ডুমুরিয়ায় যুবলীগ নেতার দখলে ৩৩ বিঘা সরকারি জমি!

0
183

ডুমুরিয়া সংবাদদাতা

খুলনার ডুমুরিয়ায় সরকারি ৩৩ বিঘা খাস জমি অবৈধ ভাবে ভোগ-দখল করছেন যুবলীগ নেতা ও তার এক নিকট আত্নীয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়নের খাগড়াবুনিয়া বিলে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন রয়েছে নিরব। সংশ্লিষ্ট সূত্র ও সরেজমিনে যেয়ে জানা গেছে, জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়নের খাগড়াবুনিয়া বিলে ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়নে জেএল নং ১৭৪ খাগড়াবুনিয়া বিলে প্রায় ৬ শ’ বিঘার অধিক মালিকানানাধীন জমির পাশাপাশি বেশ কিছু পরিমান সরকারি খাস খতিয়ানের জমি রয়েছে।

এ বিলের মধ্যে প্রায় ৮৫ টি ছোট-বড় মৎস্য ঘের আছে। এ দিকে মাগুরখালী ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ব্রজেন সরকার ও তার নিকট আত্নীয় (বোনের শশুর) খাগড়াবুনিয়া গ্রামের রঞ্জন কুমার বিশ্বাস যৌথ ভাবে ওই বিলের মধ্যে সরকারি ৩৩ বিঘা খাস জমি অবৈধভাবে দখলে রেখে গড়ে তুলছে মৎস্য ঘের। যার নেই কোন বৈধ দালিলিক প্রমাণ পত্র। প্রশাসনকে বৃদ্ধ আঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ ভাবে বহাল তবিয়্যতে সরকারি ওই জায়গায় মৎস্য ঘের পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদের নেতৃত্বে ওই এলাকার ১০/১৫ জন মৎস্য চাষীকে ওই জায়গা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হারিতে দিয়েছেন।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার লাঙ্গলমোড়া এলাকার বিধান সরকারের ছেলে ব্রজেন সরকার ও খাগড়াবুনিয়া এলাকার মৃত জৌতিময় বিশ্বাসের ছেলে রঞ্জন কুমার বিশ্বাস তারা যৌথ ভাবে ২১ এপ্রিল ২০১৫ সালে ডুমুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় থেকে ব্রজেন সরকারের নামে ৫.৯১ একর এবং রঞ্জন বিশ্বাসের নামে ৫ একর মোট প্রায় ৩৩ বিঘা সরকারি জমি একসনা চুক্তিতে ইজারা নেন। উক্ত ইজারা চুক্তিটি ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিলে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়।

কিন্তু তারা ওই জমির দখল আজও ছাড়েননি। অবৈধভাবে দখল করে রেখে ভোগ দখল করছে সরকারি জায়গা। উক্ত দখল কৃত জমিতে ব্রজেন সরকার স্হানীয় আরও ১০/১২ জন ব্যক্তিকে হারি চুক্তিতে বর্গা দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ৮/১০ হাজার টাকা মৌখিক চুক্তিতে নেন তিনি। খাগড়াবুনিয়া নুরুজ্জামান মোড়ল,শংকর সরদার, মিলন সরদার,দেবদাস মন্ডল,প্রবির মন্ডল এবং ব্রজেনের বোনের জামাই সুব্রত বিশ্বাস ও লাঙ্গলমোড়া এলাকার ধিমান মন্ডল, আঃ মান্নান সরদার, পঞ্চানন মন্ডল, মহাসিন সরদারসহ ১০/১২ জন ব্যাক্তি ওই জমি হারি চুক্তিতে নিয়েছেন।
এ প্রসংগে জমি হারিতে নেয়া খাগড়াবুনিয়া গ্রামের নুরুজ্জামান মোড়ল বলেন, জমির মালিক কে তা জানি নে। আমি ২ বিঘার মত জমিতে মৎস্য ঘের করি। তবে বাৎসরিক হারি বাবদ ব্রজেনকে টাকা দিতে হয়। টাকা তার ভগ্নিপতি সুব্রত আদায় করে থাকে। আব্দুল মান্নান বলেন, ৩ বিঘা জমি তার দখলে রয়েছে। ডিসিআর খরচ বাবদ ৫/৬ করে হাজার টাকা দিতে হয় ব্রজেন বাবুকে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে যুবলীগ নেতা ব্রজন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, আমার নেয়া ৫.৯১ একর জমি বাংলা ১৪২৭ সাল পর্যন্ত ডিসিআর কাঁটা আছে। ইতোমধ্যে আবার ১৪২৮ সালের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সপ্তাহ খানেক আগে শরাফপুর ইউনিয়ন তহসিল অফিসের নায়েব তদন্ত করতে এসেছিলেন।

এ বিষয়ে রঞ্জন কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন,২০১৫ সালে আমি ১৫ বিঘা জমির ডিসিআর নিয়েছিলাম এক বছর মেয়াদে। তারপর আর ডিসিআর কাটা হয়নি। আমার ওই জমি ব্রজেন ও তার লোকজনে খায়। আমাকে কিছুই দেয় না। এবিষয়ে শরাফপুর তহসিল অফিসের নায়েব আবু সাঈদ বলেন, বাংলা ১৪২৮ সালের জন্য আবেদন করেছে ব্রজেন সরকার । সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

স্হানীয় মাগুরখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানাসহ এলাকার অনেকই অবৈধ দখলার উচ্ছেদ পূর্বক সরকারি জমি উন্মুক্ত করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেন, অচিরেই সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখল মুক্ত করা হবে। প্রয়োজনবোধে অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

Comment using Facebook