আবুল কালাম আজাদ, ঝিকরগাছা
ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালীতে ভালোবাসা দিবসের উপহার হিসেবে শীতপ্রধান দেশের টিউলিপ ও লিলিয়াম চাষ করা হয়েছিল। ভালোবাসা দিবসের আগেই ফুটেছিল টিউলিপ।
এবার হাসলো ভিনদেশী সুগন্ধি লিলিয়াম। লিলিয়াম চাষের সফলতায় আশা জাগাচ্ছে স্থানীয়দের। গদখালীতে এ ফুল চাষে নবদিগন্ত তৈরি হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। কৃষি বিভাগ বলছে, সাদা, গোলাপী, কমলা, হলুদ, লালসহ ৮টি রঙের হয়ে থাকে লিলিয়াম। আদি নিবাস নেদারল্যান্ড।
তবে জার্মানি, কানাডা, আমেরিকার মতো শীতপ্রধান দেশে ব্যাপকভাবে এ ফুলের চাষ হয়। ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে থাকলে লিলিয়ামের বীজ ভালো থাকে।
বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় এই ফুলের বীজ সংগ্রহ করা বেশ কঠিন। আমদানি করা প্রতিটি লিলিয়াম দেশে তিন’শ থেকে সাড়ে তিন’শ টাকায় বিক্রি হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, গদখালীর ফুলকানন পানিসারায় সূর্যের আলো ও তাপ নিয়ন্ত্রিত শেডের মধ্যে সারি সারি ফুটে রয়েছে লিলিয়াম। ছড়াচ্ছে সুগন্ধ।
ভিনদেশি এ লিলিয়ামে বেশ আগ্রহ ফুলপ্রেমিদের। প্রতিদিন ফুলক্ষেত দেখতে আসছেন দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। দুই শতক জমিতে লিলিয়াম চাষ করেছেন পানিসারা গ্রামের আজিজুর রহমান। তার দাবি, বাংলাদেশে এটিই প্রথম বাণিজ্যিক চাষ।
তিনি বলেন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরআরএফ পরীক্ষামূলকভাবে চাষের জন্য ৮৪টি লিলিয়াম ফুলের বাল্ব (কন্দ) আমাকে দেয়। ওই গাছের ফুলের খুব চাহিদা ছিল কিন্তু বীজ সংরক্ষণ করতে পারিনি। পরে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র আমাকে ৪০০ কন্দ দেয় এর থেকে আমি এবার বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছি।
হাড়িয়া গ্রামের মাঠে লিলিয়াম ফুলের পরীক্ষামূলক চাষ করেছেন সাজেদা খাতুন। সাফল্য আসায় তিনি এখন উৎপাদন করতে চান বাণিজ্যিকভাবে। সাজেদা বলেন, ‘শয্যা তৈরির পর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেওয়া ৪০০ লিলিয়াম ফুলের বাল্ব (কন্দ) রোপণ করি। ৪২ দিনের মাথায় গাছে ফুল ফোটে। বারি ১ ও ২ জাতের ৪০০টি গাছেই ফুল ফুটেছে।
অপর চাষি সোনিয়া পারভীন বলেন, কৃষি গবেষণা কেন্দ্র আমাকে বীজ দেওয়ার পর ডিসেম্বরে প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তায় তা রোপণ করি। রোপনের প্রায় দুই মাস পর ফুল আসা শুরু করেছে।
জমির ছাউনিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ধরনের নেট। এটি লাভজনক চাষ। লিলিয়ামের একটি স্টিক ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করা যায় বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে প্রথম লিলিয়াম ফুলের চাষ শুরু তিনি শুরু করেন জানিয়ে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ২০০৮ সালে আমি নিজেই ১০ কাঠা জমিতে চাষ করেছিলাম। সে সময় প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে বীজ সংগ্রহ করি। নেদারল্যান্ড থেকে ভারতের কৃষি বিভাগ লিলিয়ামের বীজগুলো এনেছিলেন।
তবে জমি থেকে বীজ সংগ্রহের পদ্ধতি জানা না থাকায় পরবর্তীতে আর এই ফুলের চাষ করা সম্ভব হয়নি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন এই ফুলের বীজ কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় তার উপর গবেষণা করে একটা উপায় বের করেছেন। আগামীতে গদখালির মাঠে এই ফুলটির ব্যাপক চাষ হবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফারজানা সিনথান বলেন, দেশে লিলিয়ামের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ২০১৫ সাল থেকে লিলিয়াম ফুলের ওপর গবেষণা শুরু করা হয়। ২০১৭ সালে এসে সফলতা আসে। এতে দেশের আবহাওয়া উপযোগী দুটি জাত (বারি লিলিয়াম-১ ও বারি লিলিয়াম-২) উদ্ভাবন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বাল্ব লাগানো থেকে শুরু করে কিভাবে তা সংরক্ষণ করবো, কীভাবে লাইফ বাড়ানো যায়, কীভাবে বাল্ব থেকে বাল্ব উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা চলছে। সবচেয়ে জরুরি হলো বাল্ব সংরক্ষণ। যদি এটা সংরক্ষণ করতে না পারি তাহলে বাল্ব আমদানি করতে বিরাট একটি টাকা দেশের বাইরে চলে যায়।