ঝিনাইদহের সড়কে অবৈধ যান ও বেপরোয়া গতিতে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল!

0
196

বিশেষ প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহের সড়কে অবৈধ যানের উপর ট্রাফিক আইনের সঠিক কার্যকারী পদক্ষেপের অভাবে অবৈধ যান, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকের জন্য সড়কে বয়েছে মৃত্যুর মিছিল।

অবৈধ যান ও চালকদের জন্যই আশংকাজনক হারে প্রতি বছরই বেড়েছে মহাসড়কগুলোয় সড়ক দুর্ঘটনা তাছাড়াও প্রতিদিনই অগণিত দুর্ঘটনায় পরিসংখ্যান বেড়েই যাচ্ছে বলে অভিযোগ জনমনে।

মহাসড়ক গুলোতে নিষিদ্ধ হওয়া তিন চাকার ছোট্ট-বড় গাড়িগুলোর অবাধ চলাচল লক্ষ করা যায়, অন্যান্য বাস ট্রাকের বেপরোয়া প্রতিযোগিতা আর চালকের উদাসীনতা এর মূল কারণ বলছে সচেতন মহল।

ঝিনাইদহের সড়কগুলো পরিদর্শনে দেখা যায়, সকাল সূর্য উঠার আগে থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অবাধে চলাচল করছে আলমসাধু, নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক ও ইঞ্জিনচালিত ভ্যান। শহর ও সড়কের যেখানে সেখানে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো করা হচ্ছে। সিগনাল না মেনে ছোটযানগুলো যত্রতত্র পার্শ্ববর্তী সড়ক থেকে উঠে পড়ছে মহাসড়কে। ফলে গতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়াই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে। অথচ ২০১৪ সাল ও এরপর থেকে কয়েক দফায় তিন চাকার যান মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয় হাইকোর্ট ও সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে। তবুও সেই নিষিদ্ধাদেশ আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

এই তিন চাকার যানের পাশাপাশি বাস, ট্রাক, মোটর সাইকেলগুলোও চলছে বেপরোয়া গতিতে, চলছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। তাদের কারণে জরুরি উদ্ধারে নিয়োজিত দ্রুতগামী ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সকেও বেগ পেতে হয়। ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে পাওয়া তথ্যে ২০১৭ সালে জেলায় ২৩৩ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ৪৮৬ জন আহত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে ২৬৮ দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৫০২ জন আহত হয়। ২০১৯ সালে ১১২ দুর্ঘটনায় ১৮২ জন আহত এবং ১৪ জন নিহত হয়। ২০২০ সালে ২৫৮ দুর্ঘটনায় ৪০৯ জন আহত এবং ২১ জন নিহত হয়। ২০২১ সালে ২৮৯ দুর্ঘটনায় ৩৮৫ জন আহত এবং ৪১ জন নিহত হয়। এছাড়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০৪টি দুর্ঘটনায় ১৭৬ জন আহত ও ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালগুলোতে ২০১৭ সালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৯৮৭ জন, ২০১৮ সালে ২২৫৫ জন, ২০১৯ সালে ৩০৮৯ জন, ২০২০ সালে ৩৭৪৫ জন এবং ২০২১ সালে ৪৭৩৮ জন ও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২২৯ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক শামিমুল ইসলাম বলেন, মোট দুর্ঘটনার ৩০ থেকে ৪০ ভাগই ঘটে তিন চাকার যানের কারণে, ৪০ ভাগ মোটরসাইকেল আর বাকি ২০ ভাগ বড় যানবাহনের কারণে ঘটে থাকে। বিশেষ করে তাদের অদক্ষতা আর দ্রুত গতি এর অন্যতম কারণ।

এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কমে আসবে দুর্ঘটনা। সঙ্গে চালকদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বরত বাহিনীকেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট দায়িত্বশীল হতে হবে।

ঝিনাইদহ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জানান, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে ও গতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত পুলিশের অভিযান চলছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার পাশাপাশি চালকদের সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সচেতনতা মূলক কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।

Comment using Facebook