মনিরামপুরে শিক্ষিকা বরখাস্ত : ইউএনও অফিসের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

0
143


হারুন অর রশীদ, মনিরামপুর (যশোর)
মনিরামপুরে শ্লীলতাহানির শিকার সেই শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি। উপজেলার দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এঘটনাটি ঘটেছে। মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ এক জরুরী বৈঠক শেষে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। শিক্ষিকার বরখাস্তের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক মহল। গতকাল বুধবার বিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের সামনে বিক্ষোভ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবী ও শ্লীলতাহানির শিকার ওই শিক্ষিকার বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন পলাশ শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করলে তারা বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে নেয়। বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষর্থী মেহেদী হাসান, মুরাদ হোসেন, সজীব হোসেন, তামিম, অনিক, আবু সাঈদ, অষ্টম শ্রেণীর আল-আমীন, শাহরুক জামান সহ শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানান, অপরাধ করলেন প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায় শাস্তি দেওয়া হল শ্লীলতাহানীর শিকার শিক্ষিকাকে? আমরা এ অন্যায় বিচার মানিনা। অপরাধী প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জনের বিচারের দাবী করে ওই শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের ম্যাডামের সাময়িক বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, মঙ্গলবার বিদ্যালয় চলাকালীন সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়। এক পর্যায় তড়িঘড়ি করেই পরিচালনা পর্ষদের সদ্যরাসহ অন্যরা বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জনের সাথে কথা বলতে তার মুঠোফেনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। তবে, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আনিছুর রহমান তজু শিক্ষিকার সাময়িক বরখাস্তের বিষয় এবং শিক্ষার্থীরা উপজেলা প্রশাসনের নিকট আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তার কিছু অনিয়মের জন্য। সম্প্রতি অনাকাংঙ্খিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদ কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এদিকে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় শিক্ষিকা জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায় তাকে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। যে বিষয়টি বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করা সত্ত্বেও কোন প্রতিকার হয়নি। এক পর্যায় ওই প্রধান শিক্ষকের কু-দৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে গত ১৪ নভেম্বর মহা-পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু আজ অবধি আমার অভিযোগের বিষয়টি কেউ খতিয়ে দেখেনি। এক পর্যায় ১১ ডিসেম্বর দুপুরে প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে আমাকে একা পেয়ে গায়ের ওড়না ধরে টানাটানি করে। যে ঘটনাকে সামাল দিতেই তাকে জুতা পেটা করা হয়। এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলেও প্রধান শিক্ষকের হীন এ কর্মকান্ডের বিচার না করে আমার বিরুদ্ধে খোঁড়া অভিযোগ তুলে ১৩ ডিসেম্বর আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যেটা পক্ষপাতিত্ব ছাড়া কিছুই না। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার সাময়িক বরখাস্তের বিষয় বলেন, মৌখিকভাবে বিষয়টি শুনেছি। তবে, আমার দপ্তরে কোন কাগজ-পত্র আসেনি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবির হোসেন পলাশ সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষিকার সাময়িক বরখাস্তাদেশ প্রত্যহারের বিষয়টি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের এখতিয়ারের মধ্যে। আমি শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছি বিদ্যলয়ের শিক্ষার পরিবেশে কোন সমস্যা হলে তা লিখিত আকারে জানালে সেটা দেখা হবে। উল্লেখ্য, মনিরামপুর উপজেলার দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায়কে গত ১১ ডিসেম্বর তার অফিস কক্ষে সহকারী এক শিক্ষিকা জুতাপেটা করে। অভিযোগ করা হয় ওই শিক্ষিকা ঘটনার সময় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গেলে নীহার রঞ্জন রায় শিক্ষিকার গায়ের ওড়না ধরে টানাটানি করে। এ ঘটনার পর বিদ্যালয়সহ ওই এলাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তাছাড়া, বিষয়টি জাতীয় ও আঞ্চলিক একাধিক দৈনিকে শিরনাম হয়েছে।

Comment using Facebook