আবিদুল ইসলাম, শৈলকুপা(ঝিনাইদহ)
ছাদে দেখা দিয়েছে ফাটল। কোথাও কোথাও পলেস্তারা খসে পড়ছে, বেরিয়ে পড়েছে রড। এমন নাজুক অবস্থায় অনেকটা ঝুঁকির মধ্যেই পাঠদান চলছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ধলরাহচন্দ্র ইউনিয়নের ১৩১ নং নন্দীরগাঁতী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭২ সালে উপজেলার ৮নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের নন্দিরগাতী গ্রামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে এলজিইডি ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ১ তলা ভবন নির্মাণ করে। বর্তমানে জরাজীর্ণ ভবনে প্রায় ১ যুগ ধরে শিক্ষকরা ঝুঁকি নিয়ে চালাচ্ছেন পাঠদান কার্যক্রম। দিন দিন ঝুঁকি আরও বাড়ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। বিদ্যালয়ের ভবনের এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। জরাজীর্ণ ভবনের কারণে অভিভাবকরা অন্যত্র ভর্তি করছে তাদের ছেলে-মেয়েদের। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৫ জন। বিদ্যালয়টিতে ৬ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও সেখানে কর্মরত আছেন ৪ জন। ফলে শিক্ষক স্বল্পতার কারণেও পাঠদান ব্যহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রতিটি পিলার, কক্ষের ছাদ ও বিমের পলেস্তারা খসে পড়েছে। জং ধরা রডগুলো বের হয়ে আছে। অনেক স্থানে দেয়ালে ফাটল ধরেছে। শ্রেণিকক্ষের মধ্যে ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গায়ে পড়ছে। বিদ্যালয় ভবনের এমন পরিস্থিতিতে চরমভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক মাস ধরে স্কুলের পাশেই মন্দির প্রাঙ্গণে টিনশেডে পাঠদান করানো হচ্ছে। এতে করে যেমন শঙ্কায় দিন পার করছে শিক্ষার্থীরা, তেমনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শৌভিক, খাদিজা ও অর্থিসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, জরাজীর্ণ ভবণে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লেখাপড়া করছি। অনেক সময় বাড়ি থেকে বাবা-মায়েরা স্কুলে আসতে নিষেধ করে। তারপরও এমন শঙ্কার ভিতরে ক্লাস করছে তারা। তারা আরো জানায়, স্কুলের এমন জরাজীর্ণতার কারণে কক্ষ ছেড়ে পাশেই অবস্থিত মন্দির প্রাঙ্গণের টিনশেডের নোংরা জায়গায় ক্লাস করছেন, তাতে করে যেমন পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি রাস্তার পাশে হওয়ায় শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়িত। দ্রুতই তারা নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি মেনোকা রাণী বিশ্বাস জানান, দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের ভবনটি ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। তাই আমরা দ্রুতই নতুন ভবন নির্মাণের দাবী জানাচ্ছি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো: তাজউদ্দিন মোল্লা জানান, প্রতিষ্ঠার পর একটি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ের অবস্থা নাজুক। যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা কোনরকম পাঠদান কার্যত্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ৪ কক্ষের ২টি কক্ষ বর্তমানে পরিত্যাক্ত, একটি অফিস রুম, আর বাকী একটিতে কোনরকমভাবে পাঠদান করানো হচ্ছে, তাও ঝুঁকির ভিতের। নিরুপায় হয়ে পাশেই হিন্দুদের মন্দিরে নোংরা একটি টিনশেডে ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছি। শীতকালে অনেক সমস্যা হয়েছে, এখন তো আবার গরমে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। অনেকবার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ভবন নির্মানের জন্য লিখিত ও মৌখিকভাবে জানালেও কোন লাভ হয়নি। দ্রুত বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ না করলে শিক্ষাথী সংকট ও নানাবীধ সমস্যা সৃষ্টি হবে। এমনকি ভবন ধসে প্রাণহানীও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। এ বিষয়ে ধলরাহচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ^াস জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অবগত আছি। দ্রুতই যাতে নতুন ভবন নিমার্ণ হয়, সে ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের সাথে কথা বলেছি, আশা রাখি দ্রুতই সমাধান হবে। শৈলকুপা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসরাইল হোসেন বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণের তালিকায় আছে। টেন্ডার হলে ভবনটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে।