সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজে বাড়ছে দেশি-বিদেশী পর্যটক

0
414

বাগেরহাট সংবাদদাতা

স্থাপত্য শৈলীর অনন্য নিদর্শন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত ষাটগম্বুজ মসজিদ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এই স্পটগুলোতে প্রতি বছর ভ্রমণ করেন হাজার হাজার পর্যটক। তাদের ভ্রমণকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে করতে দিন-রাত কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদের নেতৃত্বে চলছে ট্যুরিস্ট পুলিশ খুলনা জোনের কার্যক্রম। টুঙ্গিপাড়া, বাগেরহাট, সুন্দরবন, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ায় রয়েছে পুলিশের এই বিশেষ ইউনিটের পাঁচটি জোন অফিস। আর একটি সাবজোন অফিস আছে মেহেরপুরে। ট্যুরিস্ট পুলিশ তথ্য অনুযায়ী, এসব জোন অফিসের পর্যটন স্পটগুলোতে ২০২১ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫২৩ জন দেশি পর্যটক, ৫৩৪ জন বিদেশি পর্যটক ও ১ হাজার ২২ জন ভিআইপি/গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ভ্রমণ করেছেন, যাদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করেছেন বাহিনীর সদস্যরা। দেশের পর্যটন শিল্পে গতি আনার লক্ষে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ টুরিস্ট পুলিশ।

পুলিশ বিভাগের বিশেষ এই ইউনিটটি নিয়মিত পুলিশেরই একটি অংশ। টুরিস্ট পুলিশের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় পর্যটকদের ঘিরে। করোনা মহামারির মধ্যে দেশের পর্যাটন শিল্প যখন ক্ষতিগ্রস্ত সে সময় টুরিষ্ট পুলিশের তৎপরতায় বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে দিনদিন পর্যাটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। টুরিস্ট পুলিশ বাগেরহাট ও সুন্দরবন জোন এর সদস্যরা পেশাদারিত্বের সাথে ও দেশি-বিদেশী পর্যাটকদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করায় এ সফলতার বলে মনে করছেন পর্যটকসহ সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটকদের জন্য ২৪ ঘন্টা সেবা নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশ গ্রহণ করেছে নানা পদক্ষেপ।এর মধ্যে ট্যুর অপারেটর হোটেল-মোটেল ও পর্যটন এলাকা স্টেকহোল্ডারদের সাথে উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষে নিয়মিত যোগাযোগ করাসহ দর্শনার্থী ও পর্যটকদের সাথে কথা বলে তাদের খোজ খবর নেয়া।

যশোর থেকে আসা আলি কদর নামের এক দর্শনার্থী বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে প্রথমে খানজাহানের মাজারে নেমেছি। সেখান থেকে ষাটগম্বুজ আসার সময় টুরিস্ট পুলিশ ভাইরা আমাদের পথ চিনিয়ে দিয়েছেন।

মোংলায় যাওয়ার জন্যও তারা আমাদের পথ দেখিয়েছেন। তাদের এই আন্তরিকতায় আমরা খুশি। ঢাকা থেকে আসা জাহান ও আনিকা নামের দুই তরুনী বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদে প্রবেশের সময় গেটেই টুরিস্ট পুলিশের গাড়ি দেখলাম। ভিতরে নিজেদের ইচ্ছেমত ঘুরলাম। কেউ কোন বিরক্ত করেনি। টুরিস্ট পুলিশ না থাকলে, হয়ত স্থানীয় বখাটেদের বিরক্তির শিকার হতে হত। প্রততত্ব অধিদপ্তর বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মোঃ যায়েদ বলেন, তারা সব সময় দর্শনার্থীদের খেয়াল রাখে। কেউ কখনও অসুস্থ্য হলে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন তারা।

এছাড়া কোন দর্শনার্থী যদি তার স্বজনদের হারিয়ে ফেলে তাদেরকে খোজার ক্ষেত্রেও টুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা রয়েছে। সব মিলিয়ে টুরিস্ট পুলিশের তৎপরতায় এই এলাকার পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা পেয়েছে। অপরদিকে, মোংলা ও সুন্দরবনের অভ্যন্তরে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। টুরিস্ট লঞ্চের পাসপারমিট চেক, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত, নির্ধারিত ভাড়া গ্রহন, নদী পথে আকস্মিক বিপদ আপদে দর্শনার্থীদের পাশে থাকেন টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা।

মোংলা ও সুন্দরবন সংলগ্ন পর্যটন স্পটে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে কাজ করে টুরিস্ট পুলিশের মোংলা জোন। এই জোনের অধীনে সুন্দরবনের করমজল মোংলাসহ কয়েকটি স্থাপনা রয়েছে। দি ওয়েভ টুর অপারেটর ও হলিডেস শিপিং লাইনসের মালিক আবুল ফয়সাল এম সায়েম বলেন, টুরিস্ট পুলিশ আসার পর থেকে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের সাহস অনেক বেড়েছে। আমরা যেখানেই যাই না কেন,মনেকরি কোন সমস্যা হলে টুরিস্ট পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করবে।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, বন বিভাগ ও টুরিস্ট পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা সুন্দরবনে নিরাপদ ভ্রমন নিশ্চিত করেছি।এছাড়া বিদেশী ও ভিআইপি দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বন বিভাগের পাশাপাশি টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

টুরিস্ট পুলিশ মোংলা জোনের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শেখ হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা তিন শিফটে ২৪ ঘন্টাই দর্শনার্থীদের সেবায় নিয়োজিত থাকি এর ফলে যেমন দর্শনার্থী বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। ভবিষৎতে এই ধারা অব্যহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Comment using Facebook