হরিণাকুন্ডু (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা
ঝিনাইদহের হরিণাকু-ুতে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে ৯৯জন গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা হাতিয়েছে তারা।
সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে আমানত সংগ্রহের নামেও অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে আল-কারিম ফাউন্ডেশন নামে একটি ভুঁইফোড় প্রতিষ্টান। এ ক্ষেত্রে তারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মাধ্যমে এই টাকা সংগ্রহ করে প্রতারিত করেছে সাধারণ মানুষকে। প্রতিকার পেতে প্রতারিত গ্রাহকরা কথিত ওই প্রতিষ্ঠানের ফিল্ড কর্মকর্তার কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো ফল হচ্ছে না। আর পরিচালকদের নামে মামলার অজুহাত দেখিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন টাকা আদায়কারি মাঠকর্মী। ফলে অসহায় হয়ে টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন গ্রাহকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক, সমবায় অধিদপ্তর বা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ২০০৯ সাল থেকে উপজেলার রামনগর ও ভবানিপুর এলাকায় ডিপিএস ও এফডিয়ারের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করে ওই ফাউন্ডেশনটি। গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে প্রথমে কুষ্টিয়া, যশোরসহ কয়েকটি শাখা অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। পরে শুরু হয় টাকা আদায়ের কাজ। এক, দুই বা তিন বছর মেয়াদি এফডিআর এবং মাসিক কিস্তিতে নেওয়া হতো ডিপিএসের নামে টাকা।
এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের দেখানো হতো বছরে এককালীন জমার দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার লোভনীয় অফার। আমিরুল ইসলাম নামে রামনগর গ্রামের রিকশাভ্যান চালক এক গ্রাহক জানান, তিনি ২০১৯ সালে এককালীন তিন লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। তিন বছর পর দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল।
এছাড়া এই তিন বছরে তিনি আরও একটি ডিপিএসের মাধ্যমে এক লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে মাঠকর্মী টাকা জমা দিতে নানা টালবাহানা করছে। পরে করোনাকালে কোম্পানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে এখন আর টাকা ফেরত দিচ্ছে না। তিল তিল করে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের সব সঞ্চিত অর্থ এই ফাউন্ডেশনে জমা দিয়ে তিনি এখন নি:স্ব হয়ে গেছেন। সোহেল রানা নামে একই গ্রামের এক ফার্মেসি মালিক জানান, তিনি ২০১৮ সালে তিন বছর মেয়াদি দুটি ডিপিএস খোলেন। একটিতে প্রতিমাসে দুই হাজার এবং অন্যটিতে তিনশ‘ করে টাকা জমা দিতেন। তিনি প্রায় এক লাখ টাকা জমা দিয়েছেন।
মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও টাকা ফেরত দিচ্ছে না। কোম্পানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, পরিচালকদের নামে মামলা করেছি এমন অজুহাতে মাঠকর্মী আমাদের ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু আমিরুল, সোহেল রানা নয় এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন ওই এলাকার আলমসাধু চালক টুটুল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি তাইজাল হোসেন, সজিব, পান ব্যবসায়ি আবুল কাসেম, রাজু আহম্মেদ, মটর ম্যাকানিক আক্কাস আলী, স্বামী পরিত্যক্ত রোজিনা খাতুন, গার্মেন্টস ব্যবসায়ি পান্নু আহাম্মেদসহ ৯৯জন অসহায় মানুষ। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৬০ হাজার থেকে শুরু করে চার লাখ পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এভাবে এই এলাকা থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি। এমদাদুল হক রিপন নামে স্থানীয় একটি মসজিদের সভাপতির কাছে সরল বিশ্বাসে এই টাকা জমা দিয়েছিলেন এসব ভুক্তভোগীরা। সে একই গ্রামের হাবিল উদ্দিনের ছেলে।
জানতে চাইলে কথিত ওই মাঠকর্মী এমদাদুল হক রিপন বলেন, কোম্পানি আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। ইতোমধ্যে আমরা যশোর এবং কুষ্টিয়া ব্রাঞ্চের মাঠকর্মীরা পরিচালকদের নামে মামলা করেছি। সারাদেশে কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার। তবে টাকার পরিমাণ এক কোটি নয় সম্ভবত সতের লাখের একটু বেশি হবে বলে তিনি জানান। হরিণাকু-ু থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি প্রতারণার মামলা হয়েছিল। বর্তমানে ঝিনাইদহ পিবিআই মামলাটির তদন্ত করছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, চক্রটি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের এজেন্ট নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমে টাকা নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত এই প্রতারক চক্র আইনের আওতায় আসবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিউলী রানী জানান, এই নামে তাদের দপ্তর থেকে ঢাকা বা জেলা থেকে কোনো নিবন্ধন নেই। আর এ বিষয়ে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি।