মফিজুর রহমান দপ্তরী
ভবদহ অঞ্চল দীর্ঘদিন যাবৎ জলাবদ্ধ রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের কৃষকদের প্রধান ফসল বোরো চাষ হচ্ছেনা। নিজস্ব অর্থায়নে গ্রামে গ্রামে চাঁদা তুলে ছোট ছোট বিল ঘের দিয়ে পানির পাম্প দ্বারা সেচ দিয়ে কোন রকম বোরো আবাদ করার জন্য সর্বস্বদিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল এই এলাকার কৃষকেরা।
কিন্তু হঠাৎ গত দুই দিনের বৃষ্টিতে আবারও সেচকৃত বিলগুলি জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়েছে। ফলে আর কোন আশা দেখা যাচ্ছেনা প্রধান ফলস এই বোরো আবাদ চাষের। যে কারণে এবার সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে কৃষকেরা। এযেন তাদের মৃত্যুর কফিনে শেষ পেরেক ঠোঁকা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বোরো আবাদ না হলে আমাদের সাথে আমাদের গবাদি পশুও না খেয়ে মারা যাবে। এখনই এক কাউন বিছালী ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর নিজেদের পেটে খাবার না থাকলে গবাদি পশুর কথা ভাববারও সময় থাকবেনা। তাছাড়া চাষাবাদ না করতে পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মারা যেতে হবে।
তাদের একাটায় দাবি, সরকার আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য যে বরাদ্দ দিয়েছে তার বাস্তবায়ন কেন এত দেরি হচ্ছে। এদিকে আমরা পানিতে ডুবে মরে যাচ্ছি, জমিগুলি অনাবাদি পড়ে আছে, আমাদের পরনের কাপড়, পেটের খাবার জোগাড় করার কোন রাস্তা নেই, আর সরকার কিসের অপেক্ষায় খাল সংস্কারে দেবি করছে। অতিদ্রুত বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে আমডাঙ্গা খাল সংস্কার করে দিতে হবে, তাহলে এই সব বিলের পানি গিয়ে ভৈরব নদে পড়বে। আর আমরা প্রাণে বেচে যেতে পারব। তা নাহলে যে পরিমাণ পানি রয়েছে এর পরে যদি আগামী বৃষ্টি মৌসুমের পানি যোগ হয় তাহলে গতবার যাদের বাড়িতে পানি ওঠেনি তাদের বাড়িতেও পানি উঠবে। ওই সকল গ্রামগুলি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। সেখানে শুধু থাকবে পানি আর পানি- এসব কথাগুলি বলছিলেন ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধ মানুষ।
তাদের দাবি- পানি সরাও, আমাদের বাঁচাও। আমডাঙ্গা খাল সংস্কার বাস্তবায়ন কর, জমিতে চাষ করার সুযোগ দাও। এমনই নানা দাবির মুখে গতকাল সোমবার বিকালে নওয়াপাড়া ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন আন্দোলন কমিটি মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়। ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন আন্দোলন কমিটির আহবায়ক ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ্ব এনামুল হক বাবুলের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান সরদার অলিয়ার রহমান, আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এড. কামরুজ্জামান, সদস্য সচিব ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিষ্ণুপদ দত্ত, চলিশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান, সুন্দলী ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল, আমডাঙ্গা খাল সংস্কার কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রউফ মোল্যা, সদস্য ও দৈনিক নওয়াপাড়ার নির্বাহী সম্পাদক মফিজুর রহমান দপ্তরী, আন্দোলন কমিটির নেতা রুহুল আমিন, আক্তারুজ্জামান তরফদার, মোতালেব ফারাজী, আজিজুর রহমান, খায়রুজ্জামান, কামরুল হাসান, শাহীন আহমেদ প্রমুখ। দ্রুত সময়ের মধ্যে উল্লেখিত দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারী প্রদান করে বক্তারা বলেন, ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে ভবদহ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ।
অবিলম্বে জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে একনেকে পাশ হওয়া আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের দ্রুত বাস্তবায়নসহ একাধিক দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভবদহ ২১ ভেন্ট স্লুইচ গেটের কপাট জোয়ার-ভাটার সময় সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
জলাবদ্ধতা অপসারনের জন্য পাউবো কর্তৃক পাম্পের পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। খাল ও বিল হতে অবৈধ নেট-পাটা, কচুরীপানা অপসারণ করতে হবে। আগামী বর্ষা মৌসুমের পূর্বে উল্লেখিত দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে ভবদহ অঞ্চলে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও জানান তারা।