর্ণিমা দাসের ওয়ার্ডের মেম্বর আর সিরাজুল ফকির ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত মিজানুর ফকিরের ভাই। তারা সনজিৎ ও তার স্ত্রীকে এলাকায় ডেকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমাধানের কথা বলে অভিযোগপত্রটি ছিড়ে ফেলেন।
পূর্ণিমার স্বামী সনজিৎ দাস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ফিরে গেলে অভিযুক্ত মিজানুর ফকিরকে বাদে রবিবার (৬ মার্চ) রাতে শালিসে বসেন সিরাজুল মেম্বর, মোস্তফা মেম্বর ও আবুল সরদারসহ কয়েকজন। শালিসে তারা পূর্ণিমাকে অপমানজনক নানা কথা বলেন। অভিযুক্ত মিজানুর উপস্থিত না থাকায় শালিস হয়নি।
এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে পরের দিন এলাকায় হইচই পড়ে যায়। বিচার না পেয়ে সোমবার বেলা ১০ টার দিকে নিজ বাড়িতে কীটনাশক পান করেন পূর্ণিমা। পরে তাকে স্থানীয় এক চিকিৎকের কাছে নিলে তিনি পূর্ণিমাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে দলিত পরিষদের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন।