ঝিকরগাছায় প্রায় ২শ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানানোর একমাত্র ভরসা কলাগাছের শহীদ মিনার!

0
168

আবুল কালাম আজাদ, ঝিকরগাছা

ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুরু হয়েছে নানা কর্মসূচি। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তেমন কোনো আয়োজনও নেই।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় ২২৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতর ১৭৮টিতে নেই শহীদ মিনার। প্রতিবছর এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, কাপড়, বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে মাতৃভাষা দিবস পালন করে। স্মরণ করে ভাষাশহীদদের।

উপজেলায় ১৩১ প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে শহীদ মিনার আছে ২৫টিতে, ৯ কলেজে আছে ৪টিতে, ৫২ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১৭টিতে থাকলেও বাকি ৩৫টিতে নেই। এদিকে উপজেলার ৩২টি মাদরাসার মধ্যে একটিতেও নেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মিনার। ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঝিকরগাছা বি এম হাইস্কুল।

প্রতিষ্ঠানটির নামফলকে লেখা ‘একটি শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’। বর্তমানে শিক্ষার্থী ১ হাজার ৬০০। প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শিক্ষার্থীরা এম এল হাইস্কুলের শহীদ মিনারে যায়।

জায়গা স্বল্পতায় সেখানে খুবই সমস্যার সৃষ্টি হয়। দেউলী নাভারণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এক সময়ে কাঠ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছে। এখন প্রায় এক কিলো মিটার দূরে পার্শ্ববর্তী নাভারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। উলাকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওলিয়ার রহমান বলেন, কোমলমতি ৩১২ শিক্ষার্থী নিয়ে তিন কিলো দূরে হরিদ্রাপোতা শহীদ মিনারে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না।

এবার কলাগাছ কিংবা কাঠ দিয়ে প্রতীকী শহীদ মিনার তৈরি করার চিন্তা আছে। উলাকোল ইমদাদিয়া হাফিজিয়া কওমী মাদরাসার সুপার সাইদুর রহমান বলেন, শহীদ মিনারে ফুর দেওয়া হয় না। আমরা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় কুরআন খতম ও দোয়া মাহফিল করি।

একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, ১৯৫২ সালে ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মকে জানতে হবে। এজন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা জরুরি। মানুষের অন্তরে দেশত্মবোধ, জাতীয়তাবোধ কিংবা ভাষার প্রতি প্রেমের বীজ বপণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই সেরা জায়গা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসমত আরা পারভীন জানান, ১৩১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৫টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে।

যেগুলো স্থানীয়রা কিংবা সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছে। সব প্রাইমারি স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য তালিকা দেয়া হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ,এস,এম জিল্লুর রশিদ বলেন, শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ নেই। তবে একটি নির্দেশনা এসেছিল সব বিদ্যালয়ে একই আকার ও আয়তনের শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হক জানান, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। কেউ যদি আর্থিক সংকটের কারণে নির্মাণ করতে না পারে তাহলে অর্থ বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে।

Comment using Facebook