স্টাফ রিপোর্টার
শিল্প শহর নওয়াপাড়া নদীবন্দর এলাকার বিভিন্ন ঘাটে প্রতিদিন চলছে তাস খেলার নামে জমজমাট জুয়ার আসর। নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরছে নিম্ন আয়ের মানুষ। নিরব ঘাট মালিক ও ঘাট সর্দারদের নেই কোন পদক্ষেপ।
জুয়াখেলা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভূক্তভোগী পরিবার। জানা গেছে, রাজঘাট থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত নওয়াপাড়া নদীবন্দর এলাকায় রয়েছে কয়েকশত ঘাট।
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে বিভিন্ন পণ্যবাহী জাহাজ এসব ঘাটে অবস্থান করে। এছাড়াও প্রতিটি ঘাটে রয়েছে বড় বড় গুদাম। জাহাজ ও গুদাম থেকে পণ্য লোড-আনলোড করার কাজ করেন হাজার হাজার শ্রমিক। একজন ঘাট সর্দারের নের্তৃত্বে একটি ঘাটে ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কাজ শেষে রাতে শ্রমিকদের মাঝে লোড-আনলোডের মজুরির টাকা দেওয়া হয়।
প্রতিদিন একজন শ্রমিক পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা উপার্জন করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ঘাট শ্রমিক জানান, লোড-আনলোডের ফাঁকে ঘাটের কোন এক নিরাপদ স্থানে জুয়ার আসর বসানো হয়। আসরে ১০ থেকে ২০ জন্য পর্যন্ত সদস্য অংশগ্রহণ করে। টাকার বিনিময়ে তিন কার্ড খেলা হয় বেশি। শুক্রবার বা যেকোন বন্ধের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে জুয়ার আসর।
জুয়ার আসর যেখানে বসে সেখান থেকে পুলিশের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। ঘাট মালিক বা ঘাট সর্দার জুয়া খেলা বন্ধে কোন ভুমিকা আছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তারা জানায়, অনেক ঘাট মালিক ও ঘাট সর্দার আছেন যারা জুয়াখেলায় অংশ নেন। আবার অনেকে নিষেধ করেন।
কিছুকিছু ঘাট মালিক জুয়াতো দুরের কথা ঘাটে তাস খেলতেও দেয় না। নওয়াপাড়া গ্লোব ও এশিয়া ঘাটের মাঝামাঝি স্থানে চলা জুয়ার আসরের এক খেলোয়াড় বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিন জুয়ার আসর বসে। ঘাট শ্রমিক, ভ্যান চালক, দোকান শ্রমিকসহ বিভিন্ন নিম্ন আয়ের মানুষ এ আসরে খেলা করেন। গত দুইদিনে কয়েক হাজার টাকা জিতেছি। গতকাল পাঁচ হাজার টাকা হেরেছি। রাজঘাট থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ঘাটে জুয়ার আসর বসে। যেখানে আমাদের মত অসংখ্য শ্রমিক খেলা করে।
কেউ জেতে, কেউ নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। নওয়াপাড়া রেলবস্তির রহিমা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার স্বামী একজন ঘাট শ্রমিক। জুয়ার নেশায় গত দুই দিন সে বাজার করেনি। অন্যের বাসায় কাজ করে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে অধিকাংশ সময় অনাহারে থাকতে হয়। ঘাট এলাকায় জুয়াখেলা বন্ধ হলে শ্রমিক পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে। রহিমার মত অসংখ্য গৃহিনীর দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ ঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে জুয়ার আসর বন্ধ করবেন। এর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।
অভয়নগর নওয়াপাড়া পৌর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মন্ডল জানান, হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের কোন সদস্য ঘাট এলাকায় জুয়াখেলার সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ঘাট মালিক জানান, বার বার নিষেধ করার পরও শ্রমিকরা এহেন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাস খেলা বন্ধ করতে বললে তারা ঘাটে কাজ বন্ধের হুমকি দেয়।
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম শামীম হাসান বলেন, আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।