নওয়াপাড়ায় ঘটতে চলেছে তেল কাণ্ড: নজরদারি নেই

0
227

মফিজুর রহমান দপ্তরী

যশোরের শিল্প বাণিজ্য ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়ায় আবারও ঘটতে চলেছে লবণ কান্ডের মত তুলকালাম কান্ড। এবার লবণ নিয়ে নয়, সয়াবিন তেল নিয়ে এমন কান্ড ঘটতে পারে বলে আশংকার কথা জানিয়েছে বেশ কিছু ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণ। তাদের দাবি, যশোর থেকে ভোক্তা অধিকার নওয়াপাড়া বাজারে গত বৃহস্পতিবার বোতলের গায়ের দাম মুছে ফেলার দায়ে ১৯ হাজার টাকা জরিমানা করলেও স্থানীয়ভাবে বাজার মনিটরিং না থাকায় এমন কান্ড ঘটতে পারে।

তবে প্রশাসনের নজরদারি ও যে সকল ব্যবসায়ী বেশিদামে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন তাদেরকে শাস্তির আওতায় না আনতে পারলে এমন কান্ডে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, গতবছর উড়ো খবরে ও লবণের কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে সাধারণ ভোক্তাদের পকেট থেকে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলো এক ধরনের সিন্ডিকেট। যে কারণে রাতারাতি বাড়তি টাকা দিয়ে লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। যার যা তহবিল গচ্ছিত ছিল, তাই নিয়ে বাজারে এসে লবণ কিনতে শুরু করে। যার ফলে ব্যবসায়ীদের রাতারাতি পোয়া বারো হলেও ক্ষতির মুখে পড়ে সাধারণ ক্রেতারা।

যদিও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও স্থানীয়দের জন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কঠোর পদক্ষেপে সে কান্ড বন্ধ হয়েছিলো। ঠিক সেই লবণ কান্ডের মত সয়াবিন তেলের আরো একটি কান্ড ঘটতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ক্রেতারা। সারাদেশে দ্রব্যমুল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির নেতিবাচক প্রভাব নওয়াপাড়া বাজারে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে অধিক মুনাফার লোভে সয়াবিন তেলের কৃত্তিম সংকট দেখিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে শক্তিশালী অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।

শিল্প বানিজ্য ও বন্দরনগরী নওয়াপাড়ার বড় বড় পাইকারী ব্যবসায়ী ও দোকানিরা পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে সয়াবিন তেল মজুদ করে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করছে বলেও এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে। খোলা তেল ও প্যাকেটজাত তেল গুদামজাত করে রমজান মাসে বাড়তি মোনাফার লোভে তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছে বলে জানান ভোক্তারা। প্যাকেটজাত তেলের লেভেল থেকে মূল্য মুছে দিয়ে অধিক দামে তেল বিক্রিরমত অপরাধেও জড়িয়েছে কেউ কেউ।

এতে চরম ক্ষুদ্ধ ও অসহায় হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। তেলের বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সারাদেশের বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালিত হলেও অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া বাজারে প্রশাসনের নেই কোন নজরদারি। ফলে ইচ্ছেমত ভোক্তা সাধারণের পকেট কাটছে ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার নওয়াপাড়ার কাঁচা বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যে যার ইচ্ছেমত সয়াবিন তেলের দাম হাকাচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের তেল লিটার প্রতি ১৮০ টাকা হলেও দাম নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। আবার কোন কোন ব্যবসায়ী তেল মজুদ থাকা সত্বেও বিক্রি করছেনা। বাধ্য হয়ে বেশি দামে তেল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আমরা যেমন দামে কিনছি তেমন দামে বিক্রি করছি। এদিকে আবিদ আব্দুল্লাহ নামে একজন ভোক্তা বলেন, একেক দোকানে একেক দাম, তেল নেই যা আছে তা দাম বেশি এমন শর্তে তেল বিক্রি করছেন তারা।

ক্রেতারা জানান, আমরা আসলে ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। একদিকে সয়াবিন তেলের বাজারে অরাজকতা চলছে অথচ প্রশাসনের কোন পদক্ষেপই চোখে পড়ছেনা। সাধারণ ভোক্তাদের দাবী প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত বাজার মনিটরিং করা হোক, অন্যথায় লবণকান্ডের মত আরেকটি সয়াবিন তেল কান্ডের আশঙ্কা রয়েছে জনমনে। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে জনৈক ব্যক্তি জানান, নওয়াপাড়া বাজারের অদুরে অনেক গোডাউনে সয়াবিন তেল মজুদ করে রাখা হয়েছে, যা কৃত্রিম সংকট তৈরী করে বেশিদামে বিক্রি করা হবে বলেও তিনি জানান।

এদিকে স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, যশোর থেকে নওয়াপাড়ায় এসে গত বৃহস্পতিবার ভোক্তা অধিকার নওয়াপাড়া বাজারে অভিযান চালিয়ে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ১৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করলেও অভয়নগর উপজেলা প্রশাসনের কোন উদ্যোগ নেই। জানা যায়, নওয়াপাড়া বাজারের শ্রী দূর্গা বাণিজ্য ভান্ডারকে বোতলের গায়ে লাগানো দাম মুছে ফেলার দায়ে ১০ হাজার টাকা, একই অপরাধে দত্ত ষ্টোর কে ৫ হাজার, পাল ষ্টোরকে ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় নিয়াম-সিয়াম ফাষ্টফুড হাউজকে দুই হাজার টাকাও জরিমানা করা হয়।

বেশি দামে তেল বিক্রি ও মজুদ রাখার ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাহ উদ্দীন-এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, নির্দিষ্ট দোকানের ঠিকানা পেলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা অতিদ্রুত নওয়াপাড়া বাজারে অভিযান পরিচালনা করব। কোন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Comment using Facebook