পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের প্রধান পৌর কাউন্সিলর!

0
235

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে যশোরের চৌগাছা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তফা বিশ্বাসসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৬। শুক্রবার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৬) অভিযানে সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানাধীন বাইগুনি এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাবের মুখপাত্র লে: কর্ণেল মোশতাক আহমদ জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ডিবি পরিচয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে।

পুলিশ পরিচয়, পোষাক ও অস্ত্র দেখে তাদের ভয়ে কিছু বলতে সাহস পেত না। তাদের বিরুদ্ধে এরকম পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগ অনেক আগের। সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শুক্রবার রাতে আমাদের অভিযানিক দল সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটার বাইগুনি গ্রামের হারুন আর রশিদ ডিগ্রী কলেজের দক্ষিণ পাশে অবস্থান নেয়। তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল দেখে র‌্যাব চ্যালেঞ্জ করে।

এ সময় সন্তোষজনক উত্তর তারা র‌্যাবকে দিতে পারেনি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা স্বীকার করে ডিবি পুলিশের পোষাক ও খেলনা অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাইসহ নানা ধরণের অপরাধ করছে। র‌্যাব তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, একটি মোটরসাইকেল, একটি খেলনা পিস্তল, দু’টি পিস্তলের কভার, একটি ওয়াকিটকি, দু’টি ডিবি পুলিশের পরিচয় পত্র ও পোষাক, দু’টি হ্যান্ডকাপ, দু’টি পুলিশ ফিল্ডক্যাপ, একটি পুলিশ বেল্ট, একটি ভুয়া পুলিশের আইডি কার্ড, চারটি মোবাইল ফোন, অস্ত্র রাখার একটি ব্যাগ ও পিস্তল বাধার চেইন উদ্ধার করে। তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরায় এদের একটি বিশাল চক্র রয়েছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে এদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের দিয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা। সংশ্লিষ্ট থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে, এলাকাবাসী জানায়, প্রায় দুই দশক আগে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তফা বিশ্বাস। সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ধরা পড়লে চাকরি হারান। এরপর এলাকায় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। পরবর্তীতে চৌগাছা পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় একাংশের ছত্রছায়ায় নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, আপোস-মীমাংসার নামে বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তারা বিরুদ্ধে। তিনি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকারী চক্র গড়ে তোলেন। তবে এ বিষয়টি জানাজানি হয়েছে গ্রেফতারের খবর প্রকাশের পর। এ নিয়ে নানা সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কাদের ছত্রছায়ায় এতদিন ছিলেন গোলাম মোস্তফা, সেটি কেউ কেউ ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করছেন। একজন জনপ্রতিনিধির এমন ন্যাক্কারজনক কর্মকা-ে সম্পৃক্ততার খবের লজ্জিত এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফার নামে চৌগাছা থানায় একটি মামলা আছে। ২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির এই মামলা হয়। চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নূর উদ্দীন আল মামুন হিমেল বলেন, ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান বহন করে না। গোলাম মোস্তফার অপরাধ ব্যক্তিগত। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তিনি আরও বলেন, বিধিমালা খতিয়ে দেখে কাউন্সির মোস্তফার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

Comment using Facebook